স্থানীয় হাঁস-মুুুুুুুুুুুুুুরগি পালনে মাফুজা খাতুেনর সফলতা

সাতক্ষীরা ,শ্যানগর থেকে চম্পা মল্লিক
উপকূলীয় অঞ্চলের শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিযনের ধল গ্রামে বাস করেন মাফুজা খাতুন (৩২)। তাঁর স্বামী রহমান সরদার (৪০)। তিন সন্তান নিয়ে ১০ কাঠা ভিটায় তাদের বসবাস। দুই মেয়ে ও একটি ছেলে রয়েছে তাদের।
সংসারে আয়ের উৎস খুবই কম ছিলো মাফুজা খাতুনের। তার স্বামী ভ্যান চালিয়ে এবং দিনমজুরি কাজ করে কোনরকম চালাতো তাদের সংসারটা। পড়ালেখার প্রতি সন্তানদের আগ্রহ থাকা স্বত্ত্বেও খরচের কথা ভেবে বড় মেয়েটিকে বিয়ে দিয়েছিলেন দ্রুত। এরপর মাফুজা খাতুনের স্বামী টানাটানির সংসারে একটু স্বচ্ছলতার কথা ভেবে ঋণ করে সোনালি মুরগির ফার্ম করেন নিজ ভিটাতে।


মুরগির বাচ্চা উঠানোর শুরু থেকেই ফিড ও ঔষধ খরচের জন্য মাফুজা খাতুনের স্বামীকে ছুটতে হয় প্রতিনিয়ত। যার ফলে তার আগের দুটি কাজ বন্ধ প্রায়। এই কাজটি তিনি শুরু করেছিলেন ২০২০ সাল থেকে। মাফুজা খাতুন এবং তার স্বামী সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখতেন এই ফার্মটিতে। মাফুজা খাতুন খেয়াল করেছিলেন, এই মুরগির রোগ ব্যাধি সবসময় লেগেই থাকে। আর এদিকে খেয়াল করতে গিয়ে তার স্বামী দিনমজুরী ও ভ্যান চালানোর কাজ ঠিকমতো করতে পারেন না। আবার কোনরকমে স্বামী ও স্ত্রী দুজনে মিলে সকল বাধা পার করে যখন বিক্রির উপযোগী করেন এবং বিক্রির পরে হিসাব করে দেখেন, যেটুকু লাভ পান তার অধিকাংশই চলে যায় ফিড ও ঔষধের দোকানের বাকিতে। সংসারের জন্য তেমন কিছুই করতে পারেন না মাফুজার স্বামী রহমান সরদার। সন্তানদের বা নিজের প্রয়োজনে অল্পকিছু টাকা চেয়ে ও পেতেন না মাফুজা খাতুন।


অবশেষে সন্তানদের এবং নিজের টুকিটাকি হাত খরচের কথা ভেবে নিজ উদ্যোগে মাফুজা খাতুন দু চারটি স্থানীয় জাতের হাঁস ও মুরগি পালনের উদ্যোগ নেন ২০২১ সাল থেকে। রোগ ব্যাধিতে ক্ষতিগ্রস্ততার কথা মাথায় রেখে মাফুজা খাতুন প্রাথমিকভাবে স্বল্প পরিমাণে স্থানীয় জাতের হাঁস ও মুরগি পালন করতে থাকেন। ধীরে ধীরে তিনি নিজের কাজ এবং তার স্বামীর কাজটি থেকে এই অভিজ্ঞতা অর্জন করতে থাকেন যে, ফার্মের মুরগির থেকে স্থানীয় জাতের হাঁস ও মুরগির রোগব্যাধি কম এবং খেয়াল কম করলেও হয়। তাই তিনি পরবর্তীতে হাঁস ও মুরগির পরিমাণ বাড়াতে থাকেন এবং এটি থেকে আয়ের একটি উৎস খুঁজে পান ।


এই হাঁস-মুরগী পালনের টাকা থেকে তিনি প্রথমে ছেলে মেয়েদের পড়াশুনার খরচ ও নিজের হাত খরচ চালাতেন। তবে বর্তমানে তিনি এই হাঁস ও মুরগি পালনের টাকা থেকে নিজের এবং ছেলেমেয়েদের পোশাক ও প্রাইভেট খরচের পাশাপাশি সংসারের টুকিটাকি খরচও বহন করেন। বর্তমানে তার বাড়িতে ৮টি মুরগি, ৩৬টি মেরি হাঁস, ১৪টি পাতি হাঁস ও ১০০০ টি ফার্মের মুরগি রয়েছে।


মাফুজা খাতুন তার নিজের উদ্যোগে করা স্থানীয় জাতের হাঁস ও মুরগি পালনের অভিজ্ঞতা থেকে মনে করেন, তিনি তার বাড়িতে একদিন ফার্মের মুরগির পরিবর্তে শুধুমাত্র স্থানীয় জাতের হাঁসমুরগি পালন করবেন এবং এই কাজটি থেকে সম্পূর্ণভাবে আত্মনির্ভরশীলতার মাধ্যমে একদিন সংসারের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিতে পারবেন।

happy wheels 2

Comments