সাম্প্রতিক পোস্ট

জানকী হাজং এর স্বপ্ন পূরণের গল্প

কলমাকান্দান নেত্রকোনা থেকে আল্পনা নাফাক
কলমাকান্দা উপজেলার খারনৈ ইউনিয়নের দমদমা গ্রামে বাস করেন জানকী হাজং। বয়স ৪৫ বছর । পেশায় তিনি একজন গৃহিনী ও দর্জি। তিনি দুই সন্তানের জননী। এক ছেলে আর একজন মেয়ে। স্বামী একজন সাধারণ কৃষক। মেয়েকে এইচএসসি পাশ করার পর বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। আর ছেলে লেখাপড়া বাদ দিয়ে এখন তিনি বাবার কাজে সহযোগিতা করছেন।


জানকি হাজং ২০১১ সালে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সেলাই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণটি তিনি ভালোভাবেই আয়ত্ব করেছিলেন কিন্তু সেলাই মেশিন না থাকার কারণে তিনি কাজ চালিয়ে যেতে পারছিলেন না। তিনি কেচি না থাকায় বটি ও দা দিয়ে কাপড় কেটে হাতে সেলাই করতেন। এভাবে তিনি প্রতিবেশীদেরও হাতে পোশাক সেলাই করে দিতেন।


জানকী হাজং এর উৎসাহ ও প্রতিভা দেখে ২০১২ সালে বারসিক এর পক্ষ থেকে একটি সেলাই মেশিন সহযোগিতা করা হয়। সেলাই মেশিন পেয়ে তিনি অনেক খুশি। সেলাই মেশিন পাওয়ার পর তিনি নতুন করে সেলাই কাজ শুরু করেন। জানকী হাজং এর নিজস্ব বসতভিটা না থাকায় অন্যের জায়গায় ঘর করে থাকতেন। তবে তিনি স্বপ্ন দেখতেন তিনিও একদিন কাজ করে নিজে জমি কিনে ঘর করবেন্।


জানকি হাজং বলেন, ‘আমি নারীদের সব ধরণের পোশাক তৈরি করতে পারি। কিন্তু সেলাই মেশিন ও কেচি না থাকার কারণে এতদিন কাজ করতে পারিনি। এখন আর কোন সমস্যা হয় না। একটা পোশাক তৈরি করতে আমি বাজারের চেয়েও কম মজুরি নিয়ে থাকি। যার কারণে এখানকার আশপাশের নারীরা আমার কাছেই পোশাক তৈরি করতে আসেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ গ্রামে বাঙালি ও হাজং জাতিগোষ্ঠীর বাস। এ কারণে ঈদ ও পূজার সময় বেশি কাজের চাপ থাকে। আর একটি সুবিধা হলো এ গ্রাম থেকে বাজারের দূরত্ব। ফলে কাপড় নিয়ে এখানকার স্থানীয় নারীরা আমার কাছে আসেন। আমি সে কাপড় চাহিদা মাফিক তৈরি করে দিয়ে থাকি।’


যারা কাপড় তৈরি করতে আসেন তারা অনেকেই জানকী হাজংকে দোকানে কাপড় রেখে বিক্রি করার জন্য পরামর্শ দেন। কিন্তু অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে তিনি তা করতে পারছেন না। তবে আস্তে আস্তে কাপড় রেখে পুঁজি খাটিয়ে ব্যবসা করার একটা পরিকল্পনা আছে বলে জানান তিনি। শুধু সেলাই করেই তিনি প্রতি মাসে ৬-৮ হাজার টাকা উপার্জন করেন। যে টাকা থেকে তিনি কিছু টাকা সঞ্চয় করেন এবং পারিবারিক কাজে ব্যয় করেন।
জানকী হাজং এর প্রতিবেশী ও কাস্টমার আমেনা খাতুন বলেন, ‘আমরা সব সময় জানকী দিদির কাছে পোশাক তৈরী করি। কারণ একদিকে বাজার অনেক দূরে আর তিনি বাজারের চেয়ে কম মজুরি নেন। ছোট বড় সবার পোশাক তার কাছেই তৈরি করি। তার এক কাজ করার ফলে আমাদের এখন আর বাজারে যেতে হয় না। আর তার কাজের মানও অনেক ভালো।’


জানকী হাজং বলেন, ‘কাস্টমারগণ এখন মোবাইলে ডিজাইন নিয়ে আসেন এবং সেভাবেই তৈরি করতে বলেন। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করি সেভাবে করার জন্য। তবে যারা এভাবে মোবাইলে ডিজাইন এনে তৈরি করতে বলেছিল সবাই আমার কাজে খুশি হয়েছেন। বারসিক আমাকে যদি সেলাই মেশিন দিয়ে সহযোগিতা না করতেন তবে আমি আমার স্বপ্ন সত্যি করতে পারতাম না। কারণ দীর্ঘ এই ১০/১১ বছর সেলাই কাজ করে এখন আমি নিজে জমি কিনে সেখানে ঘর তৈরী করতে পেরেছি তাই আমি বারসিক এর কাছে চির কৃতজ্ঞ।’


পরিশ্রম সৌভাগ্যে প্রসূতি এ কথাটির বাস্তব উদাহারণ এই জানকী হাজং। তিনি একাধানে ১০/১১ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে এখন তিনি নিজের কেনা জমিতে ঘর তৈরি করে থাকতে পারছেন। এ গল্পের মত হাজারো সম্ভাবনাময় জানকী আমাদের আশাপাশে আছে কিন্তু পরিশ্রম ও সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে তার উঠে আসতে পারছেন না। তার এই গল্প সবার অনুপ্রেরণা ও উদ্দীপনা হয়ে কাজ করবে।

happy wheels 2

Comments