সাম্প্রতিক পোস্ট

আমি ফুটবলার হতে চাই

মানিকগঞ্জ রাশেদা আক্তার

‘আমার স্বপ্ন আমি একদিন জাতীয় দলে ফুটবল খেলবো। সবাই আমাকে চিনবে।’ এভাবেই নিজের স্বপ্নের কথা বলছিল কিশোরী খাদিজা আক্তার। মানিকগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম পূর্ব মকিমপুর। সেই গ্রামের একটি কৃষক পরিবারে খাদিজার জন্ম। খাদিজার বয়স ১৬ বছর। মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে খাদিজা মেজো।

ফুটবল খেলার সূচনা
বাসুদেরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে ১১ বছর বয়সে খাদিজা ফুটবল খেলতে শুরু করে। প্রথম ম্যাচ খেলে রাজীবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাথে এবং বিজয়ী হয়। এটা ২০১৬ সালের ঘটনা। এরপর থেকে থেমে নেই খাদিজা। ৫ম শ্রেণিতেই মকিমপুর, হাজিনগর, বিকেজি, বারাহিরচর, বেতিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাথে ম্যাচ খেলে।

ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা
খাদিজা বলে, ‘৫ম শ্রেণিতে পড়ার সময় একদিন আসাদ স্যার স্কুলের মাঠে ফুটবল প্র্যাক্টিস করাচ্ছিলেন। সেই সময় পরিচয় হয় বারসিক কর্মীর সাথে। বারসিক’র সহযোগিতায় আমরা যারা ফুটবল খেলি তারা ১৫ জন মিলে প্রত্যয় কিশোরী সংগঠন নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলি। আমার সভাপতিত্বে সবাই মিলে ফুটবল টিম গঠন করি। বিভিন্ন স্কুলে ফুটবল খেলে যখন বিজয়ী হই খুব ভালো লাগে। উৎসাহ বেড়ে যায়। তখন থেকে ফুটবলকে ভালোবেসে ফেলি। যেখানেই সুযোগ পাই ফুটবল খেতে যাই।’

সমাজের প্রতিবন্ধকতা ও খাদিজার দৃঢ় প্রত্যয়
প্রত্যন্ত গ্রামে খাদিজার বসবাস। গ্রামের একটি মেয়ে ফুটবল খেলে এটা কোনোভাবেই আশেপাশের বা সমাজের লোকজন ভালোভাবে দেখেনা। প্রতিদিন নানাজনের নানা কটু কথা শুনতে হয় তাকে। অনেকেই বলেন ‘হয়েছে তো মেয়ে সে আবার খেলবে ফুটবল। মেয়েদের এত লাফালাফি করা ঠিক না। কোন দিন হাত-পা ভেঙ্গে ঘরে বসে থাকবে। মেয়ে ফুটবল খেললে তাকে কোনোদিন বিয়ে দিতে হবেনা। ঘরের খুঁটি করে রেখে দিতে হবে।’ তবে খাদিজার বাবা এবং বড় ভাই তাকে উৎসাহ প্রদান করেছেন প্রতিনিয়ত। দূরে কোথাও খেলা হলে তারা সাথে করে নিয়ে গেছেন। প্রেরণা দিয়েছেন। সমাজের কুসংস্কার ও বাধাকে তোয়াক্কা না করে ফুটবলকে ভালোবেসে খাদিজা এগিয়ে চলে তার স্বপ্ন পূরণের পথে। খাদিজা বলে, ‘ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ফাইনাল পরীক্ষার আগে ২০১৭ সালে আমার বাবা ও বড় ভাইয়ের প্রেরণায় এবং বারসিক’র সহযোগিতায় মানিকগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থায় যুক্ত হই। শুরু হয় ফুটবল নিয়ে আমার স্বপ্ন পূরণের যাত্রা। জেলা ক্রীড়া সংস্থায় যুক্ত হয়ে খোকন স্যারের অধীনে নিয়মিত প্র্যাক্টিস শুরু করি। ক্রীড়া সংস্থা থেকে জেলা পর্যায় বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা অনুর্ধ্ব ১৪ ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলতে যাই বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। এরপর রাজশাহী, ঠাকুরগাঁও, রাজবাড়ী, ফরিদপুর খেলতে যাই। ১১ বছর বয়সে প্রথম ফুটবল খেলা শুরু করি। এখন আমার বয়স ১৭ বছর। এ পর্যন্ত আমি মোট ২০টি ম্যাচ খেলেছি। তারমধ্যে ২টি ম্যাচে হেরেছি। বাকি ১৮ টি ম্যাচে আমরা জয়লাভ করেছি।’

ফুটবল নিয়ে তাঁর স্বপ্ন
‘ফুটবল আমার ভলোবাসা। আমি স্বপ্নেও ফুটবল খেলি। ফুটবল জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। মহামারী করোনার কারণে প্রায় একবছর ক্রীড়া সংস্থায় নিয়মিত যোগাযোগ ও প্র্যাক্টিস করতে পারিনি। অক্টোবর ২০২১ থেকে আবার নিয়মিত প্র্যাক্টিস শুরু করেছি মামুন স্যারের অধীনে। আমার স্বপ্ন আমি একদিন বড় কোনো ক্লাবের হয় জাতীয় দলে খেলবো। মেয়েরাও যে কোনো অংশে কম নয়। সুযোগ দিলে গ্রামের মেয়েরাও যে সবকিছু করতে পারে আমি তার উদাহরণ সৃষ্টি করতে চাই। যাতে সমাজের অন্য বাবা-মায়েরা তাদের মেয়েদের সমান সুযোগ দেয়। মেয়েদের সামনে চলার পথে সহযোগিতা করে এটাই আমার প্রত্যাশা।’

happy wheels 2

Comments