সাম্প্রতিক পোস্ট

চালতা ও কদম ফুলে বর্ষাবরণ

নেত্রকোনা থেকে রোখসানা রুমি, পার্বতী রাণী সিংহ

বর্ষার জলে স্নাত হয় শস্য-ফসলের মাঠ, কৃষক ব্যস্ত হয়ে পড়েন জমির ফসল পরিচর্যা করতে, ফসল ফলাতে! বর্ষার জলে স্নাত হয় মানুষের মনও। মনের মাধুরী দিয়ে তাই কবি-সাহিত্যিকগণ রচনা করেন মানবতাবোধকে জাগ্রত করা কবিতা, গল্প! মাঠের ফসল বৃষ্টির জলে স্নত হয়ে সজীব ও সতেজ রূপ পায়; আশা জাগায় কৃষককে, মানুষকে!
আষাঢ় শ্রাবণ দুই মাস বর্ষাকাল। কাব্যময়, গানের, আবেগের ও প্রেমের ঋতু বর্ষাকাল। বাঙালির প্রিয় ঋতুর একটি। বর্ষার প্রবল বর্ষণে প্রিয়জনের সান্নিধ্য পাওয়ার সাধ জাগে, মনের আকাশটাও তাই মেঘ মাধুর্ষ্যরে সৌন্দর্যে কোমল ও সিক্ত হয়। বর্ষা মানেই হলুদ সাদা কদমফুলে গাছ ছেয়ে যাওয়া। এমন অনুভুতি, কল্পনা ও আবেগ নিয়ে আটপাড়া উপজেলার বেশ ক’জন কিশোরী সম্প্রতি বর্ষাবরণের উদ্যোগ নেয়। বর্ষাকে আন্তরিকতাভরা হৃদয়ে বরণ করতে চায় তারা। বর্ষা যেন সবার জন্য নিয়ে আসে সম্ভাবনা, বর্ষিত করে আনন্দময় জীবন ও ফসল মাঠ-প্রান্তর, দূরীভূত করে অন্ধকার, অস্বস্তিকর ধুলিকনা, জাগিয়ে তুলে প্রাণ ও স্পন্দন!

rainy
১৪ আষাঢ়ের দিন। নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার কিশোরী সুমা, পপি, মুন, পিয়া, মিলি, লিপি, মুসলিমা, সুইটি, শান্তামনি, মার্জিনা, মনি, রমা, রোজিনা, চম্পা, টুম্পারা জমায়েত হয় বারসিক রামেশ্বরপুর রিসোর্স সেন্টারে। উদ্দেশ্য একটাই বর্ষাবরণ উৎসব করার! বর্ষাকে বরণ করার জন্য তারা নিজেদের সজ্জিত করে নানান রঙে। কেউ করবী, জবা, টগর হাসনাহেনা চালতা কদমফুল দিয়ে রাঙিয়ে তুলে তাদের শরীর ও মন। কেউ কেউ বর্ষাকালের ফল খেয়ে এবং অন্যদের দিয়ে বর্ষাকালকে বরণ করে নেয়। কেউবা কদমফুল, চালতা ফুল, জবা ফুল, জলপাই ফুল নিয়ে মাথায় গুজে বর্ষাকালের ফল লটকন, জাম, ঢেউয়া নিয়ে আসে। কেউবা আবার বর্ষাকালীন ছড়া, গান, কবিতা পাঠ করে বিনোদিত করে সবাইকে! তাদের পদচারণায় রামেশ্বরপুর বারসিক’র রির্সোস সেন্টারটি মূখরিত হয়ে উঠে! এমন একটি আনন্দ মূখরিত দিনে কিশোরী সুইটি আক্তারের মুখে তাই তো রেরিয়ে আসে ইচ্ছার বুলি। সে ডানা মেলে ইচ্ছার ঘুড়ি উড়াতে চায়, বাধাহীনভাবে প্রকৃতির সুধা পান করতে চায়। স্ইুটি তাই বলে উঠে, “আমার ইচ্ছে করে মেঘে ভিজে গোসল করতে, নদীর পানিতে সাতার কাটতে, বিলের জলে শাপলা শালুক কুড়াতে।”

rainy.jpg-1
সুইটির মতো প্রতিটি কিশোরীর মনে এমন ইচ্ছারা উঁকি দিয়ে যায়; তারা প্রকৃতির সৌন্দর্য অবগাহন করতে চায়। তারা চায় প্রকৃতির প্রতিটি প্রাণ ও অস্তিত্বের সাথে বন্ধুত্ব করতে, ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হতে! তবে প্রকৃতি তার মতো করে, তার অলিখিত আইন অনুযায়ী বিকশিত হতে ও এগিয়ে চলতে মানুষ বাধাগ্রস্ত করে বলে প্রকৃতির ছন্দময় জীবনে এসেছে স্থরিবতা! বর্ষাবরণরত কিশোরীরা সেই স্থবিরতাকে গতিশীল করতে চায় এবং সবাইকে আহ্বান করে প্রকৃতিকে তার আপন নিয়মে চলতে দেওয়া। তাই তারা সম্মিলিতভাবে বলে উঠে, “ঋতুর ধারাবাহিকতায় বর্ষা আাসুক, নদীতে পালতুলা নৌকা চলুক, বাদলের ধারা ঝরুক, বিলে শাপলা ভরে থাকুক। প্রকৃতির এই বৈচিত্র্য মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করুক, আনন্দ দিক।” তাদের এই আহ্বানের সাথে সঙ্গতি রেখে বর্ষাবরণ অনুষ্ঠানে প্রতিটি কিশোরী একটি করে কদম গাছ, চালতা লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

happy wheels 2