নারী-পুরুষ পরিপূরক হয়ে কাজ করি
মানিকগঞ্জ সিংগাইর থেকে আছিয়া আক্তার
পরিবার, সমাজ রাষ্ট্রের উন্নয়ন করতে হলে আমাদের পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থা ভেঙে নারী এবং পুরুষে মাঝে সমতা আনতে হবে। সমতা মানে জীবনের সর্বক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ, সমান সুযোগ-সুবিধা, সমান অধিকার ভোগ ইত্যাদি। পুরুষ শ্রেষ্ঠ আর নারী একেবারেই মূল্যহীন এই ধারণা থেকে বের হতে হবে। আমাদের সকল ক্ষেত্রে উন্নয়ন করতে হলে প্রতিপক্ষ নয়, পরিপুরক হয়ে কাজ করতে হবে। এমনই এক সমতার পরিবার জয়মালা রানী ও সুনিল চন্দ্র মনিদাসের।
মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার বায়রা ইউনিয়নের বাইমাইল ঋষিপাড়া গ্রামের দম্পতি জয়মালা (৩৬) ও সুনিল (৪০)। এক মেয়ে শীলা রানী (১৯) এবং এক ছেলে অমিত (১০)। মেয়ে এসএসসি পাশ করার পর বিয়ে হয়েছে। ছেলে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়াশোনা করছে। স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজ করে।
জয়মালার বসতভিটা ছাড়া তাদের নিজস্ব কোন জমি ছিলো না। তাঁর স্বামী একদিন রাজমিস্তি কাজ করলে কয়েকদিন আবার করতো না। তাই দু’সন্তানসহ চার জনের সংসার চালানো খুব কষ্ট হতো তাঁর। একসময় বাঁশের কাজ শুরু করেন তিনি। তখন মোটামুটি করে হলেও সংসার চালানো, মেয়ে-ছেলের লেখাপড়ার খরচ যোগার করতে পারতেন।
কিন্তু মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে বেশ ঋণের সম্মুখীন হন। তিনি বলেন, ‘মেয়েকে বিয়ে দিতে গিয়ে অনেক টাকা ঋণ করি। আর সে ঋণ শোধ করতে আমি গামের্ন্টসের কাজে যাই। সেখানে ২ বছর কাজ করি। এক পর্যায়ে দেখি ছেলের লেখাপড়া নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ছেলে ও স্বামীর খাওয়া দাওয়া কষ্ট হচ্ছে। পরে আবার বাড়ি ফিরে আসি। আবার বাঁশের কাজ এবং গরু পালন করা শুরু করি।’
বর্তমানে তাঁর র স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজের পাশাপাশি বাড়িতে যতটুকু সময় অবসর পান, ততটুকু সময় ঝাকার চটা ওঠানো, বুনানোসহ গরুকে সন্ধ্যায় কুড়া ভুসি খাওয়ানোর কাজে সহায়তা করেন। তার স্বামী সুনিল বলেন, ‘এখন আমি আগের মতো অযথা বাড়ির বাইরে সময় অপচয় করিনা। স্বামী-স্ত্রী দু জনে মিলেমিশে কাজ করি। কাজে কোন ভেদাভেদ নাই। এটা স্বামীর কাজ আর এটা বউয়ের কাজ এমন কোন কাজ নেই। সবই সংসারের কাজ আর আমাদের কাজ। আমাদের ঋণগুলো এখন কমে গেছে। বর্তমানে সব জিনিসের যে দাম দুজনে মিলে কাজ না করলে সংসার চালানো খুব কঠিন।’
জয়মালা বলেন, ‘২০১৮ সাল থেকে আমি বারসিকর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাই। আমি বাইমাইল ঋষিপাড়া নারী উন্নয়ন সমিতির সহসভাপতি। আমি আমার স্বামীকে বারসিক’র এই অনুষ্ঠানগুলোতে মাঝে মাঝে থাকতে বলতাম। তিনিও আমার কথামতো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে থাকতো আর নারী-পুরুষে কোন ভেদাভেদ নাই, সবাই একই ¯্রষ্টার সৃষ্টি। এই কথাগুলো বারবার শুনে তার মাঝে এক সুন্দর পরিবর্তন হয়েছে। আমরা দুজনে পরিবারের সব কাজ করে এখন আর্থিক আয়মূলক কাজ করে সংসারের স্বচ্ছলতা এনেছি।’
জয়মালা আরও বলেন, ‘পরিবারে যদি স্বামী-স্ত্রী একসাথে কাজ করে, তবে সব কাজগুলো সহজ- সুন্দর এবং সেই সাথে আর্থিক স্বচ্ছলতাসহ আয়মূলক কাজে যুক্ত হওয়া যায়।