অসুস্থ বাঘ বিধবা ফিরোজা বেগমকে বাঁচাতে তরুণদের উদ্যোগ
সাতক্ষীরা থেকে মননজয় মন্ডল
সুন্দরবন স্টুডেন্টস সলিডারিটি টিম উপকূলীয় অঞ্চলের একটি বহুল পরিচিত যুব সংগঠন। শ্যামনগর এলাকার একদল যুব শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা টিমটি সমাজ ও সংস্কৃতিকে নানা ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ করে চলেছে। সমাজের জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে অসহায় শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোসহ অবহেলিত নারী, পুরুষ, শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ সকলকে সাথে নিয়ে বৈচিত্র্যময় সুখী সমৃদ্ধশীল সমাজ বিনির্মাণের জন্য প্রতিনিয়ত লড়াই করে চলেছে। কখনো রক্ত দান, কখনো, বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ সহযোগিতা, কখনো মানববন্ধন, কখন সংবাদ সম্মেলন কখনোবা রাস্তায় দাঁড়িয়ে অসহায়ের জন্য টাকা সংগ্রহ, কখনো আবার নিজের মোবাইল খরচ কিংবা টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে অসহায়কে সহযোগিতা এসব যেন তাদের নেশাতে পরিণত হয়েছে। সমাজের নানা ধরনের অসঙ্গতীকে দুরীভূত করতে টিম সদস্যদের রয়েছে নানা ধরনের উদ্যোগ। আর এমনি এক মানবিক উদ্যোগ হাতে নিল সুন্দরবন স্টুডেন্টস সলিডারিটি টিমের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিটের তরুণ সদস্যবৃন্দ।
শ্যামগনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের সুন্দরবনের পাদদেশের একটি ছোট গ্রাম কুলতলী। এখানেই স্বামী ও চার সন্তানকে নিয়ে কোন রকমে চলছিল ফিরোজা বেগমের সংসার। দুই মেয়েকে বিয়ে কিছুটা স্বস্তির নিঃস্বাস ফেললেও ভাগ্য বিধাতা তার সহায় ছিলো না। আজ থেকে দেড় বছর আগে ফিরোজা বেগমের স্বামী বনজীবী ইমান আলী সরদার সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে নিহত হন। এরপর ভেঙে পড়েন ফিরোজা বেগম। এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে জীবনযুদ্ধের সৈনিক হয়ে হাল ধরলেও দুরারোগ্য ব্যাধি তার পিছু ছাড়েনি। তার দু’টি কিডনি আংশিক অকেজো হয়ে পড়ে। ফিরোজা বেগম আবার চন্ডিপুরের তার দরিদ্র ভাইদের কাছে আশ্রয় নিলেও চিকিৎসার অর্থ অভাব দেখা দেয়। এক পর্যায়ে সুন্দরবন স্টুডেন্টস সলিডারিটি টিমের কাছে বিষয়টি ধরা পড়ে। মানবিকতার জন্যই টিমের সদস্যবৃন্দ ফিরোজা বেগমকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। উল্লেখ্য, বাঘ বিধবা হিসেবে সরকারি অনুদান থেকে বঞ্চিত হয়েও স্থানীয় মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটি ভিজিডি কার্ড সহযোগিতা পেয়েছেন ফিরোজা বেগমের পরিবার।
মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য, আসুন আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে আসি, আসুন বাঘ বিধবা ফিরোজা বেগমকে বাঁচাই এমন সব আবেদনমূলক ধারাবাহিক বক্তব্য এর মাধ্যমে সুন্দরবন স্টুডেন্টস সলিডারিটি টিমের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিটের এক ঝাক তরুণ মাইক ও ব্যানার নিয়ে অর্থ সংগ্রহের জন্য মুন্সিগঞ্জ বাজারে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে পড়ে। সমাজের সকল স্তরের জনমানুষের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করতে থাকে। এসময় স্থানীয় প্রশাসন, বাজার কমিটি, বিজিবির সদস্য, ছাত্র, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, শ্রমিকসহ সকল পেশাজীবী মানুষ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। দিনভর সংগ্রহের শেষে আট হাজার তিন শত টাকা (৮,৩০০) যোগাড় হয়। অসুস্থ ফিরোজা বেগমের হাতে ইউনিটের সদস্যবৃন্দ, স্থানীয় ইউপি সদস্য জি এম গোলাম মোস্তফা, বাজার কমিটির সভাপতি ও বারসিক কর্মকর্তা সংগৃহীত টাকা তুলে দেন। ফিরোজা বেগমকে বাঁচাতে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে সহযোগিতা করার আহবান জানানো হয়। টিমের সদস্যবৃন্দ ধারাবাহিকভাবে স্থানীয় বিভিন্ন বাজার সংগ্রসহ সমাজের সকল বিত্তবান মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে ফিরোজা বেগমের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
নিজেদের পড়ালেখার পাশাপাশি সুন্দরবন স্টুডেন্টস সলিডারিটি টিম সমাজ উন্নয়ন তথা মানবিক উদ্যোগ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে একটি বৈচিত্র্যময় ও শ্রদ্ধাশীল সমাজ প্রতিষ্ঠা পাবে এমনটিই তারা প্রত্যাশা করেন।