শতবাড়ি: বৈচিত্র্যতা আনয়নে অন্যদের উৎসাহিত করছে

শ্যামনগর,সাতক্ষীরা থেকে মফিজুর রহমান
লবণাক্ত পরিবেশে কৃষিকাজ করে টিকে থাকার জন্য উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষকেরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। লবণ পানি এবং লবণ মাটির সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হয় উপকূলীয় অঞ্চল পদ্মপুকুর ইউনিয়নবাসীর। নদী সংযোগ ইউনিয়ন হওয়াতে এখানে চিংড়ী ঘেরের সংখ্যা অনেক বেশি এবং কৃষি জমির পরিমাণ খুবই কম। তার ভেতরেও পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণে প্রাণপন চেষ্টা করে যাচ্ছেন গড়কুমারপুর গ্রামের বাসিন্দা হামিদা বেগম। তিনি বসতভিটায় সারাবছর সবজি চাষ করছেন।


হামিদা বেগমের বাড়িটি শতবাড়ি তৈরি হওয়ার ফলে তার কি ধরনের উপকার হয়েছে এবং অন্যরা তার কাজ দেখে কিভাবে উৎসাহিত হচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি বারোমাসই মৌসুমভিত্তিক সবজি চাষ করি। বছরব্যাপী ঢেঁড়ষ, পুঁইশাক, ওল, শশা, ঝাল, মানকচু, বেগুন, লালশাক, ডাটাশাক, পেঁয়াজ, রসুন, টমেটো, মৌরী, আমের মধু, ধুন্দল, ঝিঙা, মিষ্টি কুমড়া, কলমিশাক, লাউ, শিম ও সজিনা চাষ করি। এসব শাক সবজি আমার পরিবারের পুষ্টি চাহিদা যেমন পূরণ করছে তেমনি পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত¡ সবজি বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করছি, যা অভাব-অনটনের সংসারে ব্যাপক কাজে লাগছে।’


তিনি আরও বলেন, ‘সবজি বিক্রির টাকা দিয়ে আমি সাংসারিক খরচ চালাচ্ছি। এছাড়া চাষকৃত শাকসবজি পাড়া-প্রতিবেশীদের সাথেও সহভাগিতা করি। এই বিনিময়ের মাধ্যমে আমাদের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। শাকসবজি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ফলজ ও কাঠ জাতীয় গাছ রোপণ করেছি। যেমন আম, সবেদা, জামরুল, কলা, জাম, পেয়ারা, তাল, বাবলা, শিষ্টফুল, নিম, খই, শিমুল, সুপারি, কাঠবাদাম ইত্যাদি গাছ রোপণ করেছি। বসতভিটায় একটি পুকুর আছে। পুকুরে মাছের মধ্যে আছে ভেটকি, রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার, টেংরা, পুটি, ট্যাবলেট, জাপানিপুটি, চিংড়ি, তেলাপিয়া, মাগুর মাছ। আমি বাড়িতে হাঁস-মুরগি পালন করি। হাঁস-মুরগি পালন করে সংসারের অন্যান্য চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করছি।’


হামিদা বেগম বলেন, ‘চাষ করা শাকসবজি থেকে বিভিন্ন বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করি। তাই চাষবাসের সময় বীজের জন্য চিন্তা করতে হয় না। বরং আমার সংরক্ষিত বীজগুলো থেকে নিজে চাষ করি এবং অন্যদের মাঝে বিতরণ করি। বর্ষা মৌসুমে প্রতিবেশিদের মাঝে ধুন্দল, চাল কুমড়া, বেগুন, পুঁইশাক ও সীম এর বীজ বিতরণ করেছি। আমার বাড়ি ‘শতবাড়ি’ নির্বাচিত হওয়াতে এখানে এখন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। যার মাধ্যমে আমরা আগ্রহী ও উদ্যোগী হয়ে বীজ সংরক্ষণ, সবজি চাষ ও বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য আদান প্রদান করতে পারি।’


পুষ্টিভিত্তিক কৃষির মাধ্যমে তৈরিকৃত ‘পুষ্টি ব্যাংক’ বা শত বাড়িটি নিজের পরিবারের কল্যাণ ও ভালো থাকা নিশ্চিত করার জন্য ভূমিকা রাখছে। পারস্পারিক সহযোগিতার ফলে সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কৃষি ফসল চাষে বৈচিত্র্যতা আনয়নে অন্যদের উৎসাহিত করছে। গ্রামের অন্যদের স্বল্প সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারে উৎসাহিত করছে।

happy wheels 2

Comments