প্রকৃতির প্রতি যত্নবান ও দায়িত্বশীল হতে হবে
রাজশাহী থেকে মো. জাহিদ আলী, অমৃত সরকার, ইসমত জেরিন, অনিতা বর্মণ ও ব্রজেন দাস
ভূমিকা
বিশ্ব পরিবেশ দিবস (ইংরেজি ভাষায:World Environment Day, সংক্ষেপে WED) প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক কর্মোদ্যোগ আর জনসচেতনতার মাধ্যমে পরিবেশ সচেতনতার লক্ষ্যে পালিত দিবস। এই দিনটিতেই জাতিসংঘের মানবিক পরিবেশ কনফারেন্স (United Nations Conference on the Human Environment) শুরু হয়েছিল। এই কনফারেন্স হয়েছিল ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ৫ থেকে ১৬ জুন অবধি। এই কনফারেন্স ঐ বছরই চালু করেছিল জাতিসংঘের সাধারণ সভা। তখন থেকেই প্রতি বৎসর এই দিবস পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি প্রথম পালিত হয় ১৯৭৩ সালে। প্রতি বছরই দিবসটি আলাদা আলাদা শহরে, আলাদা আলাদা প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে পালিত হয়। উত্তর গোলার্ধে দিবসটি বসন্তে, আর দক্ষিণ গোলার্ধে দিবসটি শরতে পালিত হয়। ২০১৭ এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য “আমি প্রকৃতির, প্রকৃতি আমার”। এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখেই আজ (৫ জুন) বারসিক এবং অন্যান্য সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে রাজশাহী অঞ্চলের তানোর, পবা এবং গোদাগাড়ি উপজেলায় পালিত হলো আন্তর্জাতিক পরিবেশ দিবস।
তানোর
তানোর উপজেলা প্রশাসন ও বারসিকের যৌথ আয়োজনে তানোর উপজেলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত পরিবেশ দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন কৃষক-কৃষাণী, কামার, কুমার, জেলে, কবি, কবিরাজ, সাংবাদিক, শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধা,শিক্ষার্থীসহ উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ। আলোচনা সভায় বিভিন্ন পেশার ও শ্রেণীর মানুষ বক্তব্য রাখেন। উপজেলা চেয়ারম্যান মো. এমরান আলী মোল্লা বলেন, “এলাকায় বজ্রপাতের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে আমাদের তাল গাছ বেশি করে লাগাতে হবে।” উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাঃ শওকাত আলী বলেন, “মানুষের নিজেদের টিকে থাকার জন্য আমাদের সকল প্রজাতি রক্ষা করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “সুন্দরবনকে রক্ষা না করলে আামাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।” তিনি বলেন, “প্রকৃতি কোন একটি অংশকে ক্ষতি করে মানুষ টিকতে পারবে না; প্রকৃতিতে এর প্রভাব পড়বেই। যেমন. একটি বড় গাছ কাঠবিড়ালীসহ অসংখ্য জীব ও অণুজীবকে টিকিয়ে রাখে, কিন্তু যদি গাছ কাটা হয় তাহলে এর প্রভাবে এর বাস্তসংস্থান পুরোপুরো ভেঙে পড়ে। যার প্রভাব সব শেষে মানুষের উপর পড়বে।”
কৃষাণী নিভা বলেন, “আগে আমরা সবজির ক্ষেতে অনেক জাত দেখতে পেতাম এখন সবজির জাত কমে গেছে। অচাষকৃত অনেক উদ্ভিদকে এখন আগাছা মনে করে নষ্ট করা হচ্ছে। আমাদের গ্রামে নিম্ন আয়ের মানুষেরা এই অচাষকৃত উদ্ভিদের উপর অনেকটা নির্ভর করি।” করিবাজ আফাজ আলী বলেন, “ওলট কম্বল,শতমূল,লজ্জাবতী গাছগুলো আগে সহজেই পাওয়া যেত এখন এগুলো পেতে অনেক কষ্ট হয়।” একইভাবে কবি রেজাউল ইসলাম বলেন, “প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য এখন কমে গেছে পাখির কলতান, মৌমাছির ফুলে মধু আহরণের দৃশ্য এখন অনেক কমে গেছে। গ্রামে ঘুঘু পাখি দল বেঁধে দেখা যেত এখন আর দেখতে পায় না।” তিনি কবিদের কবিতা চলমান রাখার জন্য প্রশাসনের সহায়তা চান।
পবা
পবা জেলায় আন্তর্জাতিক পরিবেশ দিবসের অনুষ্ঠানে দর্শনপাড়া ইউনিয়নের বিল নেপালপাড়া গ্রামে ‘প্রাণ ও প্রকৃতির সাথে আমাদের বসবাস’ এবং ‘প্রাণ ও প্রকৃতি রক্ষায় গ্রামীণ জনগণ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে বিল নেপালপাড়া গ্রামের অর্ধশতাধিক নারী অংশগ্রহণ করেন। আলোচনাসভায় প্রকৃতির কাছাকাছি মানুষ হিসেবে বিলনেপাল পাড়া নারী সংগঠনের সভাপতি খালেদা বেগম বলেন, “গাছ আমাদের খাদ্য দেয়, পুষ্টি দেয়। আমাদের সকলের উচিত বাড়ির পাশের খোলা জায়গায় বছরব্যাপী বিভিন্ন সবজির গাছ লাগানো।” তিনি সকলকে ২টি করে ফলের চারা লাগানোর পরামর্শ দেন। বিল নেপালপাড়া চাষী ক্লাবের সভাপতি নুরুল আমিন বলেন, “আমরা যেমন প্রকৃতির প্রতিটি প্রাণীর উপর নির্ভরশীল, তেমনি প্রকৃতির বিভিন্ন প্রাণীকে আমরা রক্ষা না করলে প্রকৃতি তার মতো করে প্রতিশোধ নিবেই। তাই আমাদের নিজেদের টিকে থাকার জন্য হলেও প্রকৃতির সকল প্রাণের উপর সহিংস আচরণ বন্ধ করা উচিত।” আলোচনা সভায় অংশগ্রহণকারীরা সকলেই ২টি করে ফলজ গাছ লাগানোর অঙ্গীকার করেন। অ
গোদাগাড়ী
গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুল ইউনিয়নে খড়িয়াকান্দি প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা কমিটি ও স্বপ্নের ভেলা সংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতকি পরিবেশ দিবসের উপলক্ষে উপজেলা বনবিভাগের সহায়তায় সপ্তাহব্যাপী ‘বৃক্ষ রোপণ’ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন ইউপি সদস্য জালাল উদ্দিন। সপ্তাহব্যাপী বৃক্ষ রোপণ কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন সাবেক ইউপি সদস্য জিল্লুর রহমান, বনবিভাগের কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামসহ খড়িয়াকান্দি প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা কেন্দ্র ও স্বপ্নের ভেলা সংগঠনের সদস্যরা। সপ্তাব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আওতায় রিশিকুল ইউনিয়নের সংগঠনের সদস্যরা ও গোদাগাড়ী উপজেলা বনবিভাগের সমন্বয়ে খড়িয়াকান্দি গ্রাম থেকে প্রসাদপাড়া গ্রাম পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার গাছের চারা রোপণ করবেন জানান বনবিভাগরে কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম।