‘আমার বাড়ির আঙিনা থেকেই বিষমুক্ত খাবার সংগ্রহ করি’

নেত্রকোনা থেকে আব্দুর রব
জলবায়ু পরিবর্তনে বাড়ছে কৃষিক্ষেত্রে নানা সংকট। অতিরিক্ত গরম ও নানান দুর্যোগে কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে অনরবরত। তাই কৃষককে কৃষিকেন্দ্রিক সংকট মোকাবেলায় সারাজীবন সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হচ্ছে। বিগত দুবছর যাবৎ একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনেক ফসলহানী ও সম্পদ ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে এ বছর অতিরিক্ত গরমে অনেক ফসলের ক্ষতি হয়েছে। একের পর এক দুর্যোগ সামলে উঠতে পারছেন না কৃষকরা। তারপরও জীবিকার তাগিদেই কৃষকদেরকে টিকে থাকার লড়াইয়ে নিজেদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ফসল উৎপাদন করে যাচ্ছেন। নিজ বাড়ির আঙিনাতেই কেউ কেউ বারোমাস সবজি উৎপাদনের জন্য চেষ্টা করছেন। তেমনই এক উদ্যোগী কৃষক হলেন ইসলাম উদ্দিন।


আলাপচারিতায় ইসলাম উদ্দিন বলেন, “নতুন বাড়ি লইছি ৪/৫ বছর অইছে। আমার নাতি নাতনি যেন বড় হয়ে কইতে না পারে দাদা আমাদের জন্য কোন ফলের গাছ লাগায় নাই। এই জন্য আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি।” তার বাড়ির আয়তন ১৫ শতক। বাড়ির চারপাশে পরিকল্পিতভাবে তিনি সারি সারি করে ফলজ, বনজ, ঔষধি গাছ লাগিয়েছেন। এসব গাছের মধ্যে রয়েছে আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম, পেঁপে, পেয়ারা, অড়বড়ই, আমলকি, জলপাই, নারিকেল, কামরাঙ্গা, বড়ই, কমলা, মালটা, জামরুল, ডালিম, বিলেম্বু, চালতা, লেবু, কলা, সুপারি, সজনে, নিম, কদম ইত্যাদি।
অন্যদিকে বসতভিটায় বছরব্যাপী মৌসুমভিত্তিক স্থানীয় জাতের বিভিন্ন শাকসবজি ফসল চাষাবাদ করেন ইসলাম উদ্দিন। এসব সবজির বীজ সংরক্ষণ করেন। তাঁর সবজির মধ্যে রয়েছে সীম, লাউ, চালকুমড়া, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, করলা, কাকরুল, পুইশাক, বরবটি, মিষ্টিকুমড়া, ঢেরস, ধুন্দল, ডাটা, কচু, বারোমাসি মরিচ, বারোমাসি বেগুন প্রভৃতি। তিনি জৈব কৃষি চর্চার মাধ্যমে এসব শাকসবজি উৎপাদন করেন। তাই নিজেদের পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে বাজারেও বিক্রি করে বাড়তি কিছু আয়ও করে থাকেন এ সবজি ও ফল চাষ করে।


ইসলাম উদ্দিন বলেন, “বারো মাসে বারো ফল খেতে হয়। প্রতি মৌসুমেই আলাদা আলাদা শাক হয়, ফল হয়, সবজি হয়। এক একটি সবজি এক এক ধরনে উপকার করে। আমি আমার পছন্দের খাবার, বিষমুক্ত খাবার আমার বাড়ির আঙিনা থেকেই খেতে পারি। বাজারে যেতে হয়না। বাড়ির প্রতি ইঞ্চি জায়গা আমি সবজি উৎপাদনে ব্যবহার করি। মাটি তো আমাদের সম্পদ। যেখানে বীজ রাখি সেখানেই ফসল হয়।”

happy wheels 2

Comments