দোতলা কৃষি প্রযুক্তির উদ্ভাবক জাফর সাদেক
চাটমোহর, পাবনা থেকে ইকবাল কবীর রনজু
চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ক্রমশই কমে আসছে। কৃষি জমিতে নির্মিত হচ্ছে ঘর বাড়ি। ইটের ভাটা। জমির মাঝের আইলের সংখ্যা বাড়ছে। নগদ টাকার আশায় অনেক কৃষক বিক্রি করছেন জমির টপ সয়েল। এমন অনেক কারণ ফসল উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব ফেলায় এবং বর্ধিষ্ণু মানুষের খাদ্য ঘাটতির মোকাবেলায় কিভাবে নির্দিষ্ট পরিমাণ জমিতে অধিক ফসল উৎপাদন করা যায় এমন চিন্তা থেকে ২০০৪ সালে দোতলা কৃষি বিষয়ক চিন্তা ভাবনা শুরু করেন পাবনার কৃষিবিদ জাফর সাদেক। ২০০৯ সালে তিনি এর ইতিবাচক ফলাফলও পেয়ে যান।
দোতলা কৃষির উদ্ভাবক কৃষিবিদ জাফর সাদেক জানান, আড়াই ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট যে কোন ফসলের উপর ভিন্ন উচ্চতায় ও নির্দিষ্ট দূরত্বে মাচা তৈরি করে দোতলা কৃষি বাস্তবায়ন করা সম্ভব। দোতলা কৃষি প্রযুক্তি অনুসরণ করে এক বিঘা জমিতে ধানের পাশাপাশি লাউ লাগালে অন্তত এক হাজারটি লাউ উৎপাদন করা সম্ভব। লাউ ছাড়াও অন্যান্য এ জাতীয় ফসল এ পদ্ধতিতে উৎপাদন করা সম্ভব। নিচের ফসল উৎপাদনের জন্য যতটুকু সূর্যালোক ও উত্তাপ প্রয়োজন ছায়া সরে যাওয়ার ফলে তা পাওয়া সম্ভব হয়। একই সাথে দু’টি ফসলের আবাদ হওয়ায় কোন একটির ফলন ও দাম কম হলেও অন্যটির মাধ্যমে লাভ করা যায়। বাংলাদেশে দোতলা কৃষি প্রযুক্তি সঠিকভাবে প্রয়োগ করলে প্রতিবছর তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাড়তি আয় করা সম্ভব বলে জাফর সাদেক জানান। এ প্রযুক্তি কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে তিনি সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ প্রসঙ্গে উদ্ভাবক কৃষিবিদ জাফর সাদেক বলেন,“২০১০ সালে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ে আমি আমার দোতলা কৃষি প্রযুক্তি প্রদর্শন করি। আমার কপিরাইট নম্বর ১২,২২৪। ২০১২ সালে প্রধান মন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক এলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম আমাকে তার অফিসে ডেকে নেন। দোতলা কৃষি প্রযুক্তির আদলে সৌর সেচ পাম্প স্থাপনের পরামর্শ দেন। ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমীতে দোতলা কৃষি প্রযুক্তির আদলে সৌর সেচ পাম্প স্থাপন করি যা অদ্যাবধি চালু আছে।”
কৃষিবিদ জাফর সাদেক ১৯৫২ সালের ৩১ ডিসেম্বর জন্ম গ্রহন করেন। পিতার নাম মরহুম আব্দুস সামাদ। পাবনার পৈলানপুর এলাকায় বসবাস করছেন। স্থায়ী নিবাস পাবনার বেড়ার বৃশালিখা গ্রামে। ছোটবেলায় আবহাওয়াবিদ বাবা পশ্চিম পাকিস্তানে কর্মরত ছিলেন। ছোট বেলার কিছুদিন কাটান পশ্চিম পাকিস্তানে। পশ্চিম পাকিস্তানে বাংলা মিডিয়াম স্কুল না থাকায় তিনি উর্দু মিডিয়ামে লেখাপড়া শুরু করেন। ১৯৫৮ সালে দেশে ফিরে আসেন। ভর্তি হন ঢাকার বিকে আফতাব সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তেজগাঁও সরকারী বালক উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে চার বিষয়ে লেটারসহ প্রথম বিভাগে এস এস সি পাশ করেন। ১৯৭১ সালে (অনুষ্ঠিত ১৯৭২) ঢাকা কলেজ থেকে দুই বিষয়ে লেটারসহ প্রথম বিভাগে এইচ এস সি পাশ করেন। এইচ এস সি পাশ করার পর শেরে বাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয় সাবেক বাংলাদেশ কৃষি ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন। সেখান থেকে বিএসসি এজি অনার্স ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৭৭ সালে সহকারী উদ্বান তত্ত্ববিদ হিসেবে সরকারী চাকরীতে যোগ দেন। ১৯৮০ সালে কৃষি গবেষণার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের আবুধাবীতে পাড়ি জমান এবং সেখানে তিন বছর কাল অবস্থান করেন। ১৯৮৩ সালে দেশে ফিরে আসেন। ১৯৮৫ সালে পাবনার অটঘরিয়া কলেজে কৃষি শিক্ষা বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর সহঃ অধ্যাপক হিসেবে অবসরে যান তিনি। পারিবারিক জীবনে বিবাহিত এ উদ্ভাবকের স্ত্রী সাবেরা সুলতানা পাবনা সিটি কলেজের গনিত বিষয়ে সহঃ অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। এক মাত্র পূত্র পাবনা এডওয়ার্ড বিশ^বিদ্যালয় কলেজে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত। মেয়ে শ্রেয়া সরকারী এডওয়ার্ড বিশ^বিদ্যালয় কলেজে অধ্যযনরত।