সাথী ফসল হিসেবে বাঙ্গি চাষ
হরিরামপুর মানিকগঞ্জ থেকে সত্যরঞ্জন সাহা
বাংলাদেশের কৃষকগণ তাদের নিজস্ব জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো মোকাবেলা করে আসছেন, ফসল উৎপাদন করছেন এবং নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছেন। কৃষক জানেন কোন ঋতুতে, কোন মাটিতে, কোন ধরনের ফসল ভালো হবে। ঋতুবৈচিত্র্যের সাথে তাল মিলিয়ে তাঁরাও চাষবাসে ফসলবৈচিত্র্য এনেছেন। প্রাণ ও প্রকৃতি থেকে শিক্ষা নিয়ে কৃষকগণ নিরন্তর উৎপাদন করে যাচ্ছেন ফসল; দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা!
হরিরামপুরের কৃষক শহীদ বিশ্বাস জানান, কৃষকরা জানেন কোন কৃষি আবাদে লাভ হয় আর কোন আবাদে লাভ কম হয়। তারপরও এই লাভ-ক্ষতির হিসাব না করে কৃষকদেরকে জমিতে ফসল উৎপাদন করতে হয়। কারণ নিজেদের জীবিকা রক্ষাসহ দেশের জন্য খাদ্য উৎপাদনের দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তেছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “বর্তমানে ধান চাষে লাভ নাই। তবে চাষাবাদে লাভের জন্য আমরা বীজ রাখি, জৈব সার তৈরি করি, বাড়িতে বালাইনাশক তৈরি করি যাতে উৎপাদন খরচ কম হয়। উৎপাদন খরচ কম হলে চাষবাসে লাভ করা যায়।” কৃষিপেশায় লাভবান হওয়া এবং নতুন প্রজন্মদের মাঝে কৃষি আকৃষ্ট করার জন্য কৃষকরা তাই চাষবাসে বৈচিত্র্যতা আনার চেষ্টা করেন। একক ফসলের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে তাঁরা বৈচিত্র্যময় ফসল আবাদ করেন। মূল ফসলের সাথে সাথী ফসল আবাদ করেন। এভাবে দেখা যায়, রবি মৌসুমে তারা একই জমিতে একসাথে পেঁয়াজ, রসুন, বাঙ্গি চাষ করেন। একই সময়ে চাষ করলেও সবার আগে উঠে পেঁয়াজ, তারপর রসুন এবং সবার শেষে বাঙ্গি। একটি জমিতে ৩টি ফসল চাষ করে একের পর এক ফসল উঠায় কৃষকের লাভ হয়! মাটির ধরন বুঝে জমিতে মিশ্র ফসল চাষাবাদ করলে অনেক বেশি লাভবান হওয়া সম্ভব বলে জানান কৃষক শহীদ বিশ্বাস।
কৃষক লাল মিয়া (৫০) বলেন, “বাড়িতে মৌসুম অনুযায়ী কৃষি বীজ সংরক্ষণ করে চাষাবাদ করি। চাষাবাদের জন্য কোন কিছু ক্রয় করতে বাজারে যাই না।” তিনি জানান, রবি মৌসুমে বাহিরচর গ্রামের কৃষকগণ মাঠে মসলা (পিয়াজ, রসুন) চাষের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসাবে বাঙ্গি চাষ করেন। বাঙ্গি একটি মৌসুমী ফসল। বাহিরচর গ্রামের ৫ জন কৃষক মাঠে তিন বছর আগে পরীক্ষামূলকভাবে মূল ফসলের (পেঁয়াজ, রসুন) সাথে সাথী ফসল হিসেবে বাঙ্গি আবাদ করেন। সফলতা পাওয়ায় তাদের দেখাদেখিতে বর্তমানে ওই এলাকায় ৯৫ পরিবার সাথী ফসল হিসেবে বাঙ্গি আবাদ করেন।
সাধারণত পৌষ-ম্ঘা মাসে জমিতে ৩টি চাষ দিয়ে বাঙ্গি বীজ বপন করা হয় সাথি ফসল হিসেবে। বাঙ্গি ফল উঠে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে। কৃষকদের মতে, বাঙ্গি চাষ চাষ খুবই লাভজনক। কেননা এ ফসল চাষেক কোন ধরনের খরচ নেই বললেই চলে। সাথী ফসল হিসেবে এটি আবাদ করায় মূল ফসলের জন্য খরচ দিয়েই বাঙ্গি চাষ করা যায়। উৎপাদন খরচ বলতে শুধুমাত্র জমি চাষ ও আগাছা বাছাই করা। হরিরামপুর চর এলাকার গ্রামগুলোতে এ বছর প্রচুর পরিমাণে বাঙ্গি চাষ করার ফলে উপজেলার ঝিটকা, লেছড়াগঞ্জ, নয়ারহাট, আন্ধারমানিক বাজার, বাহিরচর বাজার, মানিকনগর বাজার, বাহাদুরপুর বাজার, কান্ঠাপাড়া ও লাওতা বাজারে এসব ফসল বিক্রি করা হয়। বাহিরচর গ্রামের কৃষকরা জানান, ৩০ শতক জমিতে ভাঙ্গি চাষ করলে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ হয়।
উল্লেখ্য যে, স্থানীয় কৃষক সংগঠন এবং এলাকার পরিবেশবান্ধব উদ্যোগী ব্যক্তিদের প্রচার ও সহযোগিতায় জৈব উপায়ে বাঙ্গি চাষে কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়। বাঙ্গি চাষে লাভবান হওয়ায় এলাকায় বাঙ্গি চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। দেশীয় ফল বাঙ্গি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু।