আগের চেয়ে বেশ ভালো আছেন জহুরা খাতুন

সাতক্ষীরা থেকে ফাতিমা আক্তার

‘নারী’ শব্দটি অনেক ছোট হলেও কাজ আর গুণের পরিসীমা ব্যাপক। পরিবারে স্বামী সন্তান অসুস্থ হলে নারী হয় ডাক্তার-সেবিকা। বাচ্চাদের পড়ালেখার সময় নারী হয় শিক্ষক। কেউ বেড়াতে গেলে তাকে হতে হয় বিউটিশিয়ান। জামা কাপড় সেলাইয়ের দর্জি, খাবার প্রস্তুতে রাঁধুনী সাথে পরিবেশক। জুতা সেলাই থেকে চন্ডি পাট সবই তার একার হাতে। এমনই হাজার গুণে গুণান্বিত নারীর জীবনজয়ী কাহিনী তুলে ধরছি।

সাতক্ষীরা জেলা শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের চুনা গ্রামের জহুরা খাতুন (৩০)। তাঁর স্বামী মো নুরুজ্জামান (৪৬)। তিনি বিশেষভাবে সক্ষম একজন ব্যক্তি। দু’ মেয়ে নুরনেছা (৯) ও নুরিয়া সুলতানা সাথে শাশুড়ী ফজিলা খাতুন (৬০) কে নিয়ে তাদের সংসার। পরিবারের আয়ের একমাত্র ব্যক্তি জহুরা খাতুন। পাঁচজনের পরিবারে জহুরা খাতুনকে একাই সবকিছু করতে হয়। ওদের খাওয়ানো থেকে শুরু করে সকল কাজ জহুরা খাতুনকে একা হাতে সামলাতে হয়। কখনো দিন মজুরির কাজ করে আবার কখনো অন্যের বাড়িতে কাজ করে আবার কখনো নদীতে কাঁকড়া ধরে পরিবারের মানুষের মুখে খাবার তুলে দিতে হয় জহুরা খাতুনকে।

আট বছর বয়সে জহুরা খাতুনের মা মারা যায়। তারপর দশ বছর বয়সে বাবাও মারা যায়। বড় ভাই ও চাচা চাচীর কাছে মানুষ হতে হয় জহুরা খাতুনকে। পড়াশোনা জহুরা খাতুনের ভাগ্যেই জোটেনি। পনেরো বছরে চাচা চাচীরা দেখে জহুরা খাতুনকে বিয়ে করিয়ে দেন। বিয়ের পিড়িতে বসা ছাড়া কোন উপায় ছিলোনা জহুরা খাতুনের। সেই থেকে জহুরা খাতুনের পথ চলা শুরু। জহুরা খাতুন সংসারটা পরম মমতায় আগলে রাখতে চান।

২০২১ সালে অক্টোবর মাসে নেটজ পার্টনারশিপ ফর ডেভেলপমেন্ট জাস্টিস’র সহযোগিতায় বারসিক’র বাস্তবায়নে পরিবেশ প্রকল্প শুরু হলে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের চুনা গ্রামে শালিক সিএসও দলে যুক্ত হন তিনি। যুক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি নিয়মিতভাবে সাপ্তাহিক আলোচনায় সভা, প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য কার্যক্রমে ধারাবাহিক অংশগ্রহণ করে আসছেন। দলে যুক্ত হওয়ার কিছুদিন পরে বারসিক পরিবেশ প্রকল্প থেকে উৎপাদনশীল সম্পদ হিসাবে তাকে ২টি ছাগল ও ১১টি দেশি মুরগি সহযোগিতা করা হয়। এছাড়াও তাকে একটি কদবেল ও ছবেদার চারা, কিছু বর্ষাকালীন বীজ সহযোগিতা দেওয়া হয় প্রকল্প থেকে।

প্রশিক্ষণ ও সম্পদ সহযোগিতা পাওয়ার পর জহুরা খাতুনের উদ্যোগ বেড়ে যায় বহুগুণ। তিনি বাইরের কাজের পাশাপাশি ছাগল ও মুরগি পালন শুরু করেন। এখন জহুরা খাতুন ৩টা ছাগল ও ৩০টি হাঁস মুরগির মালিক। প্রতিমাসে তিনি ১০০০-১৫০০ টাকার ডিম ও হাঁস, মুরগির বাচ্চা বিক্রি করেন। কিছুটা পরিবারে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারেন। আগের চেয়ে তিনি এখন অনেক ভালো আছেন। এখন তিনি স্বপ্ন দেখতে পারেন। তাঁর বাইরে কাজে যাওয়াটাও কিছুটা কমেছে। জহুরা খাতুন জানান, তাঁর দিনগুলো আগের তুলনায় অনেক ভালো চলছে। এভাবেই ভালো থাকার নিরন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে চান জহুরা খাতুন।

happy wheels 2

Comments