‘মাটি বাঁচলে আমরা বাঁচবো’
রাজশাহী থেকে ব্রজেন্দ্র নাথ
রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নকে সবজি চাষের প্রাণ কেন্দ্র বলা হয় । এই এলাকার অধিকাংশ কৃষক সবজি চাষী। আর এই বড়গাছি ইউনিয়নের প্রায় ১৫০জন সবজি চাষী ও ১০জন পান চাষী ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করেছেন। ভার্মি কম্পোস্টের ব্যবহার ও গুণাবলী সর্ম্পকে অনেক কৃষক বারসিক’র অনেক কর্মসূচি ও প্রশিক্ষণ কর্মশালা ও সরকারি বেসরকারি সেবাদান কারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন ।
সবজি চাষীদের মধ্যে কারিগর পাড়ার কৃষক মো: মাসুদ আলীর (৪৫) কাছে তার ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যববহার সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি প্রায় ১৫বছর ধরে এই সবজি চাষ করে আসছি। তবে আজ থেকে ১০বছর আগে সবজি চাষে যে খরচ হতো এখন তার চেয়ে দিগুণ অর্থ খরচ হয়। কারণ মাটিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করে মাটির অবস্থা এতোই খারাপ হয়েছে যে মাটি আর শক্তিতে কুলাতে পারছেনা। আর যে মাটিতে শক্তি থাকে না সে মাটিতে ফসল চাষ করলে ফসলের রোগবালাই অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আমি ২০২১ সাল থেকে সবজি চাষে ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে আসছি ।
তিনি জানান, তিনি ভার্মি কম্পোস্ট সার গ্রাামের কৃষাণী মোসা : বিলকিস বেগমের কাছ থেকে ৪০০ টাকা মণ হিসেবে সংগ্রহ করেছেন। বিলকিস বেগম ২০১৬ সাল থেকে এই ২টি চাড়ি দিয়ে কেঁচোর মাধ্যমে ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরী শুরু করেছিলেন। এখন তার ২০০টি চাড়িতে ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি করছেন। শুরুতে আমরা তাকে অনেক কিছুই বলেছি। কিন্তু তার ভার্মি কম্পোস্ট সার নিজ জেলাসহ বাইরের জেলার অনেক কৃষক তার কাছ থেকে এই সার নিয়ে যাচ্ছেন। এই সার বিক্রি করেই বিলকিস বেগম এক লাখ টাকার ঋণ শোধ করেছেন এবং ১০ কাঠা জমি কোট বন্ধক থেকে ছাড়িয়েছেন । তার এই ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরী দেখে বড়গাছি ইউনিয়নে প্রায় ৩০-৩৫জন কৃষাণী ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি করেন।
অন্যদিকে মাধবপুর গ্রামের কৃষক মো: ইসহাক আলী (৫৫) ১০ কাঠা জমিতে লাউ চাষ করেছেন জৈব সার ও জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করে। তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে আসছি রাসায়নিক সারের মাধ্যমে। কিন্তু গত তিন বছর ধরে প্রথম বছর ১ কাঠা পটলের জমিতে এবং দ্বিতীয় বছর মরিচের জমিতে এবং এই বছর ১০ কাঠা লাউয়ের জমিতে ৩ মণ ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করেছি । ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহারের মাধ্যমে একটা জিনিস লক্ষ্য করেছি যে ফুল আসার পর ফুল ঝরে পড়া এবং ফলে পচন ধরা রোগ একেবারে নেই বললেই চলে। গাছের পাতার রং ভালো আছে। তাই আমি বলবো ভার্মি কম্পোস্ট সার শুধু মাটির উর্বরতা তৈরী করে না তার সাথে সাথে ফসলের গাছের ও ফুল ফলের অবস্থানের দিকেও বেশ ভূমিকা রাখে। আসুন আমরা সবাই ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহারে অগ্রসর হই, মাটিকে বাঁচাই তাহলে আমরা সকলে বাঁচবো।’