বাঙ্গিতে কৃষকের মুখে হাসি
হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে সত্যরঞ্জন সাহা
ঋতু ও ফসল বৈচিত্র্যের বাংলাদেশ। কৃষকগণ ঋতুর সাথে তাল মিলিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দূর্যোগ মোকাবেলায় বৈচিত্র্যময় ফসল উৎপাদন করেন। কৃষকের ফসল বৈচিত্র্যতা টিকে আছে কৃষকের উদ্যোগ ও মাটি, পানি, বাতাস, আদ্রতা এলাকাভিক্তিক ভিন্নতা থাকায়। কৃষি বীজবৈচিত্র্য প্রয়োজনীয়তার ভিক্তিতে রক্ষা করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেন কৃষক। কৃষক ফসল বৈচিত্র্য রক্ষায় মাটি ও স্থায়িত্বশীল কৃষিকেই গুরুত্ব দিয়ে আবাদ করেন থাকেন। তাঁরা মাটির ধরণ বুঝে ফসল আবাদ করেন। তাদের উদ্ভাবনী চিন্তা থেকেই তাঁরা খামার জাত সার তৈরি ও ব্যবহার, বীজ সংরক্ষণ করে চাষাবাদে সফল হচ্ছেন। কৃষক পর্যায়ে তথ্য ও বীজ বিনিময়ের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছেন। সম্প্রতি বাঙ্গি চাষ করে কৃষকরা বেশ সফল হলেন। এই সফলতার গল্প কৃষকের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে।
হরিরামপুরের বাহিরচরের কৃষক শহীদ বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা বাহিরচর মাঠে বাঙ্গি চাষ করি সাথি ফসল হিসাবে ২০১৩ সালে থেকে। বারসিক নিরাপদ খাদ্য তৈরিতে আলোচনা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করে উদ্যোগ সৃষ্টিতে সহযোগিতা করে। আমরা দূর্যোগ মোকাবেলায় মাটি ধরণ অনুযায়ী বৈচিত্র্যময় ফসল আবাদ করি। বাঙ্গি চাষ তার মধ্যে অন্যতম।’
বাহিরচর মাঠে প্রথমে কৃষক লাল মিয়া ও জাহিদ মোল্লা বাঙ্গি, কাজি সোনা মিয়া, দেলোয়ার হোসেন বাহিরচর সাথি ফসল হিসাবে বাঙ্গি চাষ করেন। একই জমিতে অন্য ফসল হিসাবে তাঁরা পিয়াজ, রসুন, রাধুনি, লাল শাক, মুলা, তিল, মরিচ, ধনিয়া, কালিজিরা ইত্যাদি আবাদ করেন। এই বছরে বাঙ্গি চাষ করে ভালো ফলন ও বাজারে দাম ভালো পাওয়ায় এলাকার অন্যান্য কৃষকদের মধ্যে বাঙ্গি চাষে আগ্রহ সৃষ্টি হয়। কৃষক পর্যায়ে বীজ ও তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে বাঙ্গি চাষে সফলতা আসছে বলে অনেকে মনে করেন। বাঙ্গি নিরাপদ খাদ্য। কোন রাসায়নিক সার ও বিষ লাগে না। বাঙ্গি চাষে স্বাভাবিক মাত্রায় জৈব সারই যথেষ্ট। বাঙ্গি গাছ লতানো জাতীয় হওয়ায় সাথি ফসল হিসাবে চাষ করা যায়। এলাকার কৃষকসহ মানুষজন মনে করেন অন্যান্য যে কোন ফলের চেয়ে বাঙ্গি সুস্বাদ ও নিরাপদ খাদ্য। বাঙ্গি চাষে কৃষকের ভালো লাভও হয়।
রামকৃষ্ণপুরের কৃষাণি খুরশিদা বেগম বলেন, ‘বাঙ্গির দাম কম কিন্তু আত্মীয়স্বজনকে খাওয়াতে ভালো লাগে। কারণ হলো নিজেরা আবাদ করি। ভালো ফল মানুষকে খাওয়াই। কেউ চাষ করার চাইলে কয়টা বীজ দেই ও আবাদ করার তথ্য কইলে খুশি হয়।’ তিনি জানান, বাঙ্গি চাষ ভালো হয় বেলে ও দু’আশ মাটিতে। পৌষ-মাঘ মাসে বীজ বপন করতে হয়। বাঙ্গি পাকে বৈশাখ থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসে। বাঙ্গি সাথি ফসল হিসাবে চাষ করায় কৃষকদের অন্য কোন খরচ নেই। সাথি ফসল হিসাবে ৩৩ শতাংশ জমিতে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রয় করা সম্ভব হয়।
বাহিরচরের জাহাঙ্গীর বিশ্বাস বলেন, ‘জৈব কৃষি বিষয়ে আলোচনা ও কৃষক পর্যায়ে তথ্য আদান প্রদানের মাধ্যমে কৃষক সচেতন হয়ে বাঙ্গিসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদ করছেন। গ্রামের কৃষকের হাতের তৈরিকৃত অধিকাংশ খাবারই নিরাপদ। কিন্তু ব্যবসায়ীর নিকট চলে গেলে খাবার অনিরাপদ হয়ে যায়। বাঙ্গি পেট ভরে খেলেও পেটের কোন অসুখ হবে না। কুষ্ঠ-কাঠিন্য দূর হয়ে যাবে, শরীর হবে সতেজ।’ তিনি সবাইকে দেশীয় ফল খাওয়া এবং কৃষককে বাঁচানোর আহ্বান জানান।
বাজারের ভালো পরিমাণে বাঙ্গি উঠায় এলাকার লোকজন ভালোমত এই ফল খেতে পারছেন। বাজারে দেশীয় বাঙ্গির চাহিদা ভালো। কৃষকও বাঙ্গির দাম ভালো পাচ্ছেন, ক্রেতারাও নিরাপদ খাদ্য বাঙ্গি পেয়ে খুশি।