কৃষিতে নারীর স্বীকৃতি চাই

সত্যরঞ্জন সাহা হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার উপর দিয়ে পদ্মা নদী বয়ে যাওয়ার একটি অংশ চর। নদী ভাঙনে এখানকার অধিকাংশ পরিবার ২ থেকে ৫ বার ভাঙনের শিকার হয়ে বাড়ি পরিবর্তন করেছেন। ফলে এখাকার মানুষ এক ধরনের সংগ্রামের মাধ্যমে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন। নিচু এলাকা হওয়ায় বর্ষা ও বন্যার পানিতে পারিবারিক কাজে নারীদের কষ্ট বৃদ্ধি পায়। তাছাড়াও নারীরা পরিবারের কাজের পাশাপাশি চর থেকে রান্নার খড়ি কাইশা, ছন ও বন সংগ্রহ করেন। আয় বর্ধনের জন্য চর থেকে হুগলা সংগ্রহ করে পাটি বুনেন, প্রাণি সম্পদের জন্য ঘাস সংগ্রহ করে থাকেন। চরের নারীরা প্রাণি সম্পদ গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস, মুরগি, কবুতর পালন করে ও কৃষি কাজের সাথে সরাসরি যুক্ত থেকে পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করেন। তাঁরা বসতবাড়িতে শাকসবজি চাষ করে পরিবারে খাবার চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রয় করেন। জমিতে আবাদের সময় কৃষকের পাশে থেকে কাজ করে সহযোগিতা করেন। বারসিক নারীদের আয় বর্ধনে পোশাক তৈরি, প্রাণি সম্পদ পালন প্রশিক্ষণ ও বসতবাড়িতে শাকসবজি চাষে কৃষি বীজবৈচিত্র্য বিনিময় করে সহযোগিতা করে আসছে।

হরিরামপুর আন্ধারমানিক অগ্রগামী কৃষক সংগঠনের সদস্য রেনুবালা বিশ্বাস বলেন, ‘মাঠে বিভিন্ন ধরনের ফসল ফলে। আর ফসল ফলাতে নারীরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করে থাকেন। ফসল সংগ্রহে মাড়াই, পরিষ্কার, রোদে শুকানো, ঘরে তুলার কাজ নারীরা করেন। আমরা নারীরা বীজ সংরক্ষণ করে থাকি। আমরা নারী-পুরুষ সকলে মিলে আবাদ বসতের কথা ভাবি। আমাদের বাড়িতে যাই কিছু করি সবই কৃষিকে কেন্দ্র করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গরু-ছাগল-হাঁস-মুরগি-কবুতর পালন করে বিষ্ঠা বা গোবর সংগ্রহ করি। জৈব সার তৈরি ও মাঠে দিয়ে আবাদ করি। ফলে কৃষিতে উৎপাদন খরচ কমে আসে। আমরা নারীরা কৃষিতে এত পরিশ্রম করেও কৃষক হিসাবে এখনও স্বীকৃতি পাইনি। কৃষিতে আমরা নারীর স্বীকৃতি চাই।’

অন্যদিকে, হরিরামপুর, পাটগ্রাম চরের লেছড়াগঞ্জ চর উন্নয়ন সংগঠনের সভাপতি হাজেরা বেগম বলেন, ‘আমাদের দেশের কৃষি প্রকৃতিনির্ভর। জমিতে ধান, গম, পাইরা, কাউন, তিল, তিশি, ডাল, শাকসবজি, তেল জাতীয় সকল ফসল উৎপাদন করি। অনেক সময় দেখা যায়, জমি চাষ করে শষ্য বীজ ছিটিয়ে বাড়ি আসি, পরে অতি বৃষ্টি বা বর্ষার পানি এসে জমি তলিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। আমরা নারীরা এসকল সমস্যা মাথায় রেখে বীজ সংরক্ষণ করি।’ তিনি আরও বলেস, ফসল একবার নষ্ট হলে আবার যেন জমিতে বীজ বপন করতে পারি সেই সুযোগ রাখি। আমরা আত্মীয়স্বজনের বাড়ি থেকে ভিন্ন ধরনের বীজ সংগ্রহ করে আবাদ করে থাকি। আমরা নারীরা কৃষিবীজ বিনিময়ের মাধ্যমে জাত রক্ষায় উদ্যোগ গ্রহণ করি। এছাড়া আমরা অচাষকৃত খাদ্য সংরক্ষণ ও সংগ্রহ করে খাদ্য নিরাপত্তা রক্ষায় ভূমিকা রাখি।’

সময় এসেছে নারী অধিকার আদায় ও ক্ষমতায়ন এবং নারী বৈষম্য রোধের। নারীদের ক্ষমতায়ন এবং কৃষিতে নারীর স্বীকৃতি প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারিভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

happy wheels 2

Comments