গাছ দিয়ে নবজাতককে শুভেচ্ছা কিশোরী দল
নেত্রকোনা থেকে রুখসানা রুমি
নেত্রকোনায় সবুজ পৃথিবী গড়তে নবজাতক জন্ম নেওয়া বাড়িতে গিয়ে ওই নবজাতককে গাছের চারা দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে গ্রামের একদল কিশোরী। যে বাড়িতেই নবজাতক জন্ম নিচ্ছে সে বাড়িতেই তারা গাছের চারা নিয়ে হাজির হচ্ছে। নেত্রকোনা সদর উপজেলার কাইলাটি ইউনিয়নের ফসিকা গ্রামের ১৫ কিশোরী ‘অগ্রযাত্রা কিশোরী’ নামে একটি সংগঠন গঠন করেছে। কিশোরীরা সকলেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী।
ফচিকা ও আশেপাশের এলাকায় নতুন শিশু জন্ম নিলেই একটি ফলজ, একটি ঔষধি ও একটি বনজ গাছের চারা নিয়ে হাজির হয় শিশুর মায়ের কাছে। শিশুকে স্বাগত জানায় এই পৃথিবীতে। আর এমনটি দেখে খুশি হন নবজাতকের পরিবারসহ গ্রামের মানুষেরাও। শুধু গাছের চারা নিয়েই শুভেচ্ছা জানায় না তারা। গ্রামের যে কোন পরিবারে কোন নারী গর্ভবতী হলে কিশোরী সংগঠনের উদ্যোগে ঐ নারীকে পুষ্টিকর খাবার দিয়ে আসছে।
নিজেরা সংগ্রহ করে এবং বারসিক’র সহায়তায় ডিম ৪ হালি, কলা ৪ হালি, পেয়ারা, লেবু, অচাষকৃত শাক, ইত্যাদি কিনে দিচ্ছে। পাশাপাশি অভিজ্ঞ স্বাস্থ্যকর্মীর মাধ্যমে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি, নিয়মিত গর্ভবতী মায়ের ওজন মাপা, রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস পরিমাপ, নিয়মিত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বা কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্য চেকআপের পরামর্শ দিয়ে থাকে।
এছাড়াও তারা গর্ভবতী মা ও প্রসূতি মায়েদেরকে বাড়ির অনাচে কানাচে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত শাক-সবজি খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। কিশোরীদের ধারণা একটি সবুজ সুন্দর সমাজ ও দেশ গড়তে মায়ের গর্ভ থেকেই শিশুর যত্ন নেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। কিশোরী সংগঠনের উদ্যোগী সদস্য প্রীতি আক্তার ও লাবণী আক্তার জানায়, এসব নবজাতক সন্তানদের বড় হবার জন্য প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবারের। যে পুষ্টি নানাজাতের সবজিসহ বিভিন্ন ফলমূল থেকে আসে। এছাড়াও এসব নবজাতক সন্তানের বড় হলে তাদের ভরণপোষণ, শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন হবে। আমাদের সংগঠনের উদ্যোগে প্রসূতি মায়েদের জন্য দেওয়া এসব গাছ একদিন তাদের সম্পদ হয়ে উঠবে। উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে তিনটি সেলাই মেশিন পেয়েছে এই কিশোরী সংগঠন। তাদের এই মেশিনের সাহায্যে শিশুদের জামা বিনা পয়সায় সেলাই করে দেন।
পরিবেশ রক্ষায় গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে রোপণ করেছে ২৯৯টি সাজনা ও নিম গাছের চারা। গ্রামের সকলকে গাছের চারা রোপণের জন্য প্রচার চালিয়ে সচেতনতা তৈরি করে যাচ্ছে গত তিন বছর ধরে উদ্যোগী কিশোরী সংগঠনটি।
সংগঠনটি কিশোরী তথ্য কেন্দ্রে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও অভিজ্ঞ যুব সদস্যদের সহযোগিতায় গ্রামের গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে চলেছে। স্বাস্থ্য সেবার মধ্যে রক্তচাপ ও ওজন পরিমাপা, ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা এবং জরুরি প্রয়োজনে ভ্যানে করে রোগীকে সদর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে চলেছে। গর্ভবতী একজন মূমূর্ষু মাকে সংগঠনের কিশোরী সদস্য সুমা আক্তার নিজে রক্ত দিয়ে সহযোগিতা করেছেন এবং রোগীর সেবায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। এছাড়াও সংগঠনটি করোনাকালীন সংকটে গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিদের নিয়মিত ওজন পরিমাপ, রক্তচাপ পরিমাপ, ডায়াবেটিস পরীক্ষা এবং স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক পরামর্শ দিয়েছে সহযোগিতা করেছে।
দুর্যোগে সংকটে ফচিকা গ্রামের অগ্রযাত্রা কিশোরী সংগঠনের এহেন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। সংগঠনের সদস্যরা ছোট হলেও তাদের গৃহীত উদ্যোগগুলোকে ছোট করে দেখা বা অবহেলা করার কোন উপায় নেই। কারণ তারা করোনাকালীন সংকটে বন্যা, শিলাবৃষ্টি, বজ্রপাতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সহায়তার হাত নিয়ে। তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী অসহায়দের প্রতি ছোট ছোট সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আসুন আমরা এই সাহসী কিশোরীদের স্যালুট জানাই।