মো. আতোয়ারের বায়োস্কোপ!
মানিকগঞ্জ থেকে সুবীর কুমার সরকার
তাঁর মাথায় টুপি, গায়ে জামা, চোখে ভাংগা চশমা, হাতে খঞ্জনী, পায়ে ঝুমুর লাগিয়ে ভেঁপু বাঁশি বাজিয়ে সকল বয়সের লোকদের আহবান জানিয়ে বায়োস্কোপ খেলা দেখানো শুরু করেন তিনি। তা বায়োস্কোপে ক্ষুদিরামের ফাঁসি, মক্কা-মদিনা, পংখিরাজের ঘোড়া, দর্শনীয় স্থান, পাহাড়-পর্বত, সাগর নদীসহ বিভিন্ন ছবির দৃশ্য রয়েছে। এ বায়োস্কোপ দেখে শিশু, কিশোর, বৃদ্ধসহ সকল বয়সের মানুষকে আনন্দ পান। বায়োস্কোপ দেখিয়ে মানুষকে আনন্দ দেওয়ার মানুষ্টির নাম মো. আতোয়ার। থাকেন মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলার পয়লা গ্রামে।
তার পিতা পাষাণ পাগলের হাতেই হয় মো. আতোয়ারের বায়োস্কোপে হাতেখড়ি হয়। মূলত জীবিকার তাগিদেই ১৮ বছর আগে তিনি এই বায়োস্কোপ দেখানোকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। যদিও বর্তমানে এ খেলার চাহিদা কমে আসায় তিনি বায়োস্কোপ দেখানোর পাশাপাশি রিক্সা চালিয়ে জীবিকা অর্জন করতে বাধ্য হন। তবে মনের আনন্দে এখনও মানুষকে বায়োস্কোপ দেখিয়ে আনন্দ দেন এখনও।
এই মনের আনন্দ এবং অন্যদেরকে আনন্দ দেওয়ার তাগিদ থেকেই তিনি সম্প্রতি ঘিওর উপজেলায় বানিয়াজুরী শিব পূজায় শিব মন্দিরে দুই দিনব্যাপি শিব মেলায় বায়োস্কোপ খেলা দেখান আগত দর্শনার্থীদের! প্রতিটি শোতে তিনি ন্যুনতম টাকা নেন দর্শকদের কাছে। এছাড়াও মানুষদের শো-দেখানোর পাশাপাশি নিজে বিভিন্ন অঙ্গ-ভঙ্গি দেখিয়ে আনন্দ দেয়ার চেষ্টা করেন তিনি। রিক্সা চালক আতোয়ার রহমান দিন শেষে খেলা দেখিয়ে যে অর্থ পান তাতেই তিনি খুশি থাকেন।
বায়োস্কোপ প্রদর্শনীর বর্তমান অবস্থা সর্ম্পকে তিনি বলেন, “এই খেলা আজ বিলুপ্ত প্রায়। টেলিভিশন ও মোবাইল গেইম আসার পর থেকে বায়োস্কোপ দেখার প্রবণতা কমে গেছে মানুষের মধ্যে।” তিনি আরও বলেন, “তবে মানুষ তাদের অতীত স্মৃতি কখনও ভুলে যান না। যদি কেউ উৎসাহ ও আগ্রহ নিয়ে বায়োস্কোপ খেলা দেখায় তখন মানুূষ এটা দেখতে ভীড় জমায়। আমি তাই এখনও সুযোগ পেলে এ খেলাটি দেখায়।”
আতোয়ার রহমান হাজার কষ্টের মাঝেও অতীতের এই বিনোদনকে ধরে রেখেছেন এবং ধরে রাখার চেষ্টা করে যাবেন বলে জানান। মানুষকে তাদের অতীত বিনোদনের উৎস এবং স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে চান তিনি। তাই যখনই সুযোগ পান তিনি মেলাগুলোতে যান এই বায়োস্কোপ দেখানোর জন্য। বিনিময়ে কিছু পান কিংবা না পান তাতে তাঁর কোন দুঃখ নেই। তিনি যে মানুষকে আনন্দ দিতে চান এবং ধরে রাখতে চান আমাদের অতীতের স্মৃতিতে! মো. আতোয়ার এই উদ্যোগ স্বাগত জানাই এবং আমাদের অতীত ইতিহাস, সংস্কৃতি স্মৃতি এবং ঐতিহ্য রক্ষা এবং ধরে রাখার জন্য আতোয়ার রহমানের মতো আমাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে।