নারী পুরুষের সমতার মধ্য দিয়েই টেকসই উন্নয়ন সম্ভব

2
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। “সবাই মিলে ভাবো, নতুন কিছু করো, নারী-পুরুষ সমতার, নতুন বিশ্ব গড়ো” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে ঢাকার বস্তিবাসী ও নিম্ন আয়ের মানুষদের নিয়ে গত ৭ মার্চ উদযাপিত হলো আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিকের আয়োজনে স্টেপস টুওয়ার্ড ডেভেলপমেন্টের মিলনায়তনে বিকাল ৩টায় এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়|

আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট নারীনেত্রী কাজী সুফিয়া আখতার শেলী বলেন, পৃথিবীর সকল নারীদের জন্য এই দিনটি একটি বিশেষ দিন। এই দিনটির সৃষ্টিই হয়েছিল নারীদের কর্মঘন্টা নির্ধারণ ও বেতন বৃদ্ধির আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে। কিন্তু আজও বাংলাদেশের প্রান্তিক নারীদের কাজের ও মজুরির বিষয়টি সুরাহা হয়নি। এখনও দেশব্যাপী চরম মজুরী বৈষম্য আমরা দেখতে পাই। আজকে বস্তিবাসী নারীরাও নানান রকম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। নারী পুরুষের সমতা অর্জনের জন্য তিনি আন্দোলন গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি সরকারের কাছে নারী উন্নয়ন নীতিমালার পূর্ণ বাস্তবায়নের দাবি জানান।

মুক্ত আলোচনায় বস্তিবাসী আয়েশা বেগম বলেন, “ নারীদের কষ্ট বেশি, তাদের নাই গোসলের কোন জায়গা নেই, শিশুদের নিরাপত্তা নিয়েও নারীদেরকেই ভাবতে হয়। যখন একটি শিশু কিশোরী নির্যাতনের শিকার হয় তখন নারীকেই তার দায় নিতে হয়। তিনি আরো বলেন, মানুষের বাড়ীতে কাজ করি আবার ঘরে এসেও খাটতে হয় । কিন্তু এই খাটনির কোন দাম নাই। রান্না দেরি হইলে নানান নির্যাতন হয়”।

আরেক বস্তিবাসী ঝুমুর আক্তার বলেন,“আমাদের ঘরের পুরুষরা ঘরের কোন কাজ কাম করে না। আমার তিনটি ছেলে তাদেরকে আমি ঘরের কাজ করার জন্য উৎসাহ দেই। বড় ছেলেটা অনেক কাজ করে। আমি মনে করি সব মায়েদের এইটা করা দরকার।” বস্তিবাসী নেতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আমরা স্বামী স্ত্রী দুইজনেই কাজ করি। কারণ দুইজন মিলে কাজ করলে সংসারটা ভাল চলে। তাই এইটা সবারই করন দরকার।”

আলোচনার সভার শুরুতে সকলের সামনে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বারসিকের প্রকল্প সমন্বয়ক মো: জাহাঙ্গীর আলম। তিনি তার বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার এক বিশাল অংশ নারী। নারী উন্নয়ন তাই জাতীয় বা দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত। গ্রাম কিংবা শহরে সকল ক্ষেত্রে নারীর সমান অধিকার ও সুযোগ প্রতিষ্ঠা করা একান্ত প্রয়োজন। যুগ যুগ ধরে নারী ও পুরুষের মধ্যে যে বৈষম্য তৈরী হয়েছে তা দূর করার জন্য জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ভাবে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। পুরুষ শাসিত এই সমাজে নারীরা যুগ যুগ ধরে সমাজের নিপীড়িত এবং নির্যাতিত হচ্ছে। আমরা একটু লক্ষ্য করলেই দেখতে পাই শহরের ভাসমান, নিম্ন আয় ও বস্তিতে বসবাসরত নারী, কিশোরী এবং শিশুরা প্রতিনিয়ত অত্যাচারিত, নির্যাতিত, শোষিত হচ্ছে। তাদের না আছে সামাজিক নিরাপত্তা, না আছে কাজের স্বীকৃতি, না আছে ভাল কাজ ও মজুরির নিশ্চয়তা । বস্তিতে একজন নারীর কাজ শুরু হয় সবার আগে এবং শেষ হয় সবার পরে। বস্তি এলাকায় নারীদের টয়লেট ব্যবহার এবং পানি সংগ্রহ করতে গিয়ে বিভিন্নভাবে সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়। পরিবারেরও প্রায় সবকাজ তাকেই করতে হয়। অন্যদিকে পুরুষদের সকল কাজই টাকা সাথে সংশ্লিষ্ট বলে পরিবারের সিদ্ধান্তগুলো পুরুষেরাই নিয়ে থাকে। এইসব সিদ্ধন্ত অধিকাংশ সময়ই নারীদেরকে আরো সমস্যার মধ্যে ফেলে দেয়।

3
বস্তিবাসী নারীদের আরোও সংগঠিত হওয়ার জন্য আলোচনা সভায় বক্তারা তাদের আলোচনায় উল্লেখ করেন। এক্ষেত্রে বস্তিবাসী নেত্রী কুলসুম বেগম বলেন, ৮৫ সাল থেকে বস্তিতে থাকি আর কাজ করে খাই । আমাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন আজও হয় নাই। আমাদের সকলকে এক জায়গায় এসে কাজ করতে হবে। না হলে হবেনা।
আলোচনায় বক্তারা আরো বলেন, নারী দিবসে সকলেরই অঙ্গিকার করা দরকার নারী ও পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। আর না হলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব না। কারণ নারীকে বাদ দিয়ে কোন উন্নয়নই টেকসই হবে না।
আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বারসিকের সমন্বয়ক মো: তৌহিদুল আলম, পাভেল পার্থ, বস্তিবাসী ইউনিয়ন নেতা কুলসুম বেগম, রাফেজা বেগম প্রমূখ। আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন বারসিকের সহযোগী প্রকল্প সমন্বয়ক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল।

happy wheels 2

Comments