ছাগল ভেড়ার সাথে দিন কাটে শেফালীর বেগমের
হরিরামপৃুর, মানিকগঞ্জ থেকে মুকতার হোসেন
হরিরামপুর পদ্মার চরে হরিহরদিয়া গ্রামে থাকেন করেন শেফালী বেগম। বয়স ৬০ এর কাছাকাছি। ১০ বছর আগে স্বামী হারান তিনি। তারপর থেকে ছেলেদের সাথে একান্ন সংসারে বাস করেন তিনি। কৃষি পরিবারে বিয়ের পর থেকে সাংসারিক কাজের পাশাপাশি গরু ছাগল, ভেড়া লালন পালন করতেন তিনি। তবে কষ্টে নয় আনন্দের সাথে তিনি ছাগল ভেড়া পালন করেন। ছাগল ভেড়া পালন করে শেফালী আয় করেন বছরে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। সকালে খাওয়া শেষ করে চকে ছাগল ভেড়া নিয়ে আসেন খাবার খাওয়ানোর জন্য। আর এই ছাগল ভেড়ার সাথে সারাদিন কেটে যায় শেফালী বেগমের। শেফালী বেগম বলেন, ‘আমার বাড়িতে ছাগল ভেড়া মিলে মোট ৫০টি ছিল। গত বছর ছেলেরা ১০টি ভেড়া এবং ৫টি ছাগল ৫৫০০০ হাজার টাকা বিক্রি করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ছাগল ভেড়া বিক্রি টাকা দিয়ে বাড়িতে একটা ঘর দিয়েছে এবং সংসারে কাজে ব্যয় করেছে। ছাগল ভেড়া পালন করে আমি অনেক আয় করি বলে আমাকে ছেলেরা অনেক ভালোবাসে। আমাকে কোন কষ্ট দেয় না। বর্তমান আমার খামারে ৩২টি ভেড়া এবং ১২টি ছাগল রয়েছে।’
হরিরামপরেুর লেছড়াগঞ্জ, সুতালড়ী, আজিমনগড় এই তিনটি ইউনিয়নে বিশেষ করে লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে পাটগ্রামচর, হালুয়াঘাটা, চর খরিয়া, হরিহরদিয়া, গঙ্গাধরদি, নটাখোলা, বালিয়াচক গ্রামে গড়ে উঠেছে শতাধিক ক্ষুদ্্র ক্ষুদ্র ছাগল ভেড়ার খামার। চরাঞ্চলে ভেড়া পালনকারী খামারী সাথে আলোচনাকালে তারা বলেন, ‘চরে ছাগল ভেড়া পালন করতে কেনা খাবার খাওয়াতে হয় না। চকে অনেক ঘাস রয়েছে যেমন নলখাগড়া, ছোন, ক্যাইশা, বাদলা, খরমা, গইচা, জলদুর্বা, দুর্বা, কাটা হেনসি ঘাস ইত্যাদি। এসব ঘাস খেয়ে পেট ভরে যায় ভেড়া ও ছাগলদের। ফলে চরে ছাগল ভেড়া পালনে লাভ বেশি হয়।’ তবে তারা আরও বলেন, ‘বর্ষাকালে আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র মাসে চকে পানি থাকার কারণে কিছু গম, পায়রা,কালাই ভুষি খাওয়াতে হয়। এছাড়া বিভিন্ন গাছের লতাপাতা খাওয়াতে হয় এসব প্রাণীগুলোকে। ছাগল ভেড়া পালনের সমস্যার কথা বলতে গিয়ে নটাখোলা গ্রামের কৃষক বাচ্চু মিয়া (৪৮) তিনি বলেন, ‘চরে পশু চিকিৎসক পাওয়া যায় না। অসুখ-বিসুখ হলে গ্রামের ঔষুধের দোকান থেকে ঔষুধ কিনে খাওয়াতে হয়। আর অনেকেই আবার গাছগাছড়া ছাল বাকলা দিয়ে ভেষজ উপায়ে চিকিৎসা করে থাকেন। শীতকালে বেশি রোগ ব্যাধির আক্রমণ হয় যেমন, ঠান্ডা, কাশি, পেটফুলা, পাতলা পায়খানা, জিমাই এসব রোগ দেখা দেয়। বেশি অসুস্থ হলে হরিরামপুর প্রাণী সম্পদ অফিসে এসব ভেড়া ও ছাগলগুলোকে নিয়ে আসা হয়। আবার এ সময় অনেকে কম দামে ভেড়া ও ছাগল বিক্রি করেন।’
ভেড়া একটি নিরীহ প্রাণী। এরা চারণ ভুমিতে ঘুরে ঘুরে ঘাস খেতে পছন্দ করে এবং দলগতভাবে ঘুরে বেড়ায়। গরুর সাথে একসাথে থেকে দল বেঁধে চলাচল করে। বৃষ্টির মধ্যে ভিজে ঘাস খায়। তবে বেশি তাপমাত্রায় হলে গাছের নিচে আশ্রয় নেয়। ভেড়া ১৫ মাসে ২ বার বাচ্চা দেয়। একটি ভেড়া ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বাচ্চা দেয়। তাই ভেড়া পালন করে কয়েক বছরের মধ্যে বেশি লাভবান হওয়ার সম্ভবনা থাকে। হরিরামপুর চরাঞ্চলে এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছাগল ভেড়ার খামার গড়ে তুলতে পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি ভূমিকা রাখছেন। ফলে তাদের আর্থিক ও পারিবারিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে নারীরা বিশেষ ভূমিকা রাখছেন। এতে করে পরিবারে বাড়ছে তাদের মূল্যায়ন।
বারসিক হরিরামপুর রিসোর্স সেন্টার, চরাঞ্চলের এসব ছাগল ভেড়া পালনকারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করে আসছে। তাছাড়াও উপজেলা সরকারি প্রাণী সম্পদ অফিসের সাথে যোগাযোগ তৈরি করে দেওয়ার মাধ্যমে যাতে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা, ভ্যাকসিন ও অন্যান্য ঔষধপত্র নিতে পারে। সরকারি সেবা সহায়তা পেলে খামারী ভবিষ্যতে আর লাভবান হতে পারবেন বলে চরাবাসী এই প্রত্যাশা করেন।