ফেরিওয়ালা ডাক্তার মোরসালিন
রাজশাহী থেকে মো. জাহিদ আলী
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রতিটি প্রাণীর মধ্যেই থাকে, তবে জীবাণুর ক্ষমতা যদি প্রাণীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার চেয়ে বেশি হয় তখন প্রাণীর দেহে রোগ দেখা দেয়। রোগী তার প্রয়োজনে রোগ সারানোর জন্য ডাক্তারের কাছে যায়। কিন্তু এর ব্যতিক্রম কাজটি করেন রাজশাহী গোদাগাড়ীর, বিড়ইল গ্রামের হোমিও ডাক্তার মোরসালিন। তিনি নিজে তার ডাক্তারি সরঞ্জাম নিয়ে ঘুড়ে বেড়ান গ্রামে গ্রামে। বাহন হিসাবে বেছে নিয়েছেন তার ব্যবহৃত সাইকেলটি।
২০০১ সালে এসএসসি পাশ করার পর কলেজে ভর্তি হয়েও লেখাপড়া শেষ করতে পারেননি মোরসালিন। ৩ সন্তানের জনক মোরসালিন নিজ বাড়ির কৃষিকাজ করে সংসার চললেও ২০১৩ সালে তার বড় ভাইয়ের পড়ার টেবিলে একটি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার বই দেখতে পান। তিনি পড়া শুরু করেন। আস্তে আস্তে তাঁর পড়তে ভালো লাগে। রোগের উপসর্গ, কোন কোন রোগ প্রতিরোধ করা যায় ঔষধের প্রতিক্রিয়া, পাশ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পারেন মোরসালিন। কৌতুহল বশতঃ তিনি কিছু কিছু ঔষধ রাজশাহী থেকে কিনে নিয়ে আসেন। সেগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী নিজেসহ পরিবারের সদস্যদের প্রদান করতে থাকেন। বইয়ের দেয়া নির্দেশনা মত কাজ করার ফলে এই বিষয়ে তার আগ্রহ আরোও বেড়ে যায়।
তিনি এই বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য ২০১৬ সালে গোদাগাড়ি মহিষাল বাড়িতে এইচএমএসটিসি কোর্সটি করেন। এখন তিনি পরিণত হোমিও ডাক্তার। প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ টা ও বিকাল ৫ থেকে রাত্রি ৯টা পর্যন্ত নিজ বাড়িতে রোগীর চিকিৎসা করেন। এছাড়া তিনি সাইকেল চেপে তার পাশবর্তী গ্রামে চিকিৎসা প্রদান করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি ৩টি গ্রামে নিজে গিয়ে চিকিৎসা দিই। কোন দিন আমার পাশ্ববর্তী গ্রাম দাদুড় কোন দিন সোনাডাইং গ্রাম আবার কোন দিন বৈরাগীতলা গ্রামে গিয়ে চিকিৎসা দিই। এছাড়া মোবাইল ফোনে ডাকেও গ্রামে গিয়ে চিকিৎসা দিয়ে আসতে হয়।” তিনি আরও বলেন, “প্রত্যন্ত গ্রামে মানুষ সহজে ডাক্তারের কাছে যেতে চায় না। গ্রামের মানুষের সেবা ও নিজের উন্নতির জন্য গ্রামে গিয়ে মানুষের সেবা করতে ভালোই লাগে।”
মোরসালিন এর সাথে কথা বলে জানা যায়, গ্রামে মানুষের মত প্রাণীর স্বাস্থ্য সমস্যায় মানুষ ডাক্তারের কাছে অনেক পরে যায় এতে প্রাণীর অসুখ আরো বেড়ে যায়। তাই তিনি মানুষের পাশাপাশি প্রাণীর চিকিৎসা হিসাবে গরু ও ছাগল ও ভেড়ার চিকিৎসা করেন। এপ্রসঙ্গে বলেন, “রোগের উপসর্গ, রোগীর শারিরিক অবস্থা, ওজন ইত্যাদি বিবেচনা করে ঔষধ দিতে হয়। তবে খিচুনী, আঘাতজনিত কাটা, কলেরা, ডেলিভারি, শরীরের কোন অংশে ভাঙ্গা এরকম রোগের চিকিৎসা করিনা। আমার কাছে জ্বর, সর্দি, কাশি, গ্যাসের ব্যথা, টিউমার, আচিল, মেয়েদের সমস্যা ও গরু ছাগল ও ভেড়ার ক্ষেত্রে পাতলা পায়খানা, আমাশয়, জ্বর, ল্যাংড়া হয়ে যাওয়া, অরুচি দুর্বলতা নিয়ে বিষয়ে বেশি ঔষধ নেয় মানুষ।”
মোরসালিন এর কাছে ৩ বছর যাবত নিয়মিত ঔষধ নেন দাদুড় গ্রামের হাজেরা বেগম বলেন, “মোরসালিন এর ঔষধ ভালো আমার পরিবারের সকলেই তার কাছে থেকে ঔষধ নিই। এখন আমার ছাগলের বাচ্চার পাতলা পায়খানার জন্য ঔষধ নিয়ে যাচ্ছি।” অন্যদিকে দাদুড় গ্রামের কৃষক সাহেব আলী বলেন, “আমার জ্বরের সমস্যার জন্য ঔষধ নিলাম। এর আগের আমার পরিবার থেকে ওর কাছে থেকে ঔষধ নিয়েছি।”
ঔষধের দামের প্রসঙ্গে মোরসালিন জানান, আগে ঔষধের দাম কম ছিল এম ড্রাম (১৬ মি:লি:) ঔষধ ১০ টাকা করে দেয়া গেলেও এখন এক ড্রাম ঔষধ ২০ টাকা দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ফেরি করে সারাদিন ৮০০ থেকে ১০০০ টাকার মত ঔষধ বিক্রি হয়। সব কিছুরই দাম বেড়েছে তাই দামের বিষয়ে মানুষ এখন কোন আপত্তি করে না।
প্রত্যন্ত গ্রামে হাতের কাছে ডাক্তারি সেবা পাওয়া সকলের জন্যই মঙ্গলজনক। প্রাথমিক সেবা সহজলভ্যতার জন্য মোরসালিন এর মত ডাক্তারের চিহ্নিত করে তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি।