সাম্প্রতিক পোস্ট

অচাষকৃত খাদ্যের উৎসগুলো সুরক্ষা ও সংরক্ষণ করতে হবে

রাজশাহী অমৃত সরকার
রাজশাহীর তানোর উপজেলায় পিরসপুকর গ্রামে ৭জুন বিশ্ব নিরাপদ খাদ্য দিবস উপলক্ষে অচাষকৃত খাদ্য মেলা আয়োজনের মাধ্যমে ব্যাতিক্রমী এক উদ্যোগ নিয়েছেন গ্রামের ৫০ জন নারী। গ্রামীণ প্রান্তিক জনগোষ্ঠির নিরাপদ খাদ্য উৎসের বড় ভান্ডার হচ্ছে অচাষকৃত বিভিন্ন শাকসবজি। নারীরা বাড়ির আশেপাশে, পতিত জমি ও রাস্তার পাশে জন্মানো গীমা, গোলসানচি, বাঁশপাতারি, কলমি, হেলেঞ্চা, কালকাসঞ্চা, পটকা, ঝনঝনা, ডরপি, গাঁদাপুইয়া (সাদা), ধুসরী, গোল বনপাট, কাটখুড়া, গাঁদা পুইয়া লাল, বথুয়া, বারাল, বানবারাল, ডুমুর, খোকসা, খুদি পুদিনা, থানকুনি, তেলাকুচা, লইট্যা, লইট্যাখুড়া, চামকচু, সুনসুনি, লম্বা সানচি, নোনটা, আলাই কালাই, বন কচু, মৌলবি কচু,কান্টা কচু, শান্তিশাক, লাল কচু, হাতিশুড়, মিছরী দানা, আটকুটি, টুনাটুনিশাক, কলমি, ঝুনকি, চাকড়া, গাই খুড়া, চাপা শাকগুলো তুলে নিয়ে এসে প্রতিযোগিতার এই অচাষকৃত খাদ্য মেলায় অংশগ্রহ করেন। পিরনপুকুর নারী উন্নয়ন সংগঠন ও বাংলাদেশ রির্সোস সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ(বারসিক) যৌথভাবে এই মেলার আয়োজন করেন।


মেলায় অংশগ্রহণকারী নারীরা সবাই সকাল থেকে বাড়ির আশেপাশে জমির আইলে, পতিত জমিতে গিয়ে অচাষকৃত শাকসবজিগুলো সংগ্রহ করে নিয়ে এসে মেলায় উপস্থাপন করেন। পাশাপাশি একে অপরের সাথে সংগ্রহ করা শাক-সবজির গুনাগুন, কোন অংশ খেতে হয় তা নিয়ে আলাচনা করেন। এ বিষয়ে পিরনপুকুর নারী উন্নয়ন সংগঠনের সভাপতি মোসাঃ রেজিয়া (৪৪) বলেন, “এখানে যারা অংশগ্রহণ করেছে তারা সবাই শাক নিয়ে এসছে, সবাই সব শাক চিনে না। আমরা একে আপরের সাথে আলোচনা করছি। যাতে সবাই চিনতে পারি এবং আগামীতে সংগ্রহ করে খাওয়ার কাজে ব্যবহার করতে পারি।’


মেলায় ৩৯টি অচাষকৃত শাকসবজি উপস্থাপন করে মোছাঃ জাহানারা বেগম (৪৯) প্রথম স্থান অধিকার করেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “বৃষ্টি কমে যাওয়ার কারণে এ শাক আর তেমন জন্মায় না। আমরা অনেক দূর গিয়ে এ শাক তুলে নিয়ে আসি।’ ৩৫টি শাক নিয়ে ২য় হয়েছেন মোসাঃ মর্জিনা বেগম। তিনি এ বিষয়ে বলেন, “সকল ফসলের জমিতেই এখন ঘাস মারা বিষ দিয়ে রাখে। তাই আগের মতো আমরা এ ধরনের শাক পাই না।’ ৩০টি শাক উপস্থান করে মোসাঃ রাজিয়া খাতুন ৩য় স্থান অধিকার করেন।


মেলায় ৮ম শ্রেণীতে অধ্যায়ন করা বর্ষা খাতুন ১০টি শাক উপস্থাপন করে তার কাছে জানতে চাইলে সে বলে, “আমি খুব বেশি চিনতাম না বলে বেশি নিয়ে আসতে পারিনি। এখানে এসে আমি অনেক শাক চিনতে পারলাম।’
এ ধরনের মেলা আয়োজন বিষয়ে বারসিকে কর্মসূচি কর্মকর্তা অমৃত সরকার বলেন, “আগে দেখা যেত গ্রামের মানুষ সপ্তাহের ২-৩দিন অচাষকৃত শাক সংগ্রহ করে খাওয়ার কাজে ব্যবহার করত, এখন আর তেমন দেখা যায় না। নিরাপদ খাদ্যর বড় উৎস হচ্ছে অচাষকৃত শাক-সবজি। মাত্রাতিরিক্ত আগাছানাশক ব্যবহারের কারণে প্রান্তিক জনগোষ্টির অচাষকৃত খাদ্য উৎস্য নষ্ট হচ্ছে। আমরাও আগাছা নাশক নিষিদ্ধের দাবি জানাই।’
মেলা শেষে অংশগ্রহণকারী সবাইকে পুরষ্কার হিসেবে পরিবেশবান্ধব উপকরণ বাঁশের তৈরি কুলা ও ডালা দিয়ে পুরষ্কৃত করা হয়।

happy wheels 2

Comments