নারী-পুরুষের সম্মিলিত উদ্যোগে দূর্যোগের ক্ষতি প্রশমিত করি
বারসিক নিউজ ডেস্কঃ
বাংলাদেশ এক দূর্যোগপ্রবণ দেশ। বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, অকাল বন্যা, পাহাড়ি ঢল, বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দূর্যোগের পাশাপাশি মুনষ্যসৃষ্ট দূর্যোগও এখন বাংলাদেশের জন্য টিকে থাকার ক্ষেত্রে নতুন নতুন সংকট তৈরি করেছে। পাহাড় ধস, ভবনে অগ্নিকান্ড, অবকাঠামো ধসে পড়া এবং এমনকি অভিবাসী শরণার্থী সমস্যাও দেশে দূর্যোগ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। নানাবিধ দূর্যোগ মোকাবেলা রাষ্ট্রের একার পক্ষে সম্ভব না। তাই দূর্যোগ প্রশমনে সম্মিলিতভাবে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে- যার যার সামর্থ্য, অভিজ্ঞতা, জ্ঞান আর সক্ষমতা নিয়ে।
প্রতিটি সরকার, নাগরিক সম্প্রদায় ও জাতিকে আরও দূর্যোগ বিষয়ক কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার জন্যদুর্যোগ প্রশমনের জন্য আন্তর্জাতিক দিবস (আইডিডিআর) উৎসাহিত করছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ প্রাকৃতিক দূর্যোগ কমিয়ে আনার জন্য আন্তর্জাতিক দশক ঘোষণার অংশ হিসাবে প্রাকৃতিক দূর্যোগ প্রশমনের আন্তর্জাতিক দিবস হিসাবে ১৩ অক্টোবর মনোনীত করে। ২০০৯ সালে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৩ অক্টোবরকে আনুষ্ঠানিকভাবে দিনটি পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়।
বৈশ্বিক জলবায়ুর আঞ্চলিক অভিঘাত আবার অন্যদিকে অপরিকল্পিত কার্যক্রমে দিনে দিনে এর প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশে। তবে বাংলাদেশ ছোট আয়তনের দেশ হলেও এর প্রতিবেশগত বৈচিত্র্যতা কম নয়। তাই তো এক একটি প্রতিবেশীয় এলাকা দূর্যোগের ধরণ, মাত্রা, প্রকোপ একেক রকম। আন্তর্জাতিক দূর্যোগ প্রশমন দিবসের পালন তাই এককেটি এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা এবং বিষয়বস্তুকে আলোকপাত করাই স্বাভাবিক। বারসিক দূর্যোগ প্রশমনের ক্ষেত্রে প্রতিটি এলাকার কমিউনিটির সদস্যদের অভিজ্ঞতা ও কৌশলগুলো বিনিময়ের পাশাপাশি নবীনদের মধ্যে দূর্যোগ মোকাবেলায় পরিবেশ সচেতনতার দিকগুলোও তুলে ধরে।
দিনটি বারসিক তার কর্মএলাকার সাধারণ জনগন, কমিউনিটি, স্থানীয় প্রশাসন, নারী, যুবক এবং শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করে বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে উদযাপন করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছরও বারসিক নেত্রকোণা, সাতক্ষীরা, রাজশাহী এবং মানিকগঞ্জে বিভিন্নভাবে উদযাপন করেছে। চলমান লেখায় আন্তর্জাতিক দূর্যোগ প্রশমন দিবস-২০১৭ এর বিভিন্ন অনুষ্ঠানকে সমন্বিত করে উপস্থাপন করা হলো। নেত্রকোণা থেকে অহিদুর রহমান, সাতক্ষীরা থেকে মননজয় মন্ডল এবং পার্থ সারথী পাল, রাজশাহী থেকে অমৃত কুমার সরকার এবং শহীদুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ থেকে মো. নজরুল ইসলাম, শাহীনুর রহমান শাহিন এবং সুবীর কুমার সরকার লেখা, তথ্য এবং আলোকচিত্র দিয়ে সহায়তা করেছেন।
রাজশাহী: মনের ক্যানভাসে আঁকি, দূর্যোগ প্রশমনে ভূমিকা রাখি
“দূযোর্গ মোকাবেলায় আপনাকেই দরকার ”এই প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে রাজশাহীর তানোর উপজেলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে দূর্যোগ বিষয়ে শিশুদের সচেতনতা তৈরিতে চিত্রাংকন ও অভিজ্ঞজনের বক্তৃতামালা। উক্ত অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে তানোর উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস ও বারসিক।
দূযোর্গ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কতৃক নির্ধারিত বন্যা, ভূমিকম্প ও নিজ এলাকার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বিষয়ে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন তানোর উপজেলার তালন্দ উচ্চ বিদ্যালয়, তানোর পৌরসভা উচ্চ বিদ্যালয়, তানোর বালিকা বিদ্যালয়, তানোর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, আকচা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা। চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে অংশগ্রহণকারীরা দূর্যোগের প্রভাব ও দূর্যোগ প্রশমনের বিভন্ন দিক ফুঁটিয়ে তোলে সাত রংয়ের মাধ্যমে।
পাশপাশি বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রতিনিধিত্বশীল রাজশাহীর তানোর, পবা ও গোদাগাড়ি উপজেলায় “দূর্যোগ মোকাবেলায় আপনাকে দরকার” শীর্ষক আলোচনা ও মতবিনিময় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীগণ বরেন্দ্র অঞ্চলের দূর্যোগ প্রশমনে করনীয় দিকগুলো নিয়ে মতবিনিময় করেন। পাশাপাশি উপজেলাগুলোতে “দূর্যোগ সহনীয় আবাস গড়ি, নিরাপদে বাস করি” শীর্ষক শ্লোগানে আন্তর্জাতিক দূর্যোগ প্রশমন দিবস ২০১৭ এর সচেতনতামূলক র্যালি করা হয়। র্যালি উপজেলা চত্বর দিয়ে প্রধান রাস্তা প্রদক্ষিণ করে উপজেলা চত্বরে এসে শেষ হয়।
গোদাগাড়ী উপজেলায় দূর্যোগ প্রশমন এবং দূর্যোগ ও পরিবেশ বিষয়ে নবীনদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে ১২ অক্টোবর তারিখে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ রচনা, চিত্রাংকন ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয়। আলোচনা ও মতবিনিময় শেষে প্রতিযোগীতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরুষ্কার বিতরণ করা হয়।
পবা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে বড়গাছি লোকসাহিত্য পরিষদের গম্ভীরা টিমের পরিবেশনায় দূর্যোগ ও পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতা মূলক গম্ভীরা গান পরিবেশন করা হয়।
মানিকগঞ্জ: সাম্প্রতিক বন্যা সংকট ও ভবিষ্যৎ
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার সাইলকাই গ্রামের রাবেয়া বেগমের বাড়িতে নাগরিক সংলাপ ও বৈঠকি গানের ভিতর দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো আর্ন্তজাতিক দূর্যোগ প্রশমন দিবস ২০১৭। নাগরিক সংলাপের বিষয় ছিল সাম্প্রতিক বন্যা সংকট ও ভবিষৎ এ বিষয়ে নারী পুরষ যৌথ ভাবে অংশ নেয়। বৈঠক শেষে স্থানীয় শিল্পিদের নিয়ে বৈঠকি গান পরিবেশিত হয়। পাশাপাশি, অনুষ্ঠান শেষে সাইলকাই থেকে বীরসিংজুরী পযর্ন্ত ২ কিলোমিটার রাস্তার ধারে বজ্রপাত মোকাবেলার জন্য তাল বীজ বোপণ করা হয়।
একই দিনে জেলার সিঙ্গাইর উপজেলার বলধারা ইউনিয়নের পরিষদে বাঙগালা নব কৃষক কৃষাণী সংগঠনের আয়োজনে দূর্য়োগ প্রশমনে আমাদের করণীয় বিষয়ে সংলাপ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও তালবীজ রোপণ করা হয়। দূর্যোগ মোকাবেলায় জেন্ডার সংবেদনশীলতার বিষয়টিও গুরুত্ব পায়। সকল শ্রেণী এবং পেশার মানুষের অভিজ্ঞতা নিয়ে স্থানীয়ভাবেই দূর্যোগ মোকাবেলার শক্তি অর্জন করতে হবে।
নেত্রকোণা: দূর্যোগ মোকাবেলায় নারী ও পুরুষ একসাথে
নেত্রকোণা জেলার আটপাড়া উপজেলার তেলিগাতি ইউনিয়ন পরিষদের দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাথে বারসিক, কদমতলী যুব সংগঠন, বাঘরা কৃষক সংগঠন, জানমা উপজেলা কমিটি, আটপাড়া শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির উদযাপন করলো দূর্যোগ প্রশমন দিবস উদযাপন । দূর্যোগ মোকাবেলায় নারী ও পুরুষ: বৈষম্য ও সমতা শীর্ষক এক মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলাচনা শেষে নেত্রকোণা-মদন সড়কে ৩ কিলোমিটার রাস্তায় তালবীজ রোপণ করা হয়।
সাতক্ষীরা : দূর্যোগ সহনীয় আবাস গড়ি, নিরাপদে বাস করি
সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে আন্তর্জাতিক দূর্যোগ প্রশমন দিবস উৎযাপিত হয়। ‘দূর্যোগ সহনীয় আবাস গড়ি, নিরাপদে বাস করি’ এই স্লোগানকে সামনে নিয়ে বর্নাঢ্য র্যালি, আলোচনা ও দূর্যোগ মোকাবেলায় গ্রামীণ কৌশল প্রদর্শণী করা হয়।
শ্যামনগর উপজেলা পরিষদ চত্ত্বর থেকে বর্ণাঢ্য র্যালিটি শ্যামনগরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদিক্ষণ শেষে শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের হলরুমে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বারসিক শ্যামনগর রিসোর্স সেন্টার এই সম্মিলিত প্রোগ্রামে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। দূর্যোগ মোকাবেলা করে স্থানীয় জনগোষ্ঠী যেভাবে টিকে আছে, যেভাবে জীবিকা নির্বাহ করছে, দূর্যোগ মোকাবেলায় সেই সকল গ্রামীণ কৌশল সমুহ প্রদশর্ণীর ব্যবস্থা করে। শ্যামনগর উপজেলা পরিষদ চত্তরে ব্যানার সহ ফেষ্টুনের মাধ্যমে প্রদর্শণীর ব্যবস্থা করা হয়। এদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানা শ্রেণী পেশার দূর্যোগ মোকাবেলায় গ্রামীণ কৌশল সমুহ পরিদর্শন করেন।