প্রাণীসম্পদ পালনে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন কুসুম রানী
সাতক্ষীরা থেকে মহিরঞ্জন মন্ডল
শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পূর্ব ঝাঁপা গ্রামে একটি অসহায় ও হতদরিদ্র পরিবার কুসুম রানীর। এক ছেলে ও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে তাঁর অভাবের সংসার। তাঁর স্বামী বঙ্কিম দিনমুজুরের কাজ করেন। বছরের সব সময় কাজ হয় না তাই অন্যের মাছের ঘেরে কৃষি দিনমজুর হিসাবে বছরে দুই থেকে তিন মাস কাজ করতে পারেন তিনি।
এদিকে কুসুম রানী বাড়ির গৃহস্থলির কাজ ছাড়া তেমন কোনো কাজ করতে পারে না। ছেলেটাকে অনেক কষ্টে মাস্টার্স পাশ করিয়েছেন তিনি। কিন্তু ছেলে নিজে কোনো আয়মূলক কাজের সাথে জড়িত নয়। তাই সংসারের দায়িত্ব কুসুম রানীকেই সামলাতে হচ্ছে। এর মধ্যে ছেলেটি বিয়ে করেছে। তার স্ত্রী গর্ভবতী। ফলে এমনিতেই অভাবের সংসার তার উপর এতোগুলো মানুষের খরচ চালাতে হিমসিম খেতে হয় কুসুম রানী ও তাঁর স্বামীকে।
বসত ভিটায় জায়গার পরিমাণ কম থাকায় এবং সামর্থ্য না থাকায় নিজেদের বসবাস করার ঘরটাও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে কয়েকবার ভেঙে গেছে। ঘরের চালের টিন উড়ে চলে গেছে। দুর্যোগ কেটে গেলে আবার কোন রকমে ঘরটা মেরামত করে নতুন করে আশার স্বপ্ন বুনে সংসার করে কুসুম রানীর পরিবার। এরকম পরিস্থিতিতে কুসুম ও তার পরিবার যখন পুরোপুরি দিশেহারা ঠিক তখনই বারসিক’র পরিবেশ প্রকল্পের গোলাপ দলের সদস্য হিসাবে যুক্ত হন কুসুম রানী।
একদিন বারসিক অফিস থেকে ফোন পান কুসুম রানী। তিনি জানতে পারেন যে, তাকে দলের সভায় যোগদান করতে হবে। এভাবেই তিনি প্রতিটি সভায় অংশগ্রহণ করেন। একটা পর্যায়ে জলবায়ু সহনশীল কৃষি চর্চা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রাণীসম্পদ লালন পালন, পরিচর্যা ও বসতভিটায় সবজি চাষ সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন। কুসুম রানী তার পরিবারের সাথে পরামর্শ করে ছাগল পালন করার সিদ্ধান্ত নেন। নেটজ্ বাংলাদেশের সহায়তায় বারসিক পরিবেশ প্রকল্পের মাধ্যমে তাকে ১২,৮০০ টাকা মূল্যের ৩টি ছাগল কেনা হয় সহায়তা হিসেবে। এছাড়াও হাঁস ও মুরগি দেওয়া হয় তাকে। কুসুম রানী ছাগল ও হাঁস-মুরগি পালন করতে থাকেন। তাঁর প্রাণীসম্পদগুলোকে নিজের সন্তানের মত যতœ করে লালন পালন করেন। এভাবে প্রাণীসম্পদ পালনের মাধ্যমে তিনি আয়মূঔশ কাজের সাথে জড়িত হন।
বর্তমানে তার সঠিক পরিচর্যার ফলে তাঁর ৩টি ছাগল ৭টি বাচ্চা দিয়েছে এবং তাঁর মোট ছাগলের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০টিতে। তিনি আশা করছেন এ ছাগল, হাঁস ও মুরগি বিক্রি করার মধ্য দিয়ে তাঁর সংসাওে স্বচ্ছলতা আনবেন।
কুসুম রানী এখন নতুন করে স্বপ্ন বুনছে ১০টি ছাগল থেকে ৫টি বিক্রি করে তার বসবাসের ঘরটি নতুন করে মেরামত করবেন এবং ছেলের বউকে ভালো হাসপাতালে ডেলিভারি করাবেন। প্রাণীসম্পদ পালনে জীবন পাল্টে গেছে কুসুম রানীর। তিনি এখন ভালো আছেন বলে জানান।