ধলেশ্বরীসহ সকল নদী সচল হোক
মানিকগঞ্জ থেকে বিমল চন্দ্র রায়
মানিকগঞ্জ জেলার অন্যতম প্রধান নদী ধলেশ্বরী। এই নদীটি জেলার বিভিন্ন জনপদ দিয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে আসছে। বিগত ৩০/৩৫ বছর ধরে নদীটি পলি পড়ে শুকিয়ে বিস্তৃর্ণ ক্ষেত খামারে পরিণত হয়ে পড়েছে। ধলেশ্বরী নদীর পাড়ের মানুষ ও পরিবেশ সচেতন ব্যক্তিবর্গ সরকারের নিকট নদী রক্ষায় দাবি করে আসছেন। এই দাবিসমূহ নিয়ে নানান ধরনের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছেন।
এসব দাবি প্রেক্ষিতে ২০২০ সাল তিল্লী মুখ থেকে শুরু হয়ে ৪৪ কিলোমিটার স্বল্প পরিসরে খননের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এখনও খনন চলছে। তবে খুব নদীটির কম প্রসস্থ এবং এর গভীরতা দিনকে দিন অনেক কমছে। এক সময় যেটা প্রমত্ত নদী আজ খালে পরিণত হয়েছে। তবে আশা করা হচ্ছে খননের কারণে বর্তমানে এ নদীটিতে জলপ্রবাহ একটু বৃদ্ধি পেয়েছে। খননের কারণে বর্ষাকালে এ নদী যেন তার প্রাণ ফিরে পেয়েছে। এ সময় নদীতে নৌকা বাইচ হয়েছে, জেলেরা জাল বা ভেশাঁল দিয়ে মাছ ধরেছেন। মাছ শিকারিরা বড়শি দিয়ে বোয়াল, কালিবাউশ শিকার করছেন সম্প্রতি। মানুষের দাবি ফলেই এ খনন সম্ভব হয়েছে, যা ধলেশ্বরী নদীকে কিছুটা হলেও জীবন্ত করে তুলেছে।
ধলেশ্বরী নদীসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন নদী খনন ও দখলমুক্ত করার জন্য পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন নানান দাবি তুলেছেন। আইন অনুযায়ী, নদী রক্ষণাবেক্ষণ এবং দখলমুক্ত রাখা বা নদীসমূহের মালিকানা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের। তাছাড়া সরকার নদী রক্ষায় জাতীয় নদী কমিশন গঠন করে আলাদা একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে এবং ক্ষমতায়িত করেছে। বিশেষ করে সম্প্রতি লক্ষ্য করা গেছে, ঢাকা শহরের চারপাশের প্রভাবশালী দখলদারদের নিকট থেকে একাধিকবার নদী ও নদীর জমি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এতকিছুর পরও নদী দখল ও দূষণ চলমান রয়েছে এবং এসব দখলদারীর বিরুদ্ধে নাগরিক আন্দোলন চলমান আছে।
মানিকগঞ্জের এই ধলেশ্বরী নদী টাংগাইল জেলার কালিহাতি উপজেলার বঙ্গবন্ধুর সেতুর কাছ যমুনা নদী থেকে শুরু হয়ে জেলার বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন নামে প্রবাহিত হয়ে শেষে মুন্সিগঞ্জ হয়ে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে। এই দীর্ঘ প্রবাহের নানান বাধাকে অতিক্রম করতে হচ্ছে। মানিকগঞ্জের কৃষক, জেলে এবং নদীর পারের মানুষ এ নদীকে দখল ও দূষণমুক্ত করার জন্য এখনও নানান দাবিদাওয়া উত্থাপন করেছেন কর্তৃপক্ষের নিকটে। ধলেশ্বরী নদীর আন্দোলনের ডাক দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিশিষ্টজন, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের কাছে পৌছেছে এবং তাঁরাও এ নদীকে সুরক্ষা ও দখলমুক্ত করার জন্য এ আন্দোলনের সাথে শামিল হয়েছেন অনেকবার।
এ দাবি ও আন্দোলনের সাথে বিশিষ্টজনের অংশগ্রহণ ও সংহতি প্রকাশস্বরূপ, বাংলাদেশের অন্যতম চলচ্চিত্র পরিচালক তানভীর মোকাম্মেল ধলেশ্বরী নদীর উপর একটি পূর্ণদৈর্ঘ চলচ্চিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। গত ২২ নভেম্বর থেকে ধলেশ্বরী নদীতে নিজস্ব লঞ্চ নিয়ে অবস্থান করে তথ্যচিত্রটি নির্মাণ করছেন। ধলেশ্বরী নদীর পাড়ের বসবাসরত বিভিন্ন মানুষের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন। ধলেশ্বরী নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির পক্ষ থেকে সংগঠনের সংগঠক মো. ইকবাল খান, মো. নজরুল ইসলাম ও সমন্বয়কারি বিমল চন্দ্র রায় দিনব্যাপী তথ্যচিত্র নির্মাণ টিমের সাথে অংশ নিয়ে নানান তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন। মানিকগঞ্জের মানুষ এবং ধলেশ্বরী পাড়ের জনগণ রিভারাইন পিপল’র সাধারণ সম্পাদক ও ধলেশ্বরী নদী তথ্যচিত্রের গবেষক শেখ রোকন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষক রাকিবুল হাসান, টিম সদস্য সন্দীপ মিস্ত্রী এবং রাসু তরফদারসহ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ প্রকাশ করেছেন এ নদীকে নিয়ে চলচিত্র নির্মাণ করার জন্য এবং নদীর প্রকৃত রূপ সবার সামনে তুলে ধরার জন্য। তারা প্রত্যাশা করছেন, এই তথ্য চিত্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে এই জনপদের ধলেশ্বরী নদীকে আবারও সচল ও প্রবহমান করবে।