পাকা তালের বড়া ও আঁচার সকলের কাছে খুব প্রিয়
বাহলুল করিম, সাতক্ষীরা থেকে
তাল গ্রীষ্মকালীন এক ধরণের সুস্বাদু ফল। কাঁচা অবস্থায় তালের শ্বাস ও পাকা অবস্থায় তাল দিয়ে তৈরি পিঠা খেতে খুব মজা। তালের রসে তৈরি পিঠা খেতে ভারি মজা। গ্রাম বাংলায় তালের পাটালির বহুল ব্যবহার রয়েছে। তালের আচার ও পাটালি সকলের কাছে খুবই প্রিয়। এছাড়া তালপাতার পাখার বাতাসে সকলের মন জুড়িয়ে যায়। বিলুপ্তিপ্রায় বাবুই পাখি বাসা বাঁধে এই তাল গাছের পাতায়। এছাড়া শিশুরা কাঁচা তালের বীজ দিয়ে বিশেষ এক ধরণের গাড়ি তৈরি করে খেলা করে।
গ্রামে-গঞ্জে, রাস্তার পাশে, মাঠে-ঘাটে তাল গাছ দেখা যায়। তাল গাছ লম্বায় ৩০-৩৫ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। এর আয়তন ছয় থেকে ১২ ফুট। তালের কাণ্ড শক্ত প্রকৃতির। এর ভিতরটা ফাঁপা।
তাল গাছের পাতা লম্বা ডাটার মাথায় যুক্ত থাকে। প্রতিটি পাতায় অসংখ্য খণ্ডে বিভক্ত থাকে। পাতার ডাটার দুই পাশ করাতের মতো ধারালো। প্রতিটি ডাটার গোড়ার দিক ইংরেজী V অক্ষরের মতো। এর পাতার অগ্রভাগ সুচালো ধরণের।
তালের আকার ও আকৃতি উপবৃত্তাকার। কাঁচা অবস্থায় তালের বাইরের অংশ মসৃণ কিন্তু পাকলে এর ত্বক কিছুটা অমসৃণ হয়। কাঁচা অবস্থায় এটি শক্ত প্রকৃতির হয়। কাঁচা অবস্থায় এর শ্বাস খেতে খুব মজা। কিন্তু তাল পাকলে নরম প্রকৃতির হয়। পাকা তাল পিঠা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। পাকা তাল থেকে অনেকে পাটালিও তৈরি করে থাকে। এছাড়া পাকা তালের বীজ বা আটি থেকেও এক ধরণের শ্বাস পাওয়া যায়।
সাতক্ষীরা অঞ্চলে এটি তাল নামে অধিক পরিচিত। এই অঞ্চলের মানুষের কাছে কাঁচা তালের শ্বাস খুবই প্রিয়। এছাড়া তালের রস, পিঠা, পাটালি, গুড় সকলেই মজা করে খায়। এছাড়া পাকা তালের পিঠা (বড়া) সকল মানুষের কাছে খুবই প্রিয়। সাতক্ষীরা অঞ্চলে তাল পাতার পাখাও তৈরি হয়। যা প্রচণ্ড গরমে মানুষকে প্রশান্তি দেয়।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর গ্রামের বাসিন্দা আফরোজা খাতুন বলেন, “পাকা তাল থেকে বিভিন্ন ধরণের জিনিস তৈরি করা যায়। পাকা তাল মিজে আঁচার তৈরি করা যায়। এই আঁচার ছোট-বড় সকলেই খুব পছন্দ করে। পাকা তালের বড়া (পিঠা) সকলেই কাছে খুবই প্রিয়। এছাড়া পাকা তাল থেকে পাটালিও তৈরি করা যায়। এজন্য তাল মিজে তারপর এর সাথে ধান থেকে তৈরি খৈ, নারিকেল ও চুন মিশিয়ে একটি থালা বা গামলায় কিছুক্ষণ রেখে দিলে পাটালি তৈরি হয়ে যাবে। পরে কেটে কেটে পরিবেশন করা যাবে। এছাড়া তালের বীজ মাটিতে রাখলে এর ভিতর এক ধরণের শ্বাস পাওয়া যায়। যা খেতে খুব মজা। এই শ্বাস তরকারি হিসেবেও রান্না করে খাওয়া যায়।”
এ ব্যাপারে শহরের পুষ্টির ফেরিওয়ালা রুহুল কুদ্দুস বলেন, “সাতক্ষীরা অঞ্চলে এক সময় প্রচুর পরিমাণে তাল গাছ পাওয়া যেত। এখন আর তেমন দেখা যায় না। তালের রস জ্বাল দিয়ে খেলে বেশ মজা লাগে। রস জ্বালিয়ে যে গুড় ও পাটালি তৈরি হয় তা সকলেই খুব পছন্দ করে। কাঁচা অবস্থায় এর শ্বাস সকলেই খেয়ে থাকে। গ্রামের শিশুরা তালের আটি দিয়ে বিশেষ ধরণের খেলনা তৈরি করে। শিশুরা তালের গাড়ি বলে চেনে।
মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, ‘তাল (Asian Palmyra Palm) একটি ভারতীয় উপমহাদেশীয় গ্রীষ্মকালীন ফল যা তালগাছ (বৈজ্ঞানিক নাম Borassus flabellifer) নামক পাম গোত্রীয় গাছে ফলে। তাল গাছ পাম গোত্রের অন্যতম দীর্ঘ গাছ যা উচ্চতায় ৩০ ফুট পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। তালের পাতা পাখার মত ছড়ানো তাই বোরাসাস গণের পাম গোত্রীয় গাছগুলিকে একত্রে ফ্যান-পাম বলা হয়।
তাল পাতা দিয়ে ঘর ছাওয়া, হাতপাখা, তালপাতার চাটাই, মাদুর, আঁকার পট, লেখার পুঁথি, কুণ্ডলী পুতুল ইত্যাদি বহুবিধ সামগ্রী তৈরি হয়। তালের কাণ্ড দিয়েও বাড়ি, নৌকা, হাউস বোট ইত্যাদি তৈরি হয়।
তালের ফল এবং বীজ দুইই বাঙালি খাদ্য। তালের ফলের ঘন নির্যাস থেকে তাল ফুলুরি তৈরি হয়। তালের বীজও খাওয়া হয় লেপা বা ‘তালশাঁস’ নামে। তাল গাছের কাণ্ড থেকেও রস সংগ্রহ হয় এবং তা থেকে গুড়, পাটালি, মিছরি, তাড়ি (একপ্রকার চোলাই মদ) ইত্যাদি তৈরি হয়। তালে রয়েছে ভিটামিন এ, বি ও সি, জিংক, পটাসিয়াম, আয়রন ও ক্যালসিয়ামসহ আরো অনেক খনিজ উপাদান। এর সাথে আরো আছে অ্যান্টি অক্সিজেন ও এ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান। তবে তাল কেনার সময় নরম তাল কেনা উচিৎ। কারণ বেশি পাকা তাল হজম করতে সমস্যা হয়।’