ওঠ্ ছেরি তর বিয়া…

নেত্রকোনা থেকে খাদিজা আক্তার লিটা

“ওঠ ছেরি তর বিয়ে” বাড়ির পাশে খোলা মাঠে সম বয়সীদের সাথে খেলা শেষে বাড়িতে এসে এমনি এক সিদ্ধান্তের মুখোমুখী হয়েছিলেন নেত্রকোনা জেলার সদর উপজেলার মইনপুর গ্রামের কিশোরী সেলিনা বেগম। কিশোরী বয়সে বাল্য বিবাহের কারণে তার জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। এক বিকেলে তার জীবনের এই করুণ গল্প করতে গিয়েই কথাগুলো বলছিলেন তিনি।

সেলিনা বেগম বলেন, “আমি যখন স্কুল আর খেলা নিয়ে সময় কাটাতাম সেই সময় হঠাৎ মাত্র ১১ বছর বয়সে আমার বিয়ে হয়ে যায়। প্রথমে মনে হয়েছিল এতো ভালো হয়েছে, বিয়ে মানেই একটি আনন্দের বিষয়। কিন্তু বিয়ের পর যখন আমার সমস্ত স্বাধীনতার পায়ে শিকল পড়ানো হলো, আমার ঘরের বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ হল, রান্না কাজ থেকে বাড়ির ভিতরে ও বাইরে সকল কাজ আমার উপর এসে পড়ল, সেই সাথে সকলের মন রেখে চলা, বাড়ির শিশু থেকে প্রবীণ সকলের সেবা করা ইত্যাদি আমাকে অসহায় করে তুলেছিল।” তিনি আরও বলেন, “আমার আরেক জীবন শুরু হলো যখন মাত্র ১৩ বছর বয়সে মা হলাম। মনে হলো জীবন বুঝি শেষ। বাচ্চার যতœ ভালোভাবে করতে পারিনা, আমার শরীর এখন সব সময় অসুখ লেগে থাকে আর ভালো লাগে না এ জীবন। খুব কষ্ট পাই যখন আমার সম বয়সী মেয়েরা বই হাতে স্কুলে যায়। খুব ফিরে যেতে ইচ্ছে করে সেই জীবনে”। 20161021_113120

কথাগুলো বলতে বলতে কাঁদছিল কিশোরী সেলিনা যার কান্না উপস্থিত অনেক কিশোরী ও অভিভাবকদের চোখে পানি এনে দেয়। সেলিনা আরও বলেন, “আমার স্কুল জীবন, আমার খেলা সময়কে মনে করি যখন খুব কষ্ট পাই। আর ভাবি যদি ফিরে যাওয়া যেত সেই সব দিনগুলোতে। আমার মা বাবার একটি সিদ্ধান্ত আজ কয়েকটি জীবনকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতে দিকে ঠেলে দিয়েছে। এখন আমি ভালো থাকিনা, তাই আমার সন্তান ভালো থাকে না, আমার কাজে আমার শাশুড়ি খুশি হয় না, আমার স্বামীও আগের মত ভালো পায় না।” সেলিনা উপস্থিত সকল অভিভাবকদের বলেন, “আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি,সমাজ ও অর্থনৈতিক যে সমস্যাই আসুক না কেন আপনারা আপনাদের সন্তানদের এ যন্ত্রণাময় জীবনে ঠেলে দিবেন না”।

20161021_113311
নাগরিক জীবনের বিরূপ প্রভাবে বদলে গেছে গ্রামের চিত্র। তার প্রধান কারণ দূর, দূরান্ত থেকে বিভিন্ন পেশার মানুষ ও অনেক পরিবার এসে গ্রামে নতুন নতুন বাড়ি করছে। ফলে গ্রামের স্বাভাবিক সংস্কৃতি চর্চাকে পাল্টে দিয়ে নতুন প্রজন্মকে বিপথগামী করে তুলছে। এক সময় গ্রামের যুবকরা মেতে থাকত বিভিন্ন জারি গান, নাটক, যাত্রা ইত্যাদি নিয়ে যারা এখন মোবাইল হাতে ঘুরে বেড়াই সময় পেলে মোবাইল শিক্ষণীয় বিষয়গুলো গ্রহণ না করে অসামাজিক বিষয় নিয়ে তারা মেতে থাকে। ইভটিজিংসহ নানান সামাজিক ব্যধি তৈরি হয় তরুণ ও যুবকদের মধ্যে। কিশোরদের এ ভুল পথের শিকার হচ্ছে গ্রামের কিশোরীরা। কারণ ইভটিজিংয়ের কারণে গ্রামের  বেশির ভাগ অভিভাবক তাদের ছোট কিশোরীদের খেলার বয়সে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে যা তাদেরকে জীবন মূত্যুর মুখোমুখী ফেলে দিচ্ছে।

happy wheels 2