মানুষের কল্যাণের জন্য নিবেদিতপ্রাণ গোসাইদাস রায়
মানিকগঞ্জ থেকে বিমলৈ চন্দ্র রায়
বরুন্ডি গ্রামের গোসাইদাস রায়। তিনি তাঁর ৬৫ বছর জীবনের ৪০ বছরের অধিক সময় ধরে মানুষের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। বেশি পড়াশুনা করা হয়নি তাঁর। তবে স্বাক্ষর ও লেখা পড়তে পারেন। মানুষের কল্যাণের জন্য নিজেকে নিবেদন করার কারণে মানুষ তার কথা শুনে এবং তার নেতৃত্ব মেনে চলেন। পাঁচ মেয়ে এক ছেলে সন্তান, স্ত্রী নিয়ে তাঁর পরিবার। মেয়েদের বিয়ে হয়েছে। তিনি নিজের জীবিকা নির্বাহ করার জন্য নিজের জমিতে কৃষি কাজ করেন। চর্চা করেন স্থায়িত্বশীল কৃষি। তাঁর বাড়িতে একটি বীজ ব্যাংক আছে যেখানে কৃষক বীজ রাখেন আবার প্রয়োজনে সময় নিয়ে যান। এটাকে যতœ ও নিয়মিত পরিচর্যা করেন, বীজ ব্যাংকের বীজসমূহ প্রতিবছর জমিতে লাগিয়ে তার জীবনশক্তি ঠিক রাখা হয় বলে তিনি জানান। বীজ ব্যাংক কেন্দ্রিক অনেক কাজ, যেমন কৃষক নেতৃত্বে জাত গবেষণার কাজসমূহ করেন।
তিনি একজন ভূমিহীন নেতা, কৃষক, উন্নয়নকর্মী, কৃষি গবেষক ও সমাজকর্মী।মানুষের প্রতি ভালোবাসা গোসাইদাস রায়কে নানান সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজ করার তাগিদ দেয়। তাই তো তিনি তার পুরো জীবনেই মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি ‘খাস জমি ভূমিহীনদের দিতে হবে’ এই দাবিতে এলাকার ভূমিহীন মানুষকে সংগঠিত করেন। তাঁর নেতৃত্বে এলাকায় কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম নির্ধারণ, পাটের মূল্য নির্ধারণ, কৃষি ঋণ এর সুদ কমানোসহ নানান দাবি তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া তিনি এলাকার মানুষকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য শিশু ও বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দান করেন। নারীর ক্ষমতায়ন, পরিবেশ, প্রকৃতি ও প্রাণ সংরক্ষণ, শিক্ষার বিস্তার, নিরাপদ স্যানিটেশন, বৃক্ষরোপণসহ নানান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন কিংবা এসব কর্মসূচি আয়োজন করে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করেন।
গোসাইদাস রায় বলেন, ‘মানুষকে ভালোবাসলে ঈশ^রকে ভালবাসা যায়। আমি মানুষের মধ্যে ঈশ^রকে পাই। এলাকার বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কাজে আমাকে যেতে হয়। আমার মতামত নেয়। মানুষ হিসাবে আমার এই গুরুত্ব কি কম?।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পাঁচ ভাই তিন বোন ছিলাম। বাবার অনেক জমি ছিল তবে সাংসারিক অভাব অনটনের এবং আগের সময় বন্যা খরাসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ ফসলের ক্ষতি হতো। ফলে অনেক জমি বিক্রি করে বাবাকে সংসার চালাতে হয়েছে। আমরা জমিহারা হয়ে গরিবে পরিণত হয়েছি, জীবন সংগ্রামের সকল ধরনের কষ্টবোধ, আমি আমার জীবনে পার করে এসেছি। তাই যতদিন বাঁচবো ততদিন আমি মানুষের অধিকার, ন্যায্যতার আদায় এবং পরিবেশ, প্রকৃতি সুরক্ষায় কাজ করে যাবো।
গোসাই দাস রায় একজন সংগ্রামী মানুষ। তাঁর এই সংগ্রামের ইতিকথা হয়তো বৃহত্তর পরিসরে নাও আসতে পারে। তাতে গোসাইদাস রায়ের কিছু যায় আসে না। তাঁর কাজ, অবদান এবং মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি নিজেকে যেভাবে নিয়োজিত করেছেন এলাকার মানুষ মনে রাখবে। গোসাই দাস রায়রা টিকে থাকুক মানুষের জীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। আরো অনেক গোসাই দাসরা গড়ে উঠুক সমাজে, অঞ্চলে, গ্রামে গ্রামে এই প্রত্যাশা করছি।