ভালোবাসা জেনো প্রিয় বাবা
ঢাকা থেকে মো. জাহাঙ্গীর আলম
মা দবিস পালনের নিয়মটা মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আস্তে আস্তে বাবা দিবস পালনের রীতিটা আমরেকিায় চালু হতে থাক। সেখান থেকেই আস্তে আস্তে এই দিবস পালনের রীতি অন্যান্য দেশেও চালু হয়। এই বাবা দিবসকে প্রতিষ্ঠার জন্য যাকে সবচে’ বেশি কৃতিত্ব দেওয়া যায়ি, তিনি হেলেন সোনোরা ডড। তাঁর পুরো নাম সোনোরা লুইস র্স্মাট ডড। ১৬ বছর বয়সে সোনোরা তাঁর মাকে হারান। ষষ্ঠ সন্তান জন্ম দওেয়ার সময় অঘটনটি ঘটে। সোনোরাই ছিলেন সবার বড় এবং সন্তানদেরমধ্যে একমাত্র মেয়ে। প্রথমদিকে সোনোরা ও তাঁর বাবা মিলে বাকি পাঁচ ভাইকে মানুষ করতে থাকেন। ১৯০৯ সালে একদিন গির্জায় প্রার্থনার সময় মা দিবসের ওপর বক্তৃতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সোনোরা গির্জার যাজকের কাছে বলেন , মায়েদের মতো বাবাদেরও একইভাবে সম্মান দেখানো উচিত। মা দিবসের মতো বাবা দিবস পালনের জন্য উদ্যোগ নেওয়া দরকার। যাজক অনেক চিন্তাভাবনা করে দেখলেন, কথাটার যুক্তি আছে বটে এবং তিনি এ বিষয়ে কিছু একটা করতে রাজি হন। সেভাবেই ১৯ জুন ১৯১০ সালে আমরেকিার ওয়াশংটন স্টেটের স্পোকেন শহররে ওয়াইএমসএি ভবনে বাবা দিবস উদ্যপনের গোড়াপত্তন।
১৮ জুন বিশ্ব বাবা দিবস পালন করা হলো বিশ্বব্যাপী। তৃতীয় রোরবার হিসেবে এই বছর উদযাপিত হলো বাবা দিবস। বাবার প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা জানানোর জন্যই এ দিবস। যদিও বাবার প্রতি সন্তানের চিরন্তন ভালোবাসার প্রকাশ প্রতদিনিই ঘট। তারপরও পৃথিবীর মানুষ বছররে একটা দিনকে বাবার জন্য রেখে দিতে চায়। যেমনটা মায়ের জন্য মা দিবস আছ। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও শ্রাবন্তী মজুমদাররে গাওয়া গান “কাটে না সময় যখন আর কিছুতে/বন্ধুর টেলিফোনে মন বসে না/জানলার গ্রিলটাতে ঠেকাই মাথা/মনে হয় বাবার মতো কেউ বলে না/আয় খুকু আয়, আয় খুকু আয়। এই গান সকল দেশের সকল সন্তানকে বাবার প্রতি অসীম নস্টালজয়িায় ডুবিয়ে দেয়।
বাবা এমনই একটি সম্পর্কের নাম যার সাথে অন্য সম্পর্ক কখনও মেলানো বা তুলনা করা যায় না। শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর যে শব্দগুলাে সবার আগে তার মুখ থকেে বেরিয়ে আসে তার অন্যতম হচ্ছে বাবা। এ যেন সন্তানের কাছে চিরন্তন আস্থার প্রতীক। কােনাে শিশু যখন এই শব্দ উচ্চারণ করতে শিখে তখন বাবার মন পুলকে ভরে যায়। বাবা বলে ডাকতে পারাতে বাবার হাস্যােজ্জ্বল অনুভূতি যেন সেই অবুঝ শিশুর হৃদয়কে মুর্হূতইে আন্দােলিত করে তুলে। মা-এর মতো বাবাও ছোট্ট একটি শব্দ, অথচ এর ব্যাপকতা বিশাল। ডাকটার মাঝেই লুকিয়ে থাকে কী গভীর ভালোবাসা, নিরাপত্তা, নির্ভনরতা । সন্তানের জন্য বাবা যে দায়িত্ব নেন, সেই দায়িত্ব পালনের প্রতি বাবার যে নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও ভালোবাসা তা বিশ্লেষণ করতে পারলে এই পৃথিবীর কেউই বাবা-মায়ের প্রতি দায়িত্বহীন হতে পারতো না। কারণ বাবা হওয়ার মধ্য দিয়ে একজন মানুষ সত্যিকার অর্থে দায়িত্ববান হওয়ার পথটির সাথে পরিচিত হন এবং সন্তানের সাথে বাবার এক মায়াবী সম্পর্ক তৈরি হয়। এই কারণেই বাবার কাছে পৃথিবীর সকল সন্তান সকল আবদার বিনা চিন্তায়, বিনা বাধায় পেশ করেন এবং বাবাও তার সমস্ত সাধ্য দিয়ে চেষ্টা করেন সন্তানের চাহিদা পূরণ করার। বাবা ও সন্তানের সম্পর্ক কতটা গভীর, কতটা আন্তরিক, কতটা বিশ্বস্ত, কতটা মায়াবী, কতটা জটিল তা ভাষা দিয়ে প্রকাশ করা কঠিন। এটা শুধু অনুভব করার করা যায়। প্রকৃতির প্রতিটি প্রাণীই তার সৃষ্টিকে সবচাইতে বেশি ভালোবাসে এবং মানুষও তার ব্যতিক্রম নয়।
সৃষ্টির এই গভীর রহস্যের একটি দৃষ্টান্ত হলো পিতা-মাতা ও সন্তানের ত্রিমাত্রিক সম্পর্ক। এই সম্পর্কের কারণেই মায়ের পাশাপাশি বাবাও তার সন্তানদের প্রকৃত মানুষ করার জন্য অমানুষিক পরিশ্রম করেন, তার অর্জিত সম্পদ সন্তানের কল্যাণের জন্য ব্যয় করেন, যাতে তার সন্তান ভালো মানুষ হতে পারে এবং ভালো থাকতে পারেন। যে বাবা এত কাছের, এত ভালোবাসার, এত বিশ্বস্ত, এত ভরসারস্থল সেই বাবাদের অবদান আমরা ভুলি কি করে। এই সব বাবাদের মধ্যে যে সব বাবারা প্রবীণ বয়সে সন্তানের কাছাকাছি থাকার প্রবল প্রত্যাশা থাকার পরও থাকার সুযোগ পারছেন না বা সন্তানেরা তাদের ব্যবস্ততা ও সমস্যার কারণ দেখিয়ে তাদের কাছে রাখছেন না এমনকি অনেক সন্তান বাবাদের খোঁজও রাখেন না, আমি বাবা দিবসের আয়োজনে সেই সব বাবাদের প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। কারণ আপনারাই আমাদের সকল আবদার মিটিয়েছেন, ভালো থাকার পরিবেশ তৈরি করে রেখেছেন কিন্তু আমরা সন্তানেরা আপনাদের প্রত্যাশার প্রতিদান দিতে ব্যর্থ হয়েছি। একইভাবে বিশ্ব বাবা দিবসের আয়োজনে সব সন্তানের প্রতি বিনীত অনুরোধ রাখছি আসুন আমরা সকলে আমাদের বাবাদের অবদানকে স্মরণ করে তাদের ভালোবাসা ও অবদানের নূন্যতম প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করি। বাবা দিবসের আয়োজনে আমাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হোক বাবা আমরা তোমাকে ভালোবাসি। যে দায়ত্বি নিয়ে তুমি আমাদের মানুষ করে তুলছো, আমরা তা ভুলিনি, ভুলব না কোনোদিন। আমাদের জীবনযুদ্ধের সেনাপতি তুমি।