ফেরি করে হরেক রকম পণ্য বিক্রি করেন রাশিদুল
মো. মনিরুজ্জামান ফারুক , ভাঙ্গুড়া (পাবনা)
এই মাল নিবেন মাল। হরেক রকমের মাল আছে। মাল……। সকাল হলেই প্রতিদিন নাওয়া-খাওয়া সেরে এ কথাগুলো বলতে বলতে গ্রামের পর গ্রাম ছুটে চলেন রাশিদুল। অটো ভ্যানের ওপর তৈরি করা ভ্রাম্যমাণ দোকানে নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র সাজিয়ে নিয়ে তা ফেরি করে বিক্রি করেন তিনি। তার ভ্রাম্যমাণ দোকানে পাওয়া যায় সিলভারের হাড়ি, পাতিল, প্লাস্টিকের বাটি, ডালা, লবণদানি, বদনা, টুল, লোহার দা, বটি, বাচ্চাদের খেলনা ও কসমেটিক্সসহ প্রায় ১০০ প্রকারের জিনিস। তিনি পাশের উল্লাপাড়া উপজেলা থেকে এ মালামাল কিনে থাকেন।
রাশিদুল জানান, বছর পাঁচেক আগে স্থানীয় জুতা-সেন্ডেল তৈরির কারখানায় কাজ করতেন তিনি। সেখানে পুঁষিয়ে ওঠতে না পেরে ছেড়ে দেন জুতা-সেন্ডেল তৈরির কাজ। বসে না থেকে আরম্ভ করেন নতুন এ ব্যবসা। জীবন-জীবিকার তাগিদে গ্রামে গ্রামে ফেরি করে বিক্রি করেন নানা রকমের জিনিস। তার কথায় ‘হরেক রকম মাল’ তিনি বিক্রি করেন। তিনি পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর উপজেলার বেরহাউলিয়া গ্রামের আতাহার আলী সরকারের ছেলে। তারা ৩ ভাই এবং ৩ বোন। পিতা বেঁচে নেই। গর্ভধারিণী মায়ের সব দায়িত্ব নিজেই বহন করেন তিনি। একমাত্র মেয়ে সন্তান পায়েল স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস থ্রিতে পড়ে। তিনি বলেন, ‘৫ম শ্রেণিতে পর্যন্ত পড়া লেখা করেছি। কিছু দিন দিনমজুরির কাজও করেছি। এর পর জুতা-সেন্ডেলের কারখানায় কাজ শুরু করি। সেখানে পুষাতে না পেরে ৫ বছর ধরে গ্রামে গ্রামে ফেরি করে বেড়াই।’
তিনি আরও জানান, এ ব্যবসায় বেচাকেনা ভালোই হয়। তার অধিকাংশ ক্রেতাই গ্রামের মহিলা। যারা কেনাকাটার জন্য বাজারে যায় না। তারাই তার কাছ থেকে নানা জিনিসপত্র কিনে থাকেন। অন্যান্য ব্যবসার মতো তাকেও খরিদদারদের বাকি দিতে হয়। তবে তিনি লোক চিনে বাকি দেন। যাদের লেনদেন ভালো তাদেরকে বাকি দিতে তিনি কার্পণ্য করেন না। তিনি ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর ও চাটমোহর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ফেরি করতে যান। একই গ্রামে প্রতিদিন যাননা। অনন্ত ১৫ দিন পর পর এক গ্রামে যান। এতে বিক্রি ভালো হয়। বাড়ি থেকে দুপুরের খাবার সঙ্গে নিয়ে যান। বেলা হলেই কোথাও একটু বসে জিরিয়ে নিয়ে খাবার খাওয়া সেরে নেন। এ ব্যবসা থেকে তার প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয়। বিশেষ করে দুই ঈদ ও পূজার সময় তার বেচাকেনা সবচেয়ে বেশি হয়। তিনি জানালেন সংসারে মা, স্ত্রী ও একমাত্র সন্তান নিয়ে এখন তার দিন ভালোই কাটছে।