‘আমরা চাই একটা পরিচ্ছন্ন জীবন’

‘আমরা চাই একটা পরিচ্ছন্ন জীবন’

ঢাকা থেকে হেনা আক্তার রুপা
রূপালী বেগমের বয়স ৩৪। কিন্তু এ বয়সের তুলনায় তাঁর কাজের ভার অনেক বেশি। তার স্বামী মুক্তার আলীসহ তিনি প্রায় ২০ বছর ঢাকা শহরে বসবাস করেন। দুজনেই পেশায় পরিচ্ছন্নতা কর্মী। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয়ে যায়। সংসার জীবনে তাদের চার সন্তান (২ ছেলে ২ মেয়ে)। রুপালী বেগম জানান, পেশাগত জায়গায় তাদর খুবই কষ্ট হয়। সকাল থেকে তাদের প্রাত্যহিক কাজ শুরু হয়। কাজ শেষ হয় সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত। প্রতিদিনই তাঁরা শাহজাহান স্যার রোড থেকে বালুরমাঠ আগ্রহী স্কুল পর্যন্ত ময়লা সংগ্রহ করতে হয়। প্রতিটি বাড়িতই ময়লা সংগ্রহ করে করতে হয়। সংগৃহীত ময়লা নিয়ে তাঁরা যান সেকেন্ডারী স্টেশনে যেখানে সিরিয়াল দিয়ে ময়লা জমা দিতে হয় তাদের। সব কাজ সেরে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যেতো। বাড়িতে বৃদ্ধ মা সন্তানদের কোনরকম দেখভাল করেন।

পরিচ্ছনতা কর্মী হিসেবে তাদের আয় খুব বেশি নয়; মাসে সাড়ে চার হাজার থেকে নয় হাজার টাকা। এ আয় দিয়ে ভালো কোন বাসায় থাকার মতো রুপালীদের সার্মথ্য নেই। তাই তাঁরা থাকেন বস্তির ছ্ট্টো বেড়ার ঘর যেখনে নেই গ্যাস ও অন্যান্য সুবিধা। পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে কাজ করলেও তাঁরা থাকেন খুবই অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে! একটা ঝুকিপূর্ণ কাজে তাদের প্রতিদিন সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয়। গত মাসে হঠাৎ করে ময়লা সংগ্রহ করতে গিয়ে তার স্বামীর কাঁচে পা কেটে যায়। কয়েকদিন কাজে যেতে পারেননি। এ কারণে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তও হন।

রূপালী বেগমরা যখন কাজ করেন কোন ধরনের সুরক্ষা সামগ্রী তারা ব্যবহার করে না। এক্ষেত্রে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকি ও হুমকির মধ্যে দিয়েই তাদের প্রতিদিনকার জীবন অতিবাহিত হয়। রূপালী বেগম বলেন, ‘আমরা খুব কষ্ট কইরা ময়লা টানি কিন্তু আমাদের জীবনের কষ্টের কোন শেষ নাই। আমাদের দিকে সরকারের বিশেষ নজর দেয়া দরকার। আমরা এতো ঝুঁকি নিয়ে কাজ করি কিন্তু আমাদের সংসার চলেনা, অসুস্থ থাকি। আমরা চাই একটা পরিচ্ছন্ন জীবন।’


রূপালী আরও বেগম বলেন, ‘ঢাকা কলিং প্রকল্প আমাদের অনেক জায়গায় পরিবর্তন এনেছে। পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে আমি এখন মানুষকে সচেতন করার কাজ করি। আমার খুব ভালো লাগে। এখন মানুষকে এগুলো বুঝাতে।’

happy wheels 2

Comments