সাতক্ষীরায় কুড়িয়ে পাওয়া শাকের রান্না প্রতিযোগিতা
সাতক্ষীরা থেকে মো: ফজলুল হক:
আগাছা বলে কিছু নেই, হয় সেটা ঔষধি না হয় খাদ্যের বনজ উৎস। প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া আচাষকৃত শাক, লতাপাতা, গুল্ম, ফল, মূল ও উদ্ভিদ প্রভৃতি গ্রামীণ জনপদের পুষ্টির অন্যতম উৎস। অচাষকৃত উদ্ভিদবৈচিত্র্যের সম্প্রসারণ ও সংরক্ষণের লক্ষ্যে আজ সোমবার ২৯ জানুয়ারী ২০১৮ তারিখে সাতক্ষীরার সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের জেয়ালা গ্রামের কৃষক এমদাদুল হকের বাড়িতে জেয়ালা কৃষক সংগঠনের উদ্যোগে ও বারসিক এর সহযোগিতায় অচাষকৃত শাকের রান্না প্রতিযোগিতা ও স্বাদ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
রান্না প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন ১৬ জন নারী। প্রত্যেক নারী একটি করে শাক খাবার হিসেবে রান্না করেন। ১৬ রকমের (কাটানটি, সজিনাপাতা, বিরগুনি, খেতাশাক, সেঞ্চি শাক, পেপুলি, বাতোশাক, গাদোমনি, কলমী শাক, কলার মোচা, থানকুনি, তেলাকচু, বউটুনি, কচুপাতা, হেলাঞ্চ, কচুরডাটা) কুড়িয়ে পাওয়া শাক রান্না করেন। যে সমস্ত শাক প্রতিযোগিতায় রান্না করা হয় তা এ সকল নারীরা বাড়ির আঙিনা, খাল-বিল, জলাশয় থেকে নিজেরা কুড়িয়ে আনেন।
গ্রামীণ এক উৎসবমুখর পরিবেশে কুড়িয়ে পাওয়া শাক রান্না প্রতিযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল খাদ্য রান্না ও স্বাদ গ্রহণ। জাকজমকর্পূণ ব্যতিক্রমধর্মী এ প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিল স্থানীয় কৃষি পরামর্শক ইমদাদুল হক, নতুন প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রী এবং স্থানীয় জনগন। নির্ধারিত সময়ে রান্না শেষে চলে স্বাদ গ্রহণের পালা। রান্না প্রতিযোগিতায় বৈচিত্র্যময় খাবার এর স্বাদ গ্রহণ করেন সকল বিচারক। ১৬ জন নারীর ( রহিমা, কেয়া, রুবিনা, নাজমা, মর্জিনা, মিতালী বাউলিয়া, কনিকা, ফিরোজা, মিনা, তাহেরা, অমেলা, তি্লোকা, চন্দ্রা, বাশি, জেসমিন, কুলসুম) প্রত্যেকেই তার নিজ হাতে রান্নার তরকারিটা প্রত্যেক বিচারকদের পাতে পরিবেশন করেন। রান্নার প্রধান উপকরণ কুড়িয়ে পাওয়া শাক বা তরকারি রান্না সম্পর্কে উপস্থিত সকলকে অবহিত করেন এবং বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। সকল বিচারককের বিবেচনায় কাঁটা কচুর ফুল রান্না করে ১ম স্থান অধিকার করেছেন কনিকা রাণী, নাজমা আক্তার কচু শাক রান্না করে ২য় হয়েছেন এবং মিতালী বাউলিয়া তেলাকচু শাক রান্না করে ৩য় হয়েছেন। নতুন প্রজন্মের মাঝে আগ্রহ মনোযোগ সৃষ্টিতে ও অচাষকৃত উদ্ভিদ সংরক্ষণের উদ্যোগ নিশ্চিতকরণে গ্রামীণ নারীর অবদানকে স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে বিজয়ী এবং অংশগ্রহণকারী সকল নারীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়।
কুড়িয়ে পাওয়া শাক রান্না প্রতিযোগিতায় অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফ্ফার মাস্টার। এছাড়া বক্তব্য রাখেন কৃষি পরামর্শক ইমদাদুল হক, ফকির চাঁদ ঢালী, মাছখোলা বেতনা নারী সংগঠনের আশুরা বেগম, সাথী আক্তার প্রমুখ। কুড়িয়ে পাওয়া এবং অচাষকৃত উদ্ভিদবৈচিত্র্য সনাক্তকরণ, শ্রেণীকরণ, সংরক্ষণ, ব্যবহার ও বিকাশের জন্য নতুন প্রজন্মের সাথে গ্রামের নারীদের সেতুবন্ধন তৈরীতে এ ধরনের আয়োজন ও প্রচারণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে স্থানীয় জনগণ মত প্রকাশ করেন এবং আশে পাশে পড়ে থাকা লতা পাতাকে আগাছা বলে ফেলে বা কেটে না ফেলে সেগুলো সম্প্রসারণের ও সংরক্ষণের উদ্যোগী হওয়ার আহবান জানান।