উদ্যোগী যুবক রাসেল মিয়া
নেত্রকোনা থেকে পার্বতী রানী সিংহ
গ্রামীণ জীবন স্থায়িত্বশীল জীবনযাপনের এক অনন্য উদাহরণ। গ্রামীণ জীবন দূষণমুক্ত নিরাপদ আবাসস্থল। তারই প্রমাণ রেখেছেন নেত্রকোনা জেলার চল্লিশা ইউনিয়নের বামুনিকোনা গ্রামের রাসেল মিয়া(২৬)। জীবিকার প্রয়োজনে কাজের উদ্দেশ্যে গাজীপুর পাড়ি জমান। সেখানে কয়েক বছর কাজ করেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে এলাকা ঘুরে দেখতেন। নিজে কৃষক পরিবারের সন্তান হওয়ায় অবসর সময়ে সেখানকার কৃষি ফসলগুলো কি, কিভাবে চাষ করে সেগুলো দেখতেন এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করতেন।
এক সময় পরিবারের প্রয়োজনে চাকরি ছেড়ে বাড়িতে চলে আসেন। নিজেদের জমিতে চাষাবাদ এবং বাড়ির পাশে ছোট দোকান করা শুরু করেন। পরিবারের চাহিদা পূরণে সারাবছর মৌসুম অনুযায়ী বৈচিত্র্যময় শাকসবজি চাষ করেন। চাষাবাদে নতুন কিছু করার ইচ্ছা তাকে তাড়না করত। অন্যদের চেয়ে আলাদা কৌশলে চাষবাদ করা এবং ভালো ফলনের জন্য গ্রামের প্রবীণ কৃষক, উদ্যোগী কৃষকের খোঁজ করতেন। এভাবেই তার পথচলা শুরু। সারাবছর পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণে ধান, সবজি করেন এবং নিজে বীজ সংরক্ষণ করেন। চাষাবাদে প্রবীণ কৃষক, অভিজ্ঞ কৃষক-কৃষানীর পরার্মশ নেন। ভালোভাবে চাষাবাদ ও উদ্যোগী হওয়ার কারণে কৃষি অধিদপ্তরের সাথেও সর্ম্পক গড়েন।
তাছাড়া বাড়ির পাশে ছোট দোকানে অন্যান্য পণ্যের সাথে সাথে সেখানে চা বিক্রি শুরু করেন। মসলা বা রং চা বিক্রি করতে গিয়ে চা তৈরির উপকরণ হিসাবে তিনি আদার প্রয়োজনীয়তা বেশি অনুভব করেন। সপ্তাহে কম করে হলেও ২৫০ গ্রাম আদা কিনতে হয়। বাজার দূরে হওয়ায় মাঝে মাঝে অসুবিধায় পড়েন। তাছাড়া অনেক দাম দিয়ে কিনতে হয়। এই বিষয়গুলো নিয়ে তিনি চিন্তা করেন এবং একসময় নিজেই চাষ করার উদ্যোগ নেন। তাছাড়া গাজীপুর এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে আদা চাষের পদ্ধতি ও কৌশলগুলো রপ্ত করায় কাজটি আরো সহজ হয়। নিজের জ্ঞান ও সম্পদকে কাজে লাগিয়ে দোকানের পাশে ৫ শতক জমিতে প্রথমে ৭-৮টি আদা কুশি বপন করেন। কিছুদিন পর সেখান থেকে নিজের চাহিদার চেয়ে বেশি ফলন পান। নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে বেশি দামে বিক্রি করেন।
এরপর আরো বেশি করে আদা চাষ করার পরিকল্পনা নেন। সেই থেকে প্রায় ১০ বছর ধরে ৫শতক জমিতে আদা চাষ করেন। বর্তমানে এই অল্প জমি থেকে দুই মণ কেজি আদা উত্তোলন করতে পারেন এবং ১৫০ টাকা বা ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। তাছাড়া জমির চারপাশে সুপারি গাছ দিয়ে বেড়া তৈরি করেছেন। এই অল্প জমিতে আদা চাষ জীবিকায়নের আলাদা একটি বড় উৎস হিসাবে কাজ করছে। আদা চাষে তিনি শুধুমাত্র ছাই ও গোবর ব্যবহার করেন। পরিবেশবান্ধব চর্চার মাধ্যমে এলাকায় একজন ভালো কৃষক হিসাবে পরিচিতি বাড়ছে তাঁর।
বর্তমানে অর্থনৈতিক বা প্রাকৃতিক পরিবেশ হোক পরিবর্তনশীল পরিবেশে টিকে থাকার জন্য পরিবেশসম্মত চর্চা স্থায়িত্বশীল জীবিকায়নের জন্য নতুন পথ উন্মোচন করেছে উদ্যোগী যুব রাসেল।