প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করি, পরিবেশ সুরক্ষা করি

উপকূল থেকে বাবলু জোয়ারদার

প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে সামিল হই সকলে” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে বিশ^ পরিবেশ দিবস পালিত হয়েছে। প্লাস্টিকের ভয়াবহতা তুলে ধরে আমাদের প্রতিবেশ পরিবেশ সুরক্ষায় সচেতনতা গড়ে তুলতে গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় শ্যামনগর প্রেস ক্লাব থেকে শুরু করে ডাক বাংলো মোড় হয়ে প্রধান-প্রধান সড়কে প্লাস্টিক বর্জনে প্রচার অভিযান চালানো হয়েছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক’র সহযোগিতায় এই প্রচার অভিযান আয়োজন করে কোষ্টাল ইয়ূথ নেটওয়ার্ক।

জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘূর্ণিঝড়,পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদীভাঙনের পাশাপাশি আজ বিশ^ প্লাস্টিক দূষণ ও প্লাস্টিকের জন্য ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি। অতিরিক্ত মাত্রায় প্লাস্টিক ব্যবহারের কারণে মানুষের স্বাস্থ্য যেমন মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে আছে সেই সাথে সকল প্রাণবৈচিত্র্যও ধংসের পথে। প্রচারাভিযানে বলা হয়, ‘এক সময় আমরা মাটির তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার করতাম কিন্তু র্বতমানে প্লাস্টিকের তৈরি বেশিমাত্রায় ব্যবহারের ফলে মাটির তৈরি জিনিসপত্র প্রায়ই হারিয়ে গেছে। প্লাস্টিক ব্যবহারের কারণে পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। আমাদের চারপাশে প্লাস্টিকের জন্য নদী-নালা, খাল-বিল তার নিজস্বতা হারিয়ে ফেলছে। বিশেষ করে আমাদের রক্ষাকবচ সুন্দরবনও আজ প্লাস্টিকের কারণে হুমকির মুখে।’


প্রচার অভিযানে বক্তারা বলেন, ‘প্রাকৃতিক বিপর্যয়, মানবসৃষ্টি নানা উন্নয়ন দূর্যোগ এবং জলবায়ু পরিবর্তনে নেতিবাচক প্রভাবের পাশাপাশি বিশ্ব আজ প্লাস্টিক দূষণ ও প্লাস্টিকের জন্য ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি। প্লাস্টিক দূষনের কারণে আজ প্রাণবৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে পাশাপাশি প্লাস্টিকের জন্য মানবস্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়ছে। প্লাস্টিক সামগ্র পৃথিবীকে গ্রাস করছে মনে হচ্ছে পৃথিবীতে যেনো প্লাস্টিকের রাজত্ব চলছে। এই প্লাস্টিকের জন্য পরিবেশবান্ধব উন্নয়নে বাধা হচ্ছে, চারিদিকে শুধু প্লাস্টিক আর প্লাস্টিক। প্লাস্টিকের কারণে নদী-নালা, খাল-বিল, সুন্দরবন এমনকি আমাদের এই সুন্দর পরিবেশকেও বিষাক্ত করে তুলছে।’


উল্লেখ্য, ইউনাইটেড নেশসন”স এর এক গবেষণায় জানা যায়, প্রায় ৯০ শতাংশ পাখি ও মাছের পাকস্থলি থেকে প্লাষ্টিকের কনা পাওয়া গেছে। এছাড়াও পৃথিবীতে প্রায় আটশত সামুদ্রিক প্রজাতির মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। মোট উৎপাদিত প্লাস্টিকের প্রায় ৩৬ শতাংশ প্যাকেজিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে খাদ্য এবং পানীয় পাত্রে একবার ব্যবহার্য্য প্লাস্টিক অন্তর্ভুক্ত, যার ৮৫ শতাংশ ভাগাড় বা বিপজ্জনক বর্জ্য হিসাবে শেষ হয়। গাড়ি এবং ইলেকট্রনিক্স থেকে শুরু করে চিকিৎসা ডিভাইস এবং শিশুদের খেলনা সব কিছুতেই প্লাস্টিক পাওয়া যায়। এই পণ্যগুলোতে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা প্রাণী ও উদ্ভিদের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাবিত করছে। ভোগ্যপণ্য শিল্পে ব্যবহৃত প্লাস্টিক প্রতিবছর আনুমানিক ৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আর্থিকভাবে পরিবেশের ক্ষতি করে।


প্লাস্টিক ১.৮ বিলিয়ন মেট্রিক টন গ্রিন হাউস গ্যাস উৎপন্ন করছে, যা বিশ্বব্যাপী মোটের ৩.৪ শতাংশ, যার ৯০ শতাংশ নির্গমন হয়েছে প্লাাস্টিক উৎপাদন এবং জীবাশ্ম জ্বালানির রূপান্তর থেকে। মানব শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশের কারণে লিভার, কিডনি নষ্ট, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ব্রেইন ড্যামেজ, এ্যাজমা এবং নারীদের বন্ধাত্বসহ মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। সকল প্রাণ ও পরিবেশের জন্য প্লাস্টিকের ব্যবহার দিন দিন যেন মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আমাদের উপকূলীয় সুন্দরবনকে প্লাস্টিক থেকে রক্ষা করা এখনই সময়।

আসুন সবাই মিলে করি পণ বন্ধ হবে প্লাস্টিক দূষণ এই স্লোগানকে সামনে রেখে আমরা নিজেদের উদ্দ্যেগে প্লাস্টিক বর্জন করি এবং অন্যদের বর্জন করতে পরামর্শ দিই এবং সচেতনতা বাড়াই। প্লাস্টিক দূষণ বন্ধ করে উপকূলকে দূষণের হাত থেকে মুক্ত করি।

happy wheels 2

Comments