বাঁশবেতেই হিরেন্দ্র হাজংয়ের ভরসা
কলমাকান্দা নেত্রকোনা থেকে আলপনা নাফাক
কলমাকান্দা উপজেলার খারনৈ ইউনিয়নের বাসিন্দা হিরেন্দ্র হাজং। বয়স আনুমানিক ৭০ বছর। এক মেয়ে, মেয়ে জামাই ও নাতী নাতনী ও স্বামী স্ত্রী নিয়ে তাঁদের সংসার। হিরেন্দ্র ও তার স্ত্রী কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। পাশাপাশি বাঁশ বেতের কাজ করেন ।
বাঁশ বেত দিয়ে হিরেন্দ্র হাজং খালই, জাক্ষা, চালুন, খাচা, ঢুলি ইত্যাদি জিনিসপত্র তৈরি করেন। যদিওবা তিনি এসব কাজে পারদর্শী কিন্তু সবসময় করতে পারেন না নিজের বাঁশ না থাকার কারণে। তাই তিনি সেসব মানুষের বাঁশের জিনিসপত্র তৈরি করে যারা তাঁর কাছে বাঁশ নিয়ে আসেন। এভাবে যার যেটা দরকার তারা বাঁশ নিয়ে আসেন আর সে বাঁশ দিয়ে তিনি তৈরি করে দেন বাঁশের জিনিসপত্র।
একটি বাঁশ দিয়ে যদি ২টি জাক্ষা বানানো যায় তবে একটি বাঁশ মালিক নিয়ে নেন আরেকটি তিনি নিজে রেখে দেন। এভাবে তিনি সারাবছরই বাঁশের জিনিসপত্র তৈরি করে থাকেন। এই প্রসঙ্গে হিরেন্দ্র হাজং বলেন, ‘পুঁজির অভাবে আমি বাঁশ কিনতে পারি না। যদি বাঁশ কেনার মত সামর্থ্য থাকতো তবে সারাবছরই এ কাজ করতে পারতাম।’
বয়সের ভারে এখন তিনি আর ভারি কাজগুলো করতে পারেন না। তাই তিনি এমন কাজগুলো করতে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন যে কাজগুলোতে কম কায়িকশ্রমের প্রয়োজন পড়ে। পুঁজির অভাবে এভাবেই হিরেন্দ্র হাজংকে অন্য মানুষের মুখাপেক্ষী হতে হয়। কারণ জীবনচাকাকে সচল করার জন্য তাঁকে তো কিছু না কিছু করতেই হয়।
হিরেন্দ্র হাজংয়ের মতো এরকমন অনেক দরিদ্র মানুষ আছেন যাঁরা তাদের আদিপেশা ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন নিরন্তর। তাঁরা দক্ষ ও অভিজ্ঞ হলেও অনেক সময় মূলধনের অভাবে তাদের আদিপেশাকে শেষ পর্যন্ত রক্ষা করতে পারেন না। ফলশ্রুতিতে আমাদের দেশে ঐতিহ্যবাহী অনেকগুলো পেশাই আজ বিলুপ্ত হয়েছে কিংবা বিলুপ্তির ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। হিরেন্দ্র হাজংদের সহযোগিতা করার জন্য কেউ কি এগিয়ে আসবে না?