নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে এগিয়ে যাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ

রাজশাহী থেকে তহুরা খাতুন লিলি
খাদ্য গ্রহণের দুটি প্রধান উদ্দেশ্য রয়েছে। এক আমাদের ক্ষুধা নিবৃত্ত করা এবং দুই দেহের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির সরবরাহ নিশ্চিত করা। অর্থাৎ সুস্থ ও সবল দেহের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান গ্রহণের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান নিশ্চিত করা খাদ্য গ্রহণের অন্যতম লক্ষ্য। খাদ্য হিসেবে সবজির ব্যবহার আমাদের ছয়টি খাদ্য উপাদানের মধ্যে মূল্যবান দুটি উপাদান ভিটামিন ও খনিজ লবণ সরবরাহ করে থাকে। পরিমাণে কম লাগলেও দেহের নানারকম জৈবিক কাজ পরিচালনা, দেহের বৃদ্ধি ও বিকাশ এবং বুদ্ধি বিকাশে এ দুটি উপাদান অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রঙিন শাকসবজিতে রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট, তাছাড়া সবজির খাদ্য আঁশও দেহের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দেহের ওজনের সাথে মিল রেখে খাদ্যে প্রয়োজনীয় পরিমাণ সবজি গ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে নানা রকম সবজি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করার প্রয়োজন রয়েছে। আর সেজন্য প্রয়োজন রয়েছে সারাবছর ধরে বৈচিত্র্যময় সব সবজি উৎপাদন নিশ্চিত করা। সবজি উৎপাদন পরিকল্পনা ও এর বাস্তবায়ন একদিকে যেমন আমাদের পুষ্টি নিরাপত্তা বিধানে ভূমিকা রাখতে পারে অন্যদিকে তা আমাদের দারিদ্র্য দূরীকরণেও সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।

নিম্ন আয়ের মানুষের সবজি চাষ
বড় উর্বর আমাদের মাটি। সুস্থ ও সবল বীজ আর একটুখানি যতœ পেলে এদেশের প্রায় সব ধরনের মাটিতেই নানারকম সবজি ফলানো যায়। আমরা সবজি চাষের ব্যবহার করছি দেশের মাত্র শতকরা ৯.৩৮ ভাগ জমি আর এতে আমাদের মাথাপিছু সবজি সরবরাহ নিশ্চিত করা যাচ্ছে মাত্র ৭০ গ্রাম। যদিও একজন সুস্থ ও সবল মানুষের জন্য প্রতিদিন ২২০ গ্রাম সবজি গ্রহণ করা প্রয়োজন। সবজির এ বিশাল ঘাটতি পূরণ করতে হলে আমাদের সবজির চাষ বাড়াতে হবে এবং বছরব্যাপী কী কী ধরনের সবজি কখন লাগানো যায় সেটি জানতে হবে। জানতে হবে সবজি চাষের নিয়মকানুন আর নিশ্চিত করতে হবে সবজি চাষের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রাপ্তিও। তবে নিজের বসতবাড়ির প্রতি ইঞ্চি মাটির ব্যবহারও যদি সঠিকভাবে করা হয় তাহলেও নিজেদের চাহিদা কিছুটা নিজেরাই পূরণ করতে পারবে।


রাজশাহী শহরে অবস্থিত ছোট ্একটি বস্তির মধ্যে রয়েছে নামোভদ্রা বস্তি। এখানে ১১১টি পরিবার রয়েছে এবং ৩০০ জন মানুষের বাস। এখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এসে বসবাস করছেন। তবে নীলফামারীর মানুষ রয়েছে শতকরা ৪০%। সেখানে সবজি চাষ ২০১৮ সালের দিকে তেমন ছিলোনা। তবে সজিনা গাছ ছিলো ৪০টি। তখন অন্য তেমন সবজি ছিলোনা, দুই একটি বাড়িতে পুই গাছ ও শিম গাছ দেখা যেত। ২০১৮ সালের পর বারসিক’র সহযোগিতায় সবজি চাষ সম্পর্কে নানা বিষয় নিয়ে নামোভদ্রা বস্তিতে সভা করা হয়। সবজি চাষ নিয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়। নিজের সামান্য জায়গা ব্যবহার করে কিভাবে অনেক রকম ফসল ফলানো যায়, পুষ্টি, খাদ্য নিরাপত্ত নিয়ে তা আলোচনা করেন বারসিক’র কর্মকর্তারা। কিভাবে ফসল থেকে বীজ সংরক্ষণ করে পরে তা আবার ফলানো যায় তার দিক নির্দেশনা পান বস্তির মানুষ। তারা মনেই করতেন আগে ছোট জায়গায় আর কি বা ফলানো যায়।


এখন অনেকেই সামান্য জমি ব্যবহার করে অনেক সবজি উৎপাদন করছেন। তেমনই এক উদাহরণ বস্তির ওবিয়া বেগম (৩৩)। চার ছেলে মেয়ে তাঁর। চায়ের দোকানে চা বিক্রি করে বস্তির মধ্যে সংসার কোনো মতে চলে যায়। স্বামী দোকানে থাকেন। এক ছেলে ও এক মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। আর এক ছেলে দশম শ্রেণীর ছাত্র ও একজন ৭ম শ্রেণীর। ওবিয়া বেগম সবজি তার ছোট জায়গায় লাউ, পেঁপে, পুই, শিম, বেগুন, মরিচ, করলা, টমেটো চাষ করছেন। এতে তাদের সবজির চাহিদা পূরণ হয় এবং বাড়তি সবজি বাজারে বিক্রি করে কিছু আয়ও করতে পারেন।
কাজলী (২৫) বেগমও সবজি চাষ করেন। তাঁর স্বামী ভ্যান চালান। তাদের একজন ২ বছরের ছেলে রয়েছে। তিনি তাঁর বাসায় পুঁই, মরিচ, লাউ চাষ করেন। কাজলী বেগম বলেন, ‘ছোট জায়গায় এভাবে কিছু হবে ভাবিনি। আর এসব অতো বুঝতাম না। বারসিক থেকে অনেক পরামর্শ ও বীজ পেয়ে আগ্রহ বাাড়ে। সেই থেকেই আগ্রহ নিয়েই লাগাই, বীজও কিনা লাগেনা, সংরক্ষণ করি। বাসার সবজিগুলোও আলাদা টাকা দিয়ে কেনা লাগেনা, আবার বিষমুক্ত সবজি পাই।”
উল্লেখ্য যে, নামোভদ্রায় ১১১টি পরিবারের মধ্যে প্রায় ৭০টি পরিবারর মানুষ এখন সবজি চাষ করেন।

happy wheels 2

Comments