সন্তানদের বয়োঃসন্ধিকালের সংকোচ ভুলে সহযোগী হই
রাজশাহী থেকে আয়শা তাবাসসুম
বয়োঃসন্ধিকাল মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। শৈশব শেষ হওয়ার আগে কিশোর-কিশোরীদের মাঝে এমন একটি শারীরিক, মানসিক ও আচরণগত পরিবর্তন দেখা যায়, যা তাদের প্রাপ্ত বয়স পর্যায়ে উপনীত করে। প্রাপ্ত বয়সে উপনীত হওয়ার এ সময়কে বয়োঃসন্ধিকাল বলে।
বিশ্ব সাস্হ্য সংস্থার মতে, ১০-১৯ বছর বয়সের মাঝামাঝি এ সময়কে কৈশোর বলে এবং এ বয়সের মধ্যে যেকোন এক পর্যায়ে বয়োঃসন্ধিকাল আসতে পারে। এটা মূলত কৈশোর যৌবনের মধ্যবর্তী পর্যায়। সাধারণত মেয়েদের ক্ষেত্রে বয়োঃসন্ধি আগে শুরু হয়। বিভিন্ন কারণে কিশোরীরা শারীরিক যে পরিবর্তন দেখা দেয় সে বিষয়গুলো তারা পরিবারের সদস্যদের থেকে লুকিয়ে রাখে। তবে এ সময় পরিবারের সদস্যদের তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত। তাদের সাথে সংকোচ ভুলে বন্ধুসুলভ আচরণ করা জরুরি।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2021/12/Ayesha-1024x583.jpg)
বয়োঃসন্ধিকালে মানসিক পরিবর্তনের ফলে কিশোর কিশোরীদের আচরণে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। বয়োঃসন্ধিকালীন এই সময় ছেলেমেয়েদের আত্মনির্ভরশীলতা ও আত্মপরিচয় গড়ে উঠতে শুরু করে। স্বাধীনচেতা মনোভাব পোষণ করে। শরীরে গঠনগত পরিবর্তন দেখা দেয় এবং শারীরিক পরিবরতনের কারণে নিজেকে নিয়ে বিব্রত থাকে। অনেওক নতুন বন্ধুদের সাথে মেশে নতুন সব কিছুর প্রতি আগ্রহ জন্মায়। গোপনীয়তা বজায় রাখতে চেষ্টা করে এবং বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের মতো আচরণ করা শুরু করে সে যে একটি আলাদা ব্যক্তিত্ব সেটা তার আচরণের মধ্যে প্রকাশ করে।
গুরুত্বপূর্র্ণ এ সময়টিতে বাংলাদেশের অধিকাংশ কিশোরীদের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া হয়না। অধিকাংশ জনগোষ্ঠী দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করার ফলে তারা তাঁদের সন্তানদের এ সময়টাকে সেভাবে মূল্যায়ন করতে পারেনা। কিশোরীরা এ সময় বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে। বয়োঃসন্ধিকালে অনেক মেয়ে বাল্যবিয়ের ফলে গর্ভধারণ, সহিংসতা ও অপুষ্টির ঝুঁকিতে থাকে। বাংলাদেশে অধিকাংশ কিশোরী বয়োঃসন্ধিকালে রুগ্ন হয়ে থাকে। তাদের অধিকাংশ জিংক, আয়োডিন, ও আয়রনের মতো পুষ্টির ঘাটতি রয়েছে।
বয়োঃসন্ধিকালে কিশোরীদের নানান সমস্যা এবং সমাধানের উপায় নিয়ে সম্প্রতি বারসিক রাজশাহীর প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি গ্রামে একটি আলোচনাসভা আয়োজন করে। সভায় স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনায় স্বাস্থ্যকর্মীরা কিশোরীদের করণীয় এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা সম্পর্কে ধারণা প্রদান করেন। একইসাথে এ সময়ে অভিভাবকদের কী ভূমিকা গ্রহণ করা উচিত সে সম্পর্কেও ধারণা প্রদান করেন। আলোচনায় কিশোরীরা ছাড়া অভিভাবকবৃন্দও অংশগ্রহণ করেন। স্বাস্থ্যকর্মী এবং বারসিক প্রতিনিধিগণ এ সময় অভিভাবকদের প্রতি আহŸান জানান তারা যেন সন্তানদের পাশে থাকেন এবং সন্তানের সহযোগী হন এ সময়ে। এছাড়া সন্তানদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে তাদের পুষ্টিকর খাবার খেতে উৎসাহিত করার পরামর্শ দেন।