তাল গাছ পরিবেশ রক্ষা করে

ঘিওর, মানিকগঞ্জ থেকে সুবীর কুমার সরকার
পরিবেশ উন্নয়নে তাল গাছ আগামী দিনের কৃষির পরমবন্ধু। জলবায়ু পরিবর্তনে ঘন ঘন বন্যা, জলোচ্ছ্বাস মোকাবেলায় তাল গাছ অবদান রাখতে পারে। এছাড়া পাখিদের নিরাপদ আবাসও গড়তে পারে তাল গাছে! তাল গাছ খরা সহনশীল গাছ। এ গাছ জল ছাড়া দীর্ঘদিন বাচঁতে পারে। তাছাড়া গাছের গোড়ায় দীর্ঘদিন জল জমলে ও সহজে মারা যায় না। তাল গাছের শিকড় মাটির বেশি গভীরে পৌছে না; তবে গুচ্ছ মূলগুলো চারদিকে সমানভাবে ছড়িয়ে মাটিকে শক্ত করে ধরে রাখে। গাছটি ভূমির ক্ষয়রোধ করে। তালের পাতার আগা সূচালো হওয়ার বজ্রপাত গাছ হিসেবে পরিচিত। দেশের ঝড় ও বজ্রপাত রোধে দেশের সব অঞ্চলে তাল গাছ রোপণ করা উচিত।


তাল গাছ আমাদের পরিচিত গাছ হলেও বেশ অবহেলিত। তাল এখনো পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছেনা। আমাদের দেশে তাল গাছ রাস্তার পাশে এমনকি জমির আইলের মধ্যে রোপণ করা সম্ভব। পরিবেশবান্ধব তাল গাছ পরিবেশের ভারসাম্য যেমন আনবে তেমনি কৃষি অর্থনীতিকে করবে বেগবান। ঘিওর উপজেলার কলতা গ্রামের মেঠো পথের ধারে বারসিকসহ স্থানীয় মানুষের উদ্যোগে বিগত বছরগুলোতে রোপিত সারিবদ্ধ তাল গাছগুলো পরিবেশ রক্ষায় দৃশ্যমান অবদান রাখছে। এলাকার মানুষ এখন তাল গাছ রোপণে বেশি উৎসাহিত হয়েছে।

ঘিওর উপজেলার উভাজনী গ্রামের মো. জবেদ আলী (৭০) বলেন, ‘বৈশাখ-চৈত্র মাসে তালের রস বিক্রি করি। তালের রসের চাহিদা অনেক। এই রসে গরমের ভিতর অনেক উপকার পাওয়া যায়। কৃষকরা জমিতে কাজ করে এসে তালের রস পান করে থাকেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি বারসিক’র সহযোগিতায় নালী গ্রামের আলোর পথের যুবকদের নিয়ে তালের বীজ রোপণ করছি। তালের বীজ রোপণ দেখে অনেক পরিবার নিজ বাড়িতে তাল বীজ রোপণের উদ্যোগ নিচ্ছে।’


সাধারণত আগস্ট মাস থেকে তাল পাকতে শুরু করে অক্টোবর মাস পযর্ন্ত বাজারে তাল পাওয়া যায়। তালের পিঠা, তালের বড়া ও তালের গোলা এই অঞ্চের মানুষের বেশ জনপ্রিয়। গরমের সময় তালের পাতা দিয়ে তৈরি পাখা মানুষের ঘরে ঘরে থাকে। এছাড়া সভ্যতার বিকাশে ও তালপাতা ভূমিকা রয়েছে। কাগজ আবিস্কারের আগে মানুষ তালপাতায় তাদের জীবনকাহিনী, ধর্মের বাণী লিখে রাখতেন।

happy wheels 2

Comments