সবুজ পৃথিবী গড়ার প্রত্যয়ে সবুজ সংহতি গঠন

মানিকগঞ্জ থেকে রাশেদা আক্তার

বারসিক’র উদ্যোগে মানিকগঞ্জের স্যাক কার্যালয় সবুজ সংহতি গঠন বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে সম্প্রতি। অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে মতবিনিয় সভায় মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার শিক্ষক, সমাজকর্মী, পরিবেশবাদী, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, কৃষক-কৃষাণী অংশগ্রহণ করেন।

আলোচনায় মানিকগঞ্জের ন্যাশনাল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট এর পরিচালক ড: মোহাম্মদ ফারুক হোসেন বলেন, “বারসিক চমৎকার একটি আয়োজন করেছে। কৃষি বাঁচলে, নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে। এখানে অনেকেই আছেন যারা পরিবেশ নিয়ে কাজ করেন। সবুজ নিয়ে কাজ করেন। আমি নিজে সবজি চাষ করি। আমি সবুজ চাই। নদী নষ্ট হচ্ছে, কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে। এর জন্য আমাদের প্রস্তুত হতে হবে। আগামী প্রজন্ম হুমকির মুখে আছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আমাদের এখানেও পড়ছে। সবাই মিলে সবুজ সংহতি ছড়িয়ে দেওয়া। গ্রামে গ্রামে গিয়ে কাজ করা সবাই মিলে সবুজের বিকল্প নাই। সবাই মিলে একসাথে কাজ করবো।”

পরিবেশবাদী এ্যাড: দীপক কুমার ঘোষ বলেন, “বারসিক নদী নিয়ে কাজ করে। পরিবেশ নিয়ে কাজ করে। বাল্যবিয়ে রোধে কাজ করে। নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করে। আজ সবুজ সংহতি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা এখানে যারা আছি প্রত্যেকেই পরিবেশ রক্ষায় কোনো না কোনোভাবে কাজ করছি। সবুজ সংহতি গঠনের মাধ্যমে সকলের সম্মিলিত শক্তিতে সবুজ পৃথিবী গড়া সহজ হবে। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি।

মাছরাঙা টিভির মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি গাজী ওয়াজেদ আলম লাবু বলেন, “বারসিক’র অনেক কাজেই যুক্ত থাকি। পরিবেশ, নদী রক্ষাসহ বারসিক বিভিন্ন ধরণের সচেতনতামূলক কাজ করে থাকে। পরিবেশ রক্ষা করতে হবে আমাদের প্রয়োজনেই। আজ বারসিক যে জলবায়ু পরিবর্তনের কথা বলছে তার জন্য দায়ী আমরাই। যদি এই গতি চলতে থাকে তাহলে ভবিষ্যতে কি হবে তা ভাবা কঠিন। সকলের সম্মিলিত শক্তিতেই এটি করা সম্ভব হবে।” অবঃ উপসহকারী কৃষিকর্মকর্তা জ্যোতিশ^র চন্দ্র সরকার বলেন, “এই কাজ বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের প্রত্যেকের বিবেককে জাগ্রত করতে হবে। আমাদের এরাকার ময়লা নেওয়ার জন্য ১ দিন পর পর পৌরসভার গাড়ি আসে কিন্তু অনেকেই দেখি ময়লা না দিয়ে পাশের ডোবায় ফেলে। এর ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। স্বভাব পরিবর্তন করতে হবে। স্থাপনা তৈরির কারনে আবাদী জমি কমে যাচ্ছে। এই আন্দোলন আমরা প্রত্যেকেই বাড়ি থেকে শুরু করতে চাই। নিজ নিজ এলাকায় প্রচার করতে হবে।”

সহকারী অধ্যাপক আনিসুর রহমান বলেন, “বর্তমান সময়ে পরিবেশ রক্ষা করা জরুরি হয়ে পড়ছে। পুকুর, খাল, পরিবেশ রক্ষার জন্য উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। শুধু গাছ লাগালেই হবে না। প্লাস্টিক বর্জন করতে হবে। প্লাস্টিক ধ্বংস হতে ৫০-১০০ বছর সময় লাগে। কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে। আগামী প্রজন্ম হুমকীর মুখে আছে। মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে কিনতু সুস্থ্যতা বাড়েনি। সবুজ সংহতির সাথে আছি, থাকবো। সব ধরণের সহযোগিতা করবো। যেখানে যেতে হয় যাব।” কমফোর্ট কনজ্যুমার কেয়ার এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আ: আলীমবলেন, “বারসিক’র এই উদ্যোগ ভালো উদ্যোগ। বারসিক পরিবেশসহ অনেক বিষয় নিয়ে কাজ করে। পরিবেশ রক্ষায় উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। আমরা অনেকেই অনেক কথা বলি কিন্তু কাজ করতে পারি না। আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে গাছ লাগাই, ডেংগুর সময় মশারী দিয়েছি। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। বারসিক যে কাজ করছে তার উদ্যোগের সাথে যদি আমরা থাকি তাহলে এর সফলতা আসবে। সবুজ সংহতির সাথে থাকবো।”

এছাড়া আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ করেন শিক্ষক মনিরুল হক, চাকুরিজীবী মো: লুৎফর রহমান, উদ্যোক্তা মাহমুদ আজাদ, শিক্ষক মো: ইদ্রিস আলী বিশ^াস, সমাজসেবক মো: ভুট্টু মিয়া, সাবেক ইউপি সদস্য মো: মনসুর আলী, কবি ও প্রাবন্ধিক মো: আনিসুর রহমান আলীনুর, সদস্য সবিচ ধলেশ^রী নদী বাঁচাও আন্দোলন আ: হামিদ চান্দু প্রমুখ।

আলোচনা শেষে সকলের অংশগ্রহণ ও মতামতের ভিত্তিতে গাজী ওয়াজেদ আলম লাবুকে আহবায়ক এবং ড: মোহাম্মদ ফারুক হোসেন কে যুগ্ম আহবায়ক করে ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা সবুজ সংহতি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠন শেষে অংশগ্রহণকারীরা সবুজ জ¦ালানী, জলবায়ু ন্যায্যতা, কৃষিপ্রতিবেশবিদ্য ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সবুজ সংহতির মাধ্যমে সকলে একসাথে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

এর আগে বারসিক’র আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল চন্দ্র রায়ের সঞ্চালনায় সভার শুরুতেই সবুজ সংহতি বিষয়ক ধারণাপত্র পাঠ করেন বারসিক’র প্রোগ্রাম অফিসার রাশেদা আক্তার। এরপর বারসিক এর আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল চন্দ্র রায় সবুজ জ¦ালানি, জলবায়ু ন্যায্যতা, কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা, খাদ্য সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। আলোচনা শেষে অংশগ্রহণকারীরা উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

happy wheels 2

Comments