গৃহস্থালির পচনশীল বর্জ্য থেকে তৈরি হবে জৈব সার

ঢাকা থেকে ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল
গৃহস্থালির পচনশীল বর্জ্য দিয়ে সার তৈরি করে ঢাকার বস্তিবাসীরা হতে পারেন স্বাবলম্বী। গতকাল হাজারীবাগের বউ বাজার এলাকার ঢাকা কলিং প্রকল্পের উদ্যোগে বারসিকের আয়োজনে এক অনুষ্ঠানে আলোচকরা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
হাজারীবাগের বউ বাজার এলাকায় সিবিও নেতা মো: হারুন অর রশিদ এর সভাপতিত্বে গৃহস্থালির পচনশীল বর্জ্য থেকে সার তৈরি কর্মসূচির উদ্বোধন করেন লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আকমল হোসেন। এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট কৃষিবিদ ও বারসিক’র পরিচালক মো: এ বি এম তৌহিদুল আলম, বারসিকের প্রজেক্ট ম্যানেজার ফেরদৌস আহমেদ, কৃষক নেতা আলমগীর হোসেন, ফাতেমা আক্তার, আনোয়ার হোসেন, ইয়ুথ লিডার হেনা আক্তার রূপা, সাবিনা নাঈম, কামরুন নাহার প্রমূখ।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধক অধ্যক্ষ আকমল হোসেন বলেন, ময়লা আবর্জনাকে কাজে লাগাতে পারলে এটা আমাদের সমাজের সর্বস্তরে একটি কার্যকর প্রভাব ফেলতে পারে। ঢাকা শহরে প্রায় ৫০ লক্ষ বস্তিবাসী আর প্রায় ২ কোটি মানুষের বসবাস। তারা যে পরিমাণ বর্জ্য (পচনশীল) প্রতিদিন তৈরি করে তার সঠিক ব্যবহার করতে পারলে সার, গ্যাস ও বিদ্যুতের উপর চাপ অনেকাংশে কমে যেত। বর্তমান সময়ে যে পরিমাণ লোডশেডিং হচ্ছে তা এই বর্জ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট তৈরি করে মোচন করা সম্ভব ছিলো।’ তিনি আরও বলেন, বস্তিবাসীদের কাজে লাগাতে পারলে ঢাকা শহর পাল্টে যাবে।
প্রধান অতিথি বিশিষ্ট কৃষিবিদ এবিএম তৌহিদুল আলম বলেন, আপনারা চেষ্টা করলেই পচনশীল নানান বর্জ্য দিয়ে সার তৈরি করতে পারেন। আমরা অনেককে প্রশিক্ষণ দিয়েছি তারাও বিষয়গুলো জানেন। আপনারা যদি জৈব সার তৈরি করে তা বিক্রি করার ব্যবস্থা করতে পারেন সেটা হবে একটা অসাধারণ কাজ। আজকে আমরা এখানে উপস্থিত হয়েছে এজন্য যে আপনারা বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করার কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
কর্মসূচীর শুরুতে প্রচন্ড বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল থেকে কমিউনিটির বিভিন্ন ঘর থেকে পচনশীল গৃহস্থালির বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কাজগুলো করছে হাজারীবাগের বস্তিবাসীদের প্রতিনিধিরা। এসময় ময়লা আবর্জনাকে তারা খুব ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখলেও এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে কারণ তারা বুঝতে সক্ষম হয়েছেন যে গৃহস্থালির পচনশীল বর্জ্য দিয়ে সার তৈরি করা যায় এবং এই সার বিক্রি করে অর্থ উপার্জনও করা যায়। ময়লা এখন কেবল দুর্গন্ধ ছড়ায় না, বর্জ্য সম্পদও সৃষ্টি করতে পারে।

ইয়ুথ সদস্য হেনা আক্তার রূপা বলেন, ‘বস্তি মানেই সবার কাছে দুর্গন্ধ আর বসবাসের অযোগ্য জায়গা কিন্তু পৃথিবীর অনেক জায়গায় মানুষ বস্তির মানে পাল্টে দিয়েছে। বস্তির তরুণ যুবরা নানান ধরনের পরিবেশ রক্ষার কাজে নিজেদের প্রমাণ দিচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে হারুন অর রশিদ বলেন, আজকে এখানে যারা উপস্থিত হয়েছেন তারা সকলেই ভালো কিছু করতে চায়। আমরাও বস্তির মানুষেরা একটি এমন মডেল তৈরি করতে চাই যেটা কেবল ঢাকা শহরেই না সারা দেশের নি¤œ আয়ের মানুষদের জন্য একটি অনুকরণীয় কাজ হতে পারে।’


জৈব সার তৈরির উদ্বোধনীতে একটি ড্রামে নানান ধরনের পচনশীল বর্জ্য দিয়ে পূর্ণ করা হয় এবং আরও দুটি ড্রামে কমিউনিটির মানুষেরা নিয়মিত বর্জ্য ফেলা শুরু করেন। আগামী চার মাসব্যাপী এই কর্মকান্ডটি ধারাবাহিকভাবে পরিচালিত হবে এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন অঞ্চলে তা ছড়িয়ে দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয় সভা থেকে। এই সারকে বাজারজাত করারও একটি পরিকল্পনা রয়েছে ঢাকা কলিং প্রকল্পের উদ্যোগে যেখানে কমিউনিটির সদস্যরাই প্রধান ভূমিকা পালন করবেন।

উক্ত অনুষ্ঠানটি ইউএস এইড এর অর্থায়নে এবং কাউন্টার পার্ট ইন্টারন্যাশনাল এর কারিগরি সহযোগীতায় ‘ঢাকাকলিং’ কনসোর্টিয়াম প্রকল্পের আওতায় অনুষ্ঠিত হয় যা ডিএসকে, বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাসনলেজ (বারসিক), কোয়ালিশন ফর দ্যা আরবান পুওর (কাপ) এবং ইনসাইট্স এর মাধ্যমে জানুয়ারি ২০২১- ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত চলবে।

happy wheels 2

Comments