করোনা মানুষকে প্রকৃতির আরও সান্নিধ্যে এনেছে
কলমাকান্দা নেত্রকোনা থেকে গুঞ্জন রেমা:
নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার মানুষ প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান সংগ্রহ করে ব্যবহার করে আসছেন অনেক আগে থেকে। এর মধ্যে কোনটা খাবার হিসেবে, আবার কোনটা ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। গ্রামের মানুষ এখন প্রকৃতির উপর নির্ভর করে করোনা ভাইরাস মোকাবিলা করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। মানুষ বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, রেডিও টেলিভিশনের মাধ্যমে জেনেছেন করোনা ভাইরাস সম্পর্কে। তারা এও জেনেছেন যে, এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে নিজেদের কি ধরণের উদ্যোগ নিতে হবে। যার ফলে মানুষ নিজ উদ্যোগে কিছু কিছু কাজ করে যাচ্ছেন নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য।
করোনা ভাইরাসের প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে দেখা দেয় সর্দি, কাশি বা জ্বর ইত্যাদি। গ্রামের মানুষ স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আদিকাল থেকেই প্রকৃতির অফুরন্ত ভান্ডার থেকে বিভিন্ন উপকরণ সংগ্রহ করে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ব্যবহার করে আসছেন। গ্রামের মানুষ যেসব উপায়ে এসব সর্দিকাশি বা জ্বর দূরীকরণে চেষ্টা করছেন সেগুলো হল:
তুলসি পাতা ছেচে রস বের করে এর সাথে মধু মিশিয়ে খাচ্ছেন। কেউ কেউ তুলসি পাতার চা খাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার আদা চা খাচ্ছেন।
লবঙ্গ, দারুচিনি ও তেজপাতা একসাথে চায়ের সাথে সেদ্ধ করে খাওয়া খাচ্ছেন।
বাসক পাতা ছেচে রস বের করে হালকা মধু মিশিয়ে খাচ্ছেন সর্দি কাশি দূর করার জন্য।
লেবুর সরবত, লেবু চা প্রতিদিন খাওয়ার চেষ্টা করছেন অনেকে।
কেউ কেউ টক পাতা রান্না করে খাচ্ছেন।
এছাড়া ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ও মৌসুমী দেশী ফলমূল ( আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, আনারস, লটকন, ডালিম) সংগ্রহ করে খাওয়ার চেষ্টা করছেন।
উপরোক্ত লোকায়ত চর্চার মধ্য দিয়ে গ্রামের মানুষ সর্দি, কাশি থেকে একটু হলেও রক্ষা পাচ্ছেন বলে জানান। এসব লোকায়ত চর্চা কিন্তু প্রাকৃতিক উপাদানের ওপর নির্ভরশীল। গ্রামে এখনও অনেকে আছেন যারা প্রকৃতি থেকে বিভিন্ন উপাদান সংগ্রহ করে বিভিন্ন রোগবালাই থেকে রক্ষা পাওয়া বা এসব রোগ নিরাময় করার চেষ্টা করেছেন। বাবা বা দাদার কাছ থেকে এসব লোকায়ত কৌশল জেনে বা শিখে তারা এখনও সেগুলো চর্চা করেছেন। এই করোনাকালীন সময়েও এসব মানুষ বসে নেই। নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য তারা আজও বেছে নিয়েছেন প্রকৃতির বৈচিত্র্যময় এসব উপাদানকে। এসব উপাদান ব্যবহার করে অনেকে সুফল পাচ্ছেন এবং তাদের দেখাদেখিতে অন্যরাও এসব লোকায়ত চর্চা করতে শুরু করেছেন। করোনাকালীন এই সময়ে তাই মানুষ আবার প্রকৃতির খুব সানিধ্যে আসার চেষ্টা করছেন। তারা অনুধাবন করার চেষ্টা করেছেন যে, প্রকৃতি কীভাবে মানুষকে দু’হাতে ভরে দিয়েছে। এখন তাই মানুষের পালাম প্রকৃতিকে কিছু দেওয়ার।