কচুরিপানা ফুল… যেন শুভ্র আলোয় জ্বলছে অযুত-নিযুত তারা
মানিকগঞ্জ থেকে আব্দুর রাজ্জাক:
বেড়েই চলেছে ইট পাথরের দালান-কোঠা ও শিল্প কারখানা। হারিয়ে যাচ্ছে প্রাণ ও বৈচিত্র্যের অপরূপ সৌন্দর্য্য। যদিও কচুরী পানা নালা-নর্দমায় জন্মে তবুও সে তার সৌন্দর্য্য দিয়ে জয় করে হৃদয়। জলাশয়ে দেখা মিলছে হাজারো কচুরিপানা ফুলের। যেন শুভ্র আলোয় জ্বলছে অযুত-নিযুত তারা। সব বয়সী মানুষেরই মনটা ভরে ওঠে আনন্দে।
মানিকগঞ্জের ছোট বড় খাল-বিল, প্রায় শুকিয়ে যাওয়া নদ-নদী এমনকি ডোবার জলে এখন ফুটেছে দৃষ্টিনন্দন কচুরিপানা ফুল। জলাশয়ে যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে এই পানা ফুল। কচুরিপানা ও এর ফুল জনপ্রিয় না হলেও বিভিন্ন সময়ে মাছ, গবাদিপশুর খাদ্য ও জৈব সার হিসেবে এর ব্যবহার হয়ে থাকে। কৃষকেরা আলু, পটলসহ বিভিন্ন সবজি চাষে কচুরিপানার সার ব্যবহার করে থাকেন। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা জলাশয় থেকে কচুরিপানার ফুল উঠিয়ে খেলা করে। শখের বশে মেয়েরা খোপায়ও বাঁধে।
বাংলাদেশে কচুরিপানার সাতটি প্রজাতি আছে। এর পুরু চকচকে এবং ডিম্বাকৃতির পাতা পানির উপরি ভাগে প্রায় এক মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। কান্ড দীর্ঘ এবং বহু বিভক্তি মূল রয়েছে। যার রঙ বেগুনি, সাদা, গোলাপি ও হলুদ। একটি পুষ্প থেকে ৯ থেকে ১৫টি আকর্ষণীয় পাপড়ির ফুলের থোকা বের হয়।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত মারফত জানা যায়, অর্কিড সাদৃশ্য ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে স্কনক নামের এক ব্রাজিলিয়ান পর্যটক ১৮শ’ শতাব্দীতে বাংলায় নিয়ে আসেন কচুরিপানা। এরপর থেকেই বাংলার প্রায় প্রতিটি জলাশয়ে ভরে উঠে কচুরিপানাতে। পরবর্তী সময় কচুরিপানার কারণে নৌকা চলাচল, পাট, ধান চাষে অযোগ্য হয়ে পড়ে খাল বিল। এজন্য ১৯৩৬ সালে কচুরিপানা আইন জারি করা হয়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও ব্যক্তি উদ্যোগে কচুরিপানা পরিষ্কার করা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়।
কচুরিপানার আগ্রাসী চরিত্র থাকলেও এর নানা ব্যবহারের দিক আবিষ্কার করেছেন এই বাংলার মানুষ। কৃষি কাজ থেকে গৃহ নির্মাণ পর্যন্ত নানা কাজে ব্যবহৃত হয় কচুরিপানা। ঘিওর উপজেলার রাধাকান্তপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. মুন্নাফ মিয়া বলেন, “অতীতে মানুষ বাড়ির ছাদ নির্মাণের পর ছাদের চারদিক কাদা দিয়ে বাঁধ দিতো। সেই বাঁধে পানি দেয়ার পর কচুরিপানা বিছিয়ে রাখা হতো। এতে পানি রোদে বাষ্প হয়ে উড়ে যেতে পারতো না। তাছাড়া কচুরিপানা পঁচিয়ে জৈবসার হিসেবে জমিতে ব্যবহার করা হতো।”
উন্নয়ন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক’র মানিকগঞ্জের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায় বলেন, “জলাশয় থেকে কৃষকেরা কচুরিপানা উঠিয়ে জমিতে ফলানো আলু, পটলসহ বিভিন্ন সবজি চাষে ব্যবহার করছেন। এছাড়াও কচুরিপানা থেকে এখন তৈরি হচ্ছে উন্নত মানের জৈব সার। ফলে কৃষক ফসল উৎপাদনে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এছাড়া মাটির শক্তি যোগাতে ভূমিকা রাখছে কচুরিপানা।”