যুবকরা গ্রাম ও সমাজের উন্নয়নে কাজ করছে এটি ভাবতেই ভালো লাগছে

নেত্রকোনা থেকে রুখসানা রুমী

আধুনিকতার ছোঁয়ায় বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্যতা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে মানুষ তাদের পুরনো ঐতিহ্যগুলোকে প্রায় ভুলতে বসেছে। যুব সমাজ আসক্ত হয়ে পড়ছে পরসংস্কৃতি ও মরণ নেশা মাদকে। সমাজের মানুষের মধ্যে নৈতিক অবক্ষয়, যৌতুক, বাল্যবিবাহ ও ইভটিজিং মহামারীর আকার ধারণ করেছে। পারস্পারিক সহযোগিতা, বিশ্বাস ও মূল্যবোধের অবক্ষয় সমাজকে প্রতিনিয়ত কলুষিত করে তুলছে। এ থেকে সমাজকে রক্ষায় পারস্পারিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসতে হবে সকল বয়স, শ্রেণী ও পেশার মানুষকে।

এই মন্ত্রকে পুঁজি করেই নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলা বলাইশিমূল ইউনিয়নের পাড়াদূর্গাপুর গ্রামের ‘প্রকৃতি ও জীবন’ যুব সংগঠন বেশ কয়েক বছর ধরে সমাজ ও এলাকার উন্নয়নে বিভিন্ন ধরণের ছোট ছোট উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছে। সংগঠনের সদস্যরা এলাকার সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে প্রতিমাসে সংগঠনের উদ্যোগে কাজগুলো করে আসছেন। সংগঠনটি এলাকার যুবকদের মাদকসহ বিভিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপ থেকে দূরে রাখার জন্য প্রতিদিন বিকেলে ফুটবল খেলার আয়োজন করে। এ ধরণের উদ্যোগ শুধুমাত্র যুবকদের জন্য নয়; মেয়েদের জন্যও সংগঠনটি মাঝে মাঝে ফুটবল খেলার আয়োজন করে। এতে যুবকদের পাশাপাশি এলাকার মানুষও বিনোদনের সুযোগ পাচ্ছে।

IMG_20180820_132848-W600

পাড়াদূর্গাপুর গ্রামে দেশীয় নিম গাছ একেবারেই ছিল না। ফলের গাছের সংখ্যাও একেবারেই কম। তাই যুব সংগঠনটি গ্রামটিকে নিম গ্রাম হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করে। স্বাস্থ্যসম্মত সুন্দর গ্রামীণ পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে সংগঠনের উদ্যোগে গ্রামের প্রায় ২ কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশে নিম ও বৈচিত্র্যময় ফলের চারা রোপণ করা হয়েছে। সংগঠনের সদস্যরা রাস্তার গাছগুলো নিয়মিত তদারকী করে।

কোরবানীর ঈদের আনন্দ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সাথে সহভাগিতার লক্ষ্যে সংগঠনটি এলাকার দরিদ্র অসহায় প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। সংগঠনের প্রত্যেক সদস্য ১০০ টাকা করে চাঁদা দিয়ে এলাকার ৩০জন দরিদ্র অসহায় প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীকে একটি সেমাইয় প্যাকেট, এক কেজি চিনি, একটি সাবান ও একটি তোয়ালে সহযোগিতা দিয়েছে। তরুণদের এই উদ্যোগে অভিভূত হয়ে সহায়তাপ্রাপ্ত প্রবীণ মো. জায়েদ মিয়া তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ‘তোমাদের মত ছেলে মেয়ে যেন প্রত্যেক ঘরে ঘরে জন্মায়। তোমরাও বেকার ও গরীব, কোন চাকরী- বাকরী কর না, তবু তোমরা আমাদের পাশে আছ। মন থেকে দোয়া করি তোমরা যেন মানুষের মত মানুষ হও।’

শিক্ষিকা পারভীন আক্তার বলেন, ‘যুব সংগঠনের এ ধরণের কাজগুলো সত্যি খুবই প্রশাংসনীয়, গ্রামের যুবকরা গ্রামের ও সমাজের উন্নয়নে কাজ করছে এটি ভাবতেই ভালো লাগছে। তিনি ‘প্রকৃতি ও জীবন যুব সংগঠন’র সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমরা তোমদের পাশে আছি বৃদ্ধি পরামর্শ ও আর্থিক সহযোগিতা লাগলে আমাদের স্কুল কমিটি থেকেই সহযোগিতা করব।’

দেশের বর্তমান যুব সমাজকে সৃজনশীল কার্যক্রমের সাথে খুব একটা দেখা যায় না বললেই চলে। আগে গ্রামে-গঞ্জের সকল যুবকদেরকে বিকেলে মাঠে খেলাধুলা করতে নিয়মিত দেখা যেত। বর্তমানে এ চিত্র গ্রামে দেখা যায় না বললেই চলে। যুব সমাজ বর্তমানে প্রযুক্তি (মোবাইল গেম, ফেসবুক) ও বিভিন্ন ধরণের মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে। যেখানে দেশের প্রায় সকল এলাকার যুবকরা প্রযুক্তি ও মাদকে আসক্ত হয়ে অনৈতিক কাজে যুক্ত সেখানে পাড়াদূর্গাপুর গ্রামের যুবদের মহতি উদ্যোগে আমরা নতুন ও সন্দর সমাজের স্বপ্ন দেখায়। পাড়াদূর্গাপুর গ্রামের ‘প্রকৃতি ও জীবন যুব সংগঠন’র ন্যায় প্রতিটি এলাকায় যুব সমাজ সংগঠিত হয়ে এলাকার সার্বিক উন্নয়নে কাজ করলে একদিন সত্যি সত্যি সকল এলাকা বহু প্রাণের বসবাসের উত্তম ভূমিতে পরিণত হবে। আমরা সে দিনটির প্রতীক্ষায় আছি।

happy wheels 2

Comments