কালোজিরা চাষে কৃষকের মুখে হাসি
সত্যরঞ্জন সাহা হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলা পদ্মার দ্বীপ চরে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। চরের মানুষের প্রধান জীবন-জীবিকা হচ্ছে কৃষি। কৃষিতে নিজস্ব জ্ঞান ও পরিবেশ উপযোগী সম্পদ কাজে লাগিয়ে মাঠ থেকে ফসল উৎপাদন করেন। প্রতিবছর বর্ষায় মাঠে-ঘাটে পানি প্রবাহিত হয়। ফলে ফসলী মাঠে পলি পড়ে। পলি মাটিতে কৃষক চাষ করেন নানান ধরনের বৈচিত্র্যময় ফসল। প্রাকৃতিক দুর্যোগ তথা বন্যার সময় পানিতে ধান ও বাড়ির উঁচু জায়গায় শাকসবজি চাষ করেন। বর্ষার আগে আউশ ধান চাষ করে ফসল গড়ে তুলেন। বন্যার পরবর্তীতে খেসারি, মাসকলই, কালোজিরাসহ বিভিন্ন ধরনের রবি শষ্য চাষ করেন। কৃষকগণ চরটিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষসহ পালন করেন গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, ঘোড়া। উৎপাদিত কৃষি ফসল দিয়ে নিজেদের খাবার চাহিদা মিটিয়ে থাকেন। বীজ রেখে চাষ করেন। চাহিদার অতিরিক্ত ফসল বিক্রয় করেন। চাষাবাদ খরচ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবাদি পশুপালন ও অন্যান্য খাতে ব্যয় করে থাকেন। উৎপাদিত কৃষি পণ্য সংগ্রহে চরের বাহন ঘোড়ার গাড়ি ও নদী পথে ইঞ্জিন চালিত নৌকার ব্যবহার করে থাকে। পদ্মার চরে প্রতিবছর বর্ষা ও বন্যার পানিতে পলি পড়ায় কম খরচে ধান, ডাল, মসলা, তেল, শাকসবজি, গম, পাট, আখ জাতীয় ফল আবাদ হয়। চরাঞ্চলে বিগত সময়ে কালোজিরা কম চাষ করলেও এবছর প্রায় ২০০ জন কৃষক কালিজিরা চাষ করেছেন। কৃষক পর্যায়ে কালোজিরা চাষে উৎপাদন খরচ কম ও দাম ভালো পাওয়ায় চাষে আগ্রহ বাড়ছে।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2022/04/277688080_671017870684725_5237784292057521658_n.jpg)
এই প্রসঙ্গে হরিরামপুর হরিহরদিয়া চরের কৃষক রশিদ মাতুবর বলেন, ‘আমরা চরের মানুষ, কৃষি আমাদের জীবন। এবছর কালোজিরা চাষ করেছি ৩ বিঘা জমিতে। আমি ৯ মণ কালোজিরা পেয়েছি। কালোজিরা বপন করতে ৪ বার জমি চাষ করে বপন করতে হয়। রাসয়নিক সার ও বিষ লাগে না, গোবর সার জমিতে দেওয়া থাকলে ফলন ভালো হয়। কার্তিক মাসে জমিতে কালিজিরা বপন করি। চৈত্র্য মাসে মাঠ থেকে কালিজিরা সংগ্রহ করি। বাজারে ভালো দাম পাচ্ছি। তাই বেশ ভালো লাগে।’
হরিরামপুর হরিহরদিয়া কৃষক চায়না বেগম বলেন, ‘এবার হঠাৎ অগ্রহায়ণ মাসের অতিবৃষ্টিতে রবি মৌসুমের ফসল নষ্ট হয়েগেছে। কারো মাঠে বীজ বপন করার পর পানিতে তলিয়ে গেছে। আবার কারো ফসলের ছোট ছোট গাছ একটানা ২ দিন বৃষ্টিতে মাটিতে শুয়ে পড়ে। প্রচুর বৃষ্টিতে মাঠের ফসল পানির নিচে চলে যায়। তবে আমার ঘরের কালোজিরা বীজ বপন করেছি। বাড়ির গোবর সার দিয়েছি আবাদ করেছি। ৩০ শতক জমিতে ১০০ কেজি কালোজিরা হয়েছে।’
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2022/04/277886416_2319392628201867_4319808969732414890_n.jpg)
অন্যদিকে হরিরামপুরের বাহিরচর গ্রামের কৃষক পিপাসা মনিদাস বলেন, ‘আমাদের মাঠগুলো নিচু। বর্ষা ও বন্যার পানিতে কৃষির ক্ষতি হয়। আবার শুষ্ক মৌসুমে অগ্রহায়ণ মাসের অতিবৃষ্টিতে কৃষকের ফসল একে বারে নষ্ট হয়। এবছর তিন বিঘা (৯০ শতক) জমিতে কালো জিরা চাষ করেছিলাম। কিন্তু অগ্রহায়ণ মাসের অতিবৃষ্টিতে ৬০ শতাংশ জমির কালোজিরা একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। পরে এই জমিতে পেঁয়াজ রোপন করেছি। আর বাকি এক বিঘা (৩০ শতক) জমিতে ৪০ কেজি কালোজিরা হয়েছে।’ কালোজিরা চাষ করে কৃষকেরা ভালো দামও পেয়েছেন বলে জানান। ফলে আগামীতেও এ শস্য চাষ করবেন।