সামগ্রিক উন্নয়নে সংগঠন ভালো ভূমিকা রাখতে পারে
শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে বিশ্বজিৎ মন্ডল
‘আমরা উপকূলীয় এলাকার মানুষ প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে মোকাবেলা করে টিকে আছি। এখানে বছরের বারবার নানান ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘুরে ফিরে এসে হাজির হচ্ছে। এ দুর্যোগের সময আমরা সংগঠিতভাবে নানান ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। গত ৩ বছরের কথা যদি আমরা দেখি যে ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত অনেক বড় বড় দুর্যোগ হয়ে গেছে যেমন ফনি, বুলবুল, আমফান, ইয়াশ ও অতিবৃষ্টিতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা এবং আর তার সাথে ছিলো মহামারী করোনা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর এ করোনা একাকার হযে আমাদের জীবন ব্যবস্থার উপর দারুণ প্রভাব ফেলেছে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি যে ক্ষতি হয়েছে তা কিন্তু আমাদের কৃষকদের। কৃষকেরা না পেরেছে ভালোভাবে ফসল ফলাতে, না পেয়েছে ফসলের ন্যায্য মূল্য। জমিতে বারবার ফসল ফলানোর চেষ্টা করেছে আর ব্যর্থ হয়েছে এ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কাছে। তারপরও কিন্তু কৃষকেরা বসে ছিলো না। তারা তাদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও করোনাকালীন সময়ে কিন্তু মানুষকে আরো বেশি করে সংগঠিত করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। কারণ এই সময়ে খাদ্যের সমস্যা, কাজের সমস্যা, বীজের সমস্যা, অর্থের সমস্যা, ভালো যোগাযোগের সমস্যা, জলাবদ্ধতার সমস্যা এরকম নানান সমস্যা এসে হাজীর হয়েছিলো। তা কিন্তু আমরা সংগঠিত বা সংগঠন থাকার ফলে অনেকটা সমাধান করতে পেরেছি। তাই দুর্যোগের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সংগঠনের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।’
উপরোক্ত কথাগুলো বলেছেন কৈখালী আইপিএম কৃষি ক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। গত ২৪ সেপ্টেম্বর বারসিক’র সহায়তায় উপজেলা জনসংগঠন সমন্বয় কেন্দ্রে উপকূলীয় এলাকায দীর্ঘদিন ধরে সংগঠিত সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে সংগঠন ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কর্মশালায় মূল আলোচক হিসাবে তিনি এ কথাগুলো তুলে ধরেন।
কর্মশালায় হায়বাতপুর সেবা কৃষক সংগঠন, চন্ডিপুর কৃষক সংগঠন, দাদপুর কৃষক সংগঠন, বাদঘাটা আইসিএম কৃষি ক্লাব, বাদঘাটা পরিবেশবান্ধব কৃষি ক্লাব, ইসমাইলপুর কৃষক সংগঠন, জয়নগর কৃষি নারী সংগঠন, ধুমঘাট শাপলা নারী উন্নযন সংগঠন, জেলে খালী আইপিএম কৃষি ক্লাব, বুড়িগোয়ালিনী আশ্রয়ন প্রকল্প, পানখালী আশ্রয়ন প্রকল্প, সুন্দরবন স্টুডেন্ট সলিডারিটি টি, উপজেলা জনসংগঠন সমন্বয় কমিটির সদস্য ও বারসিক কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
কর্মশালায় বারসিক কর্মকর্তা বিশ^জিৎ মন্ডলের সঞ্চালনায় এবং উপজেলা জনসংগঠন সমন্বয কমিটির সভাপতি শেখ সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে জনসংগঠন ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন মূল আলোচক কৃষক নেতা হাবিবুর রহমান। সংগঠন কি, কেন দরকার সংগঠন, সংগঠন তৈরিতে কি কি সুবিধা, সংগঠন ভালোভাবে চলার জন্য যা দরকার, সংগঠনে কি কি তথ্য থাকা দরকার, গঠনতন্ত্র ও নিয়মনীতি কিভাবে তৈরি করতে হয়, কি কারণে সংগঠন ভেঙে যায়, সংগঠনের নিবন্ধন পাওযার জন্য কি করণীয় ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘সংগঠন তৈরি করা সহজ কিন্তু তা টিকিয়ে রাখা কঠিন। তাই সংগঠনের যারা নেতৃত্ব দিবেন তাদেরকে নির্বাচন করতে হবে ভালোভাবে। সংগঠনামনা মানুষদের প্রাধান্য দিতে হবে এবং বিভিন্ন সময়ে তাদের উৎসাহ উদ্দীপনা দিতে হবে। সঞ্চয় রাখতে হবে সদস্যদের মাঝে। নিয়মিত আলোচনা সভার আয়োজন করতে হবে। সংগঠনের সুর্নিদিষ্ট লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা রাখতে হবে। নিজেদের মধ্যে ভূল বোঝাবুঝি হলে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।’
তার পূর্বে কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী সংগঠনগুলোতে তারা কি কি কাজ করছে এবং তাদের এ কার্যক্রম বাস্তবায়ণের ক্ষেত্রে কি ধরনের বাধা বা সমস্যা হচ্ছে তা জানার চেষ্টা করা হয়।
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা জানান, ‘আজকের এ কর্মশালা আমাদের সংগঠিত হতে খুবই সহায়তা করেছে। আমরা আবার নতুন উদ্যমী সংগঠিত হয়ে নিজের ও এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যাবো।