আদ্য দাসের ঝাঁল মুড়ি
মানিকগঞ্জ থেকে সুবীর কুমার সরকার
ঘিওর উপজেলার বাগ-বানিয়াজুরী গ্রামে আদ্য দাসের (৪৫) বসবাস। বৃদ্ধ মা ও দুই মেয়েকে নিয়ে সংসার। সংসারের অভাব অনটনের কারণে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত গিয়ে তার পরাশোনা বন্ধ হয়ে যায়। জীবিকা অর্জনের জন্য প্রথমে গাড়ির হেলপারি, সিমেন্টের ঘুটি তৈরি, কারখানায় চাকরি করেন। সেখান থেকে যা আয় করেন তা দিয়ে তাঁর সংসার চলে না।
সংসারের চাকাকে গতিশীল করার জন্য গত এক বছরে তিনি ঝাঁল চানাচুর নিয়ে স্কুলে স্কুলে বিক্রি করতে শুরু করেন। তিনি পরিস্কার পরিচ্ছন্নভাবে চানাচুর বিক্রি করেন। এজন্য অনেকেই তার ঝালমুড়ি ও চানাচুর কিনে খান। এভাবে দিনে দিনে তাঁর বিক্রি বেড়ে যায়; আয়ও ভালো হয়। ঝালুমড়ি বিক্রির সফলতার ধারাবাহিকতায় তার স্ত্রী ও মা বানিয়াজুরী আনন্দ বাজারে চায়ের দোকান দেন।
ঝালুমড়ি বিক্রি ও চায়ের দোকানের আয় থেকে আদ্য দাস সাইকেল কিনেন। সাইকেলের পিছনে কাঠের বাকস্ তৈরি করে তাঁর ভেতরে মুড়ি, চানাচুর, ছোলা, বুট, তেল, ধনেপাতা, আদা, মরিচ, পেঁয়াজ, বাড়িতে তৈরি করা মসলাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি প্রতিদিন ভোরে স্কুলের দিকে রওয়ানা দেন। তিনি জানান, গড়ে দৈনিক ৮০০ টাকার ঝাঁল মুড়ি বিক্রি হয়। খরচ বাদ দিয়ে তিনি দিনে ৪০০ টাকা আয় করেন। বিকালে বাসট্যান্ডে ও রাতে ক্লাবের সামনেও তিনি মুড়ি বিক্রি করেন। এভাবে আদ্য দাসের দিন কেটে যায়।
আদ্য দাসের সাথে কথা বলে জানা যায়, “সাইকেলে করে চানাচুর বিক্রি করতে পেরে লাভ বেশি হচেছ পরিশ্রম কম হচ্ছে।” সাইকেলের পিছনে চানাচুর বিক্রি এই অঞ্চলে এটাই প্রথম।
জীবিকা অর্জনের তাগিদে মানুষ কতকিছুই না করার সাধ্য রাখেন। কারও ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আদ্য দাসের মতো বাংলাদেশে অনেক সংগ্রামী ও উদ্যমী মানুষ রয়েছেন যারা আত্ম সম্মানের সাথে জীবন পথে এগিয়ে চলেন। চানাচুর বা ঝালমুড়ি বিক্রি করা একটি ছোট পেশা হতে পারে তবে এই পেশার মাধ্যমে সৎভাবে উপার্জন করা যায়; কাউকে প্রতারণা না করেও বেঁচে থাকা যায়। এটাই আদ্য দাসকে গর্বিত করে। কারণ তিনি তাঁর জীবিকা অর্জনের জন্য কাউকে প্রতারণা করেননি এবং কারও বোঝা হিসেবে দাঁড়াননি।