ইঁদুর দমনে লোকায়ত পদ্ধতি

কলমাকান্দা নেত্রকোনা থেকে আল্পনা নাফাক
কলমাকান্দা উপজেলার খারনৈ ইউনিয়নের রানীগাও গ্রামের বাসিন্দা মো: লুৎফর রহমান। বয়স ৭১ বছর। তিনি চার সন্তানের জনক। দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য। ২৭ বছর আগে তিনি অবসর নিয়েছেন সেনাবাহিনী থেকে। অবসর নেওয়ার পর তিনি কৃষিকাজ শুরু করেন। বাড়ির চারদিকে শাকসবজি চাষ ও ফলের গাছ রোপণ করেন। পুকুরে মাছ চাষ করেন।


লুৎফর রহমান তিন একর জমিতে ধান রোপণ করেন। তিনি আমন মৌসুম ও বোরো মৌসুমে ধান চাষ করেন। তবে ধান চাষ করতে গিয়ে তিনি ইঁদুরের অত্যাচারের শিকার হন। ধান রোপণের সাথে সাথে ইঁদুর রোপণকৃত ধানের চারা কেটে ফেলে। ইঁদুরের অত্যাচার ধান রোপণ থেকে শুরু করে ধান কাঁটা পর্যন্ত থাকে। তাই তিনি লোকজ পদ্ধতিতে ধান ক্ষেতের ইঁদুর মারার জন্য ফাঁদ তৈরি করেন।


এই প্রসঙ্গ মো: লুৎফর রহমান বলেন, ‘এই ইঁদুর মারার ফাঁদ তৈরি করতে বাঁশ, রশি, বাঁশের কঞ্চি ও তার লাগে। ইঁদুর মারার ফাঁদ জমিতে ব্যবহারের সময় বাঁশের ভেতরে খাবার দিতে হয়।’ তিনি বলেন, ‘এই ফাঁদ বিকেলে জমিতে রেখে দিতে হয়। ইঁদুর রাতে যখন ধান কেটে ফেলার জন্য আসবে তখন বাঁশের ভেতরে যে খাবার আছে সেগুলো খাওয়ার জন্য চেষ্টা করলে কিংবা খেলে ভেতরে থাকা তার ইঁদুরের গলায় ফেসে যাবে। এভাবে যে কয়টা ফাঁদ দেওয়া থাকবে ততটা ফাঁদে ইঁদুর ধরা পড়বে।’


মো: লুৎফর রহমান আরো বলেন, ‘এই লোকজ পদ্ধতিতে ইঁদুর দমন করা খুবই জরুরি। কারণ এটা পরিবেশের কোনো ক্ষতি করেনা এবং এটা তৈরিতে খুব বেশি টাকার দরকার হয় না। যে জমিতে পানি থাকে সে জমিতে ইঁদুরের ফাঁদ ব্যবহার করার সময় কলা গাছের কুল ব্যবহার করতে হবে। কারণ পানিতে ফাঁদ রেখে দিলে ফাঁদের ভেতরের খাবারগুলো ইঁদুর খেতে পারবেনা। যার ফলে ফাঁদে ইঁদুর ধরা পড়বেনা। তাই যে জমিতে পানি থাকে সে জমিতে ইঁদুরের ফাঁদ ব্যবহারের সময় কলাগাছের কুলের উপরে ইঁদুরের ফাঁদটি রেখে দিতে হবে।’


লুৎফর রহমান এই ফাঁদ ৭ বছর ধরে ব্যবহার করেছেন বলে জানান। আমন ও বোরো এই দুই মৌসুমে তিনি ব্যবহার করেন। ফলে তার জমিতে ইঁদুরের উপদ্রব খুবই কম এবং অনেকের তুলনায় ফলন ভালো পাওয়া যায় । তিনি জানান, গতবছর আমন মৌসুমে ৭০ থেকে ৮০টি ইঁদুর ধরা পড়েছে। এবছর বোরো মৌসুমে ৩০ থেকে ৩৫টি ইঁদুর ধরা পড়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি সবসময় অন্যদেরকে আগ্রহী করে তুলি এই ধরনের ফাঁদ ব্যবহার করার জন্য। এখন এলাকায় লোকজ পদ্ধতিতে ইঁদুর ধরার জন্য এই ফাঁদ ব্যবহার করেছেন অনেকে। প্রায় ১০ থেকে ১৪ জনের মত কৃষক এই পদ্ধতি ব্যবহার করে নিজেদের জমির ধান রক্ষা করছেন।

happy wheels 2