ধলেশ্বরী নদীকে রক্ষা করুন

মানিকগঞ্জ থেকে নজরুল ইসলাম

’কুল নাই কিনার নাই-এপার ভাঙে ওপার গড়ে’ এই তো নদীর খেলা। নদী তার আপন গতিতে স্বমহিমায় চলবে, প্রকৃতিগতভাবেই তার মধ্যে নানা বৈচিত্র্য দেখা দিবে এটিই স্বাভাবিক। Nazমানুষ যখন প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, নদীকে শাসন করতে চায়, তখনই শুরু হয় দ্বন্দ¦, সংঘাত ও দুষণ। এর করুণ পরিণতি শিকার হতে হয় কয়েক মানুষকে।
রাজধানী ঢাকা বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত এবং তিনটি নদী দ্বারা চারদিক আচ্ছাদিত। অন্যদিকে রাজধানীর সন্নিকটে মানিকগঞ্জ ধলেশ্বরী নদীর তীরে অবস্থিত। করুণ ও রুগ্ন ধলেশ্বরী নদী আজ মৃতপ্রায়। ফলশ্রুতিতে নতুন প্রজন্মের কাছে ধলেশ্বরী নদীটি আজ কেবলমাত্র কাগজে কলমে রয়েছে অস্তিত্বমান রয়েছে; বাস্তবে এই নদীর চিত্র এতটাই রুগ্ন যে, বুঝার উপায় নেই যে, এই নদীটি একসময় পরাক্রমশীল ছিলো। এই নদীকে দখল, দূষণমুক্ত এবং রক্ষা করার প্রত্যয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন মানিকগঞ্জ ধলেশ্বরী নদী বাঁচাও আন্দোলন ও বারসিক।

বারসিক ও ধলেশ্বরী নদী বাঁচাও আন্দোলনের গবেষণা মতে, মৃতপ্রায় ধলেশ্বরীকে প্রাথমিকভাবে বাঁচাতে হলে এবং এই অঞ্চলের কৃষি প্রতিবেশকে রক্ষা করতে হলে তিল্লির মুখ খনন করা অতিব জরুরি। গবেষণায় দেখা যায়, তিল্লির সীমান্তে ধলেশ্বরী নদীবক্ষ্যে জেগে উঠা পলি স্তর স্থিতিশীলতা লাভ করলে সিংগাইর উপজেলার বায়রা ফোর্ট নগর পর্যন্ত ধলেশ্বরীর বিশাল প্রবাহ শীর্ণকায় হয়ে পড়ে। Naz-1এক কালের প্রমত্ত বেগবান নদী যার দু’কূল উপচিয়ে ছল ছল করে বিদ্যুৎ বেগে পাক খেয়ে ছুটে চলত অথৈ জলরাশি, আজ সে মৃতপ্রায় শুস্ক, শীর্ণকায়। তার সেই বেগবান বক্ষে গড়ে উঠেছে চরাঞ্চল, শস্যশ্যামল প্রান্তর, লোকালয়, জনপদ, হাটবাজার, রাস্তাঘাট আর নদীর কূলে কূলে গড়ে উঠা ঐতিহাসিক ¯ৃ§তি বিজড়িত প্রাচীন শহর, বন্দর, বর্ধিষ্ণু জনপদ, পুরার্কীতির স্থাপত্যের অস্তিত্ব সবকিছু হারিয়ে গেছে প্রাণহীন ধলেশ্বরীর বালুকা রাশিতে।

তিল্লি মুখ খনন কর, ধলেশ্বরী, ইছামতি, কালিগঙ্গা, গাজীখালি, কান্তাবতী, ক্ষিরাইসহ মানিকগঞ্জের সকল নদী রক্ষার জন্য দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশবাদী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো আন্দোলন করছে। ধলেশ্বরী নদী বাাঁচও আন্দোলন ও বারসিক এর যৌথ আয়োজনে ইতেমধ্যে কয়েক দফা- মানববন্ধন, প্রচারপত্র বিলি, বিলবোর্ড স্থাপন, লেখালেখি, গবেষণা ও নদী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই আন্দোলনের সাথে সংহতি জ্ঞাপন করেন দেশের কয়েকটি জাতীয় ও স্থানীয় সংগঠন তথা বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ কৃষক সমিতি, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনসহ অন্যান্য স্থানীয়  সংগঠন।

এর প্রেক্ষিতে নদীটি খননের উদ্যোগ নেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। ইতিমধ্যে একদফা জরিপ কাজ হয়েছে। তবে প্রায় আড়াই বছরেও প্রাথমিক জরিপ কাজ শেষ হয়নি। এই প্রসঙ্গে ধলেশ্বরী নদী বাঁচাও আন্দোলনের আহবায়ক এ্যাড. আজাহারুল ইসলাম আরজু বলেন, “নদীর উৎসমুখ সাটুরিয়ার তিল্লি থেকে জেলা সদরের জাগির পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে অন্তত ১২ কি.মি. খনন করা হলে নদীটির স্বাভাবিক গতি ফিরতে পারে বলে আমরা মনে করি।”

Naz-2
জেলা প্রশাসন ও আন্দোলনের সমন্বয়কারী বিমল রায় এর মাধ্যমে জানা যায়, এলাকাবাসী ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ অক্টোবর ২০১৫ থেকে এ পর্যন্ত কয়েক দফা জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারমেন আতাহারুল ইসলাম নদীর তিল্লি এলাকা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছেন, “নদীটি খনন করা হলে সহজেই যমুনার পানি ঢাকার বুড়িগঙ্গায় নেওয়া সম্ভব। নদী খননের লক্ষ্যে ১০ কর্ম দিবসের মধ্যে জরিপ দল গঠন করে কাজ শুরু করা হবে।” কিন্তু এখনো পূর্ণাঙ্গ জরিপ দল ও জরিপের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়নি।

আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব আব্দুল হামিদ (চান্দু দারগা) বলেন, “সাটুরিয়া,সদর ও সিঙ্গাইরের সহস্রাধিক একর জমির কৃষিকাজে এই নদীর পানি ব্যবহৃত হয়। কাজের মৌসুমে নদীতে পানি না থাকায় কৃষিকাজ চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।”

happy wheels 2

Comments