অচাষকৃত খাদ্য সঙ্কট মোকাবিলায় ভূমিকা রাখে
সত্যরঞ্জন সাহা, হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর চরাঞ্চালের পদ্মা নদীর তীর অবারিত সবুজ মাঠ। কোথাও কৃষক ফসল চাষ করছেন আবার কোথাও দেখা যায় অচাষকৃত খাদ্যের আধার। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পদ্মার নদীর পানিতে প্লাবিত হওয়ায় মাঠে পলি পড়ে। পলি মাটিতে জন্ম নেয় অচাষকৃত খাদ্য সম্ভার ও বিভিন্ন ধরনের ঘাস। চরাঞ্চলের ঘাসগুলো হলো নলখাগড়া, ক্যাইশা, কলমী, বাদলা, খরমা, দুৃর্ববা, জলদুর্ববা, হেনচি, গোইছা ইত্যাদি। এসব ঘাস প্রাণি সম্পদের সহজলভ্য খাবার। অচাষকৃত খাদ্য প্রকৃতিগতভাবে জন্ম নেয়। চরাঞ্চালের মানুষের খাবারের ও পুষ্টি পূরণেও ভূমিকা রাখে। আবার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীরা চরের অচাষকৃত খাদ্য বিশেষ করে কচু শাক, কচুর লতি, কলমি শাক ও জলাশয়ের শাপলা সংগ্রহ করেন। হরিরামপুরের বিভিন্ন বাজারে বিক্রয় করে থাকেন। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর এ উদ্যোগ নিরাপদ খাদ্য সরবরাহে সহায়ক হয়। অচাষকৃত খাদ্য গ্রামের নারীরা সংগ্রহ করেন জমির আইল, মাঠ ঘাট থেকে। সংগৃহীত অচাষকৃত খাদ্য রান্না করে খাবারের উপযোগী করেন। প্রকৃতিগতভাবে উৎপাদিত এসব শাকসবজি একদিকে যেমন খাদ্য নিরাপত্তা, দুর্যোগ মোকাবেলা ভূমিকা রাখে অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবেও সহায়ক হয়।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2021/07/222600172_539515597473140_2604759535320048815_n-768x1024.jpg)
অচাষকৃত উদ্ভিদ সংরক্ষক ও কৃষাণি আয়েশা বেগম বলেন, ‘আমি নিজে জমিতে কৃষি কাজ করি, বীজবৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে আবাদ করি। চর থেকে কচুর লতি, কচু শাক, কলমি শাক, বিল থেকে শাপলা সংগ্রহ করি। বাজারে বিক্রয় করে সংসার চালাই। বাজারে অচাষকৃত খাদ্যের চাহিদা বেশি। বর্তমানে মানুষ সার-বিষ ছাড়া অচাষকৃত খাদ্য খাইতে পছন্দ করে। কিন্তু চরে প্রচুর পরিমাণে অচাষকৃত খাদ্য পাওয়া যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘হরিরামপুর নিচু এলাকা হওয়ায় বর্ষার পানিতে বাড়ি ও মাঠে ঘাটে পানি আসে। ফলে চাষকৃত শাকসবজি নষ্ট হয়ে যায়। শাক সবজির আকাল হয়। তখন এই শাক সবজির চাহিদা বেশি। আমাদের মত মানুষদের জন্য অচাষকৃত খাদ্য খুবই উপকারে আসে। তবে স্থায়িত্বশীল কৃষি আবাদ বৈচিত্র্য রক্ষা হয়। অচাষকৃত খাদ্য সংরক্ষণে সহায়ক হবে। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে সহায়ক হয়। খাদ্যের ভিন্ন ধরন, সাধ, গুণমান ঠিক থাকে। কৃষকদের রকমারি ফসল আবাদ ও অচাষকৃত খাদ্য দুর্যোগ মোকাবেলায় সহায়ক হয়।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2021/07/222550806_581421872868399_8087870113904851646_n-1024x768.jpg)
অচাষকৃত উদ্ভিদ বিক্রেতা সুবোধ সরকার বলেন, ‘আমি সারা বছর কুড়িয়ে পাওয়া শাক সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রয় করি। কুড়িয়ে পাওয়া শাক বিক্রয় করেই আমার সংসার চলে। পরিবারে লোকজন কুড়িয়ে পাওয়া শাক তুলতে সহযোগিতা করেন। আমরা দাসকান্দি চর থেকে কলমি শাক তুলি। চরে এমনিতে কলমি, কচু, হেলঞ্চা, বইতা শাক পাওয়া যায়। তবে সহজে বিক্রয় করা যায় কলমি শাক। প্রতিদিন বাজারে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বিক্রয় করতে পারি। অচাষকৃত শাক সবজি বিক্রয় করি ও বাড়ির পাশে কিছু শাক সবজি আবাদ করি। তবে আবাদকৃত শাক সবজি কম হলেও অচাষকৃত শাক সবজি বেশি থাকায় সংসার ভালোভাবে চলে।’
পদ্মা নদীর তীর ও মাঠ-ঘাট নিচু হওয়ায় প্রতিবছর বর্ষায় মাঠে পলি পড়ে। পলিযুুক্ত উর্বর মাটিতে কৃষকগণ মাঠে-ঘাটে ফসল ফলায়। মাঠের দিকে তাকালে দেখা যায় ফসল বৈচিত্র্য। মাঠে ফসল পাকলে দেখা যায় হলুদ। সুন্দর এই দেশে কৃষকগণ মাঠে চাষ করে ধান, শাক-সবজি, মসলা, ডাল, তেল, ফল বৈচিত্র্য। প্রকৃতিগতভাবে মাঠে ঘাটে ভরে উঠে অচাষকৃত খাদ্য। অচাষকৃত খাদ্য মানুষসহ সকল প্রাণির খাদ্য ও পুষ্টি পুরনে সহায়ক হয়।