কোভিড ওয়ারিয়ার টিম ট্রেনিং এ যা শিখলাম
শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে ফজলুল হক
মহামারী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ স্বেচ্ছাসেবীরা নিজের জ্ঞান, মেধা, শ্রম, অর্থ দিয়ে ধারাবাহিক ভাবে করে যাচ্ছিলো সচেতনতা মূলক লিফলেট বিতরণ, মাইকিং করা, পোষ্টারিং, মানুষকে ঘরে থাকতে অনুরোধ জানিয়ে চলাচলের রাস্তায় আল্পনা অঙ্কন ও দেওয়াল লিখন, জীবাণুনাশক স্প্রে করা, বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে, বাজারে ক্ষার যুক্ত সাবান বিতরণ, অসহায় মানুষের খাদ্য বিতরণ, মসজিদ, মন্দির গুলোতে ব্লিসিং পাউডার দিয়ে ধৌত করণ, এছাড়াও মানুষের কাছে কাছে গিয়ে বোঝানো, মাস্ক বিতরণ, সুপেয় পানি পিএসএফ গুলোতে সাবান টানানো, করোনা সচেতনতায় অভিনব কায়দায় প্লাকার্ড প্রদর্শন করা, দুরত্ব বজায় রাখার জন্য যে সকল দোকানপাট খোলা থাকবে সে সকল দোকানের সামনে নির্দিষ্ট সীমা রেখা অঙ্কন করা, জনসমাগম এড়াতে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলা গ্রামে গ্রামে যেয়ে বন্ধ করা। শ্যামনগর উপজেলা প্রশাসন প্রদত্ত ইতিমধ্যে যারা ঢাকা এবং পৃথিবীর অন্য অন্য দেশ থেকে নিজ বাড়িতে প্রবেশ করছেন তাদেরকে হোম কোয়ারান্টাইন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসন সর্ব প্রথম তালিকা ও লাল পতাকা সহ সীল সরবারহ করে সেটা তুলে দেন সিডিও ইয়ুথ টিমের মানবিক যোদ্ধাদের হাতে। আর এর ধারাবাহিকতায় সংগঠনের সদস্যরা তালিকা দেখে বাড়ি চিহ্নিত তাদের বাড়িতে লাল পতাকা তুলে দেন এবং ১৪ দিন যেন ঘর থেকে বের না হওয়া নিশ্চিত করণ।
স্বেচ্ছাসেবীরা বিরামহীন সচেতনামূলক কাজে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন। সর্বপরি যারা দিন আনে দিন খায়- অসহায় দুস্থ সেই সব মানুষের জন্য নিজ পকেটের টাকা দিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব সামগ্রী চাল, ডাল, সাবান, হ্যান্ডওয়াশ, তেল, আলু দিয়েও সহায়তা করে আসছিল স্বেচ্ছাসেবীরা। হঠাৎ শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে জানা গেলো উপজেলা প্রশাসন এর ব্যবস্থাপনায় ফ্রেণ্ডশিপ হাসপাতালের সহযোগিতায় কোভিড-১৯ বিষয়ক ৩দিনের প্রশিক্ষণ হবে। আগ্রহী স্বেচ্ছাসেবীরা ইমেইল এর মাধ্যমে আবেদন করতে পারবে। অনেক চিন্তা ভাবনা করে আমি ইমেইলর মাধ্যমে আবেদন পাঠালাম। ঠিক তিন চার দিন পরে রাত আনুমানিক ৭.৩০ মিনিট এর সময় ফোন আসলো উপজেলা থেকে; বললো কোভিড ১৯ প্রশিক্ষণে আপনি নির্বাচিত হয়েছেন। সকাল ৯ টায় প্রশিক্ষণ শুরু হবে ফ্রেণ্ডশিপ হাসপাতাল শ্যামনগরের সোয়ালিয়া। আমি রাজি হলাম প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করলাম। প্রথম ধাপের প্রশিক্ষণে ১০ জন অংশগ্রহণ করেছিল বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে- স্বেচ্ছাসেবক, উন্নয়নকর্মী, সংবাদিক, ছাত্র, এনজিও কর্মী। সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে ফ্রেণ্ডশিপ হাসপাতালের পরিচালক লেঃ কর্ণেল ( অবঃ) ডাঃ মোজাহেদুল হকের সঞ্চালনে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আ ন ম আবুজর গিফারী । কোভিড ১৯ ওয়ারিয়ার টিম ট্রনিং এ যা শিখলাম।
প্রথম দিন
- কোভিড ১৯ বিষয়ে প্রাক যাচাই করণ।
- করোনা ভাইরাস পরিচিতি, সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
- কোভিড এ আক্রান্ত রোগীর সংজ্ঞা ও চিহ্নিতকরণ।
- কোভিড সংক্রমণ প্রতিরোধে করণীয়।
- কোয়ারান্টাইন / আইসোলেশন।
- পিপিই ব্যবহার ও পরিধান। ( আলোচনা ব্যবহারিক)
- হাত-ধৌত করণ পদ্ধতি। ( আলেচনা ও ব্যবহারিক)
দ্বিতীয় দিন
- কোভিড এর লক্ষণ ও ব্যবস্থা গ্রহন।
- করোনার প্রভাবে মানসিক চাপ মুক্ত থাকায় উপায়।
- করোনার প্রভাবে শিশুদের মানসিক চাপমুক্ত রাখার উপায়।
- কোভিড ও সামাজিক কুসংস্কার।
- পরিচর্যা
- পরিবেশ জীবানুমুক্ত করণ ( আলোচনা ও ব্যবহারিক)।
তৃতীয় দিন
- করোনা পরিস্থিতিতে গর্ভবতী মা ও শিশুদের পরিচর্যা।
- মৃতদেহ দাফন ও সৎকার গাইড লাইন।
- ফ্রেণ্ডশিপ হাসপাতালের কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা দান।
- চুড়ান্ত যাচাই করণ
- পিপিই বিতরণ, সনদ প্রদান ও সমাপনী ভাষণ।
তিন দিনের প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন লেঃ কর্ণেল ( অবঃ) ডা. মোজাহেদুল হক, ডা. তামিম, ডা. ফয়সাল, ডা. আছমা। কোভিড ওয়ারিয়ার টিম ট্রেনিং এ আমি অংশগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে করোনা ভাইরাস বিষয়ে অজানা তথ্য গুলো জানতে পেরেছি। এক জন স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে সেই জানা তথ্য গুলো সাধারণ মানুষের মাঝে প্রচার করে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ভুমিকা পালন করতে পারবো।