![প্রাণবৈচিত্র্য বৃদ্ধি ঘটছে কি?](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2021/09/bimal-604x345.jpg)
প্রাণবৈচিত্র্য বৃদ্ধি ঘটছে কি?
মানিকগঞ্জ থেকে বিমল চন্দ্র রায়
গত কয়েকদিন আগে কালিগঙ্গা নদীর পাড়ে গিয়ে একটি স্থানে কয়েকটি শুশুক মাথা তুলে শ্বাস নিতে দেখা যায়। মুহুর্তে আবার জলের তলা চলে যাওয়া ছবি তুলতে পারা যায়নি। বাংলাদেশে বিপন্ন জলপ্রাণিদের মধ্যে শুশুক অন্যতম। বাংলাদেশ ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী স্বাদু জলের শুশুক প্রজাতিটি সংরক্ষিত। বাংলাদেশের পাবনা জেলায় একটি শুশুক অভয়ারণ্য আছে, যা ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
আমার গ্রামের ছোট খাল/নদীতে ছোট সময়ে ৩০-৩৫ বছর আগে দেখেছি যেখানে কুম পরে গভীর হতো এবং জেলেরা ঝাঁটা দিয়ে মাছ সংরক্ষণ করতো সেখানে কালো কোন কিছু শুড় তুলে ফুস করে একটি শব্দ হতো এবং মুহুর্তে তলিয়ে যেত। কুম হচ্ছে কোন নদী বা খালে বিশেষ স্থান জলধারার চাপে মাটিসমূহ সরে খালে স্বাভাবিক প্রশস্থতার ও গভীরতার চেয়ে বেশি কোন জলধারার স্থান। দেখতে বাঁকা গোল হাতির মতো একটি ঠোট এবং পাখনাযুক্ত লেজ একটি জলজ প্রাণি মাছ শিকার করতো এই পাখনা চ্যাপটা অনেকটা ডুবরীদের পায়ের পাখনার মতো। প্রতিদিন আমি দেখেছি। কারণ এই কুমের পাশেই আমাদের বাড়ি। দুপুর-বিকেল বেলায় বেশি দেখা যায়। কারণ মাছ ধরার জন্য তাদের জীবন সংগ্রাম এই সময়ে উপযুক্ত মনে হয়। তবে তাদের জীবন চক্রের শিকারের সময়কাল সম্পর্কে আমার কোন পড়াশুনা নেই, আছে কেবলমাত্র পর্যবেক্ষণ!
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2021/09/bimal.jpg)
এই জলজ প্রাণির নামটি শুশুক হিসেবে জানতাম। ভয় পেতাম যদি নাওয়ার (¯স্নান) এর সময় আমাদের কামড় দেয় এই চিন্তায়। এই নদী/খাল/কুমসমূহ পলি পড়ে ছোট খালে বা নালা পরিণত হয়ে পড়ায় শুশুকগুলো পরে দেখা যায়নি। কালিগংগা নদীর বিভিন্ন বাঁকে ২০/২২ বছর আগে বিশেষ করে বরুন্ডি ও বালিরট্যাক এলাকায় দুই নদীর সংযোগস্থলে আমি শুশুক দেখতে পেয়েছি। পরবর্তীতে পদ্মা নদীতে শুশুক দেখা গিয়েছে বা এখন দেখা যায় কোন কোন সময়। শুশুকসমূহ জেলেদের জালে ধরা পড়েছে এবং তথাকথিত কবিরাজদের কল্যাণে তা অপচিকিৎসার কাজে হত্যার শিকার হয়েছে। শুশুক নিয়ে মানুষের কোন ভাবান্তর ছিল না; ফলে নিরীহ এই জলজপ্রাণিটি বিপন্নতার দিকে যেতে বসেছে। প্রাণ ও প্রকৃতিকে রক্ষার দাবিতে নানান কার্যক্রম করার ফলে নিজের ভিতর কিছুটা প্রকৃতির প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া মিডিয়াসহ প্রকৃতিপ্রেমী কিছু নাগরিক ও মৎসজীবী জনগোষ্ঠীর মধ্যে সচেতনতায় বিপন্ন প্রজাতির শুশুক এখন সম্ভবতঃ পুনরায় ফিরে আসছে। কালিগংগা নদীর নয়াকান্দি গ্রামের নূরানিগঙ্গা উৎসমূখে শুশুক দেখতে পাওয়া যায়।
অন্যদিকে মানিকগঞ্জ জেলার কোথাও বানর বা হনুমান বসবাস করে বা করতো তার কোন ইতিহাস নেই। তবে মানিকগঞ্জ পাশে ধামরাই পৌর এলাকায় মাধববাড়িতে ও পুরান ঢাকায় বানর বা হনুমান বসবাস করে বাসাবাড়ির কার্নিসে বা ছাঁদে। এই তাদের বসবাস বংশপরম্পরায়। কবে থেকে বসবাস করে তা জানা নেই। গত ৪/৫ বছর যাবত মানিকগঞ্জ পৌর এলাকায় প্রথমে ২টি এখন ৩টি বানর বা হনুমান দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। বানর নিয়ে প্রায় প্রত্যেক নাগরিকের কৌতুহল আছে। কিভাবে বানর আসলো? কি খায়, কোথায় থাকে ইত্যাদি ইত্যাদি। ৩টি বানরের মধ্যে একটি বানন প্রতিবন্ধি! জানা যায়, কোন অর্বাচিন নাগরিক দা দিয়ে তাকে আঘাত করার ফলে হাতটি কেটে যায়। প্রায় প্রতিদিন আমার বাসার কাছে একটি একতলা বাড়ির ছাদে বিশ্রাম নিতে আসে এই বানরগুলো। সকাল বেলায় ৩/৪ ঘণ্টা থেকে অন্য কোন স্থানে চলে যায়। এই বানরগুলো আসার বিষয়ে নানান জনশ্রæতি আছে। যেমন কলার ট্রাকের করে যশোহর বা ধামরাই থেকে এসেছে। বানররা দলবদ্ধভাবে বসবাস করে। এই এক জোড়া বা ততোধিক বানর কেন এই মানিকগঞ্জ এলাকায় আসলো এখন সেটাই প্রশ্ন। তবে যে প্রশ্ন থাকুক না কেন বানরদের খাবার নিয়ে আমার কৌতুহল আছে! অবশ্য বানরগুলো রুগ্ন নয়; তারা তাদের খাবার নিযমিত সংগ্রহ করতে পারছে।
আবার ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এলাকায় প্রচুর বক, শালিক, বাবুই পাখি দেখা যায়। হরিরামপুর চরের পদ্মা নদীর কোলে একটি মিঠাজলের কুমির আটকা পড়েছিল। পরবর্তীতে তা উদ্ধার করে উপযুক্ত স্থানে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এলাকার মানুষের ভিতর আতংক ছিল তবে হিংসাশ্রয়ী ছিল না। বন বিভাগের কর্মকর্তাগণ, এলাকার জনপ্রতিনিধি ও যুব সমাজ কুমিরটি উদ্ধারে ও রক্ষায় প্রসংশনীয় ভূমিকা পালন করে।
প্রাণ ও প্রকৃতি সকল সন্তান তাদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকুক। মানুষ নামক প্রাণিটি পৃথিবীর সকল সমস্যার কারণ! আবার মানুষই সকল প্রাণের জন্য নিরাপদ আশ্রয় ও অবাধ চলাচলের উদ্যোগ নিতে পারে। বন্যপ্রাণি (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ কে ধারণ করে আমরাই পারি বাংলাদেশকে একটি সকল প্রাণের প্রতি সহিংসতামুক্ত নিরাপদ ও অবাধ বসবাসের সুযোগ তৈরি করতে। বন্যপ্রাণি সেটা জলজ বা স্থলজ হোক না কেন তাকে হিংসা বা ভয় পাবার দরকার নেই। সে আমাদের অধিকার ও বাসস্থান হরণ করে না বরং আমরাই তাদের অধিকার, খাদ্য, বাসস্থান হরণ করে চলছি অবিরত। প্রত্যেক প্রাণিকে তার খাবারের স্থল ও বসবাসের স্থলসমূহ সংরক্ষণের মাধ্যমেই তাদের প্রতি আমরা সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পারি। আগামী প্রজন্মকে প্রাণ ও প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার শিক্ষা দিয়ে পরিবেশ, প্রতিবেশ সংরক্ষণে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলি এই প্রত্যাশা করছি।